নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে এক ধরনের হাইপ (জোয়ার) উঠে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘উন্নয়ন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনের খসড়া রূপরেখা চূড়ান্তকরণ’ শীর্ষক কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

কর্মশালায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ সচিব, অতিরিক্ত সচিব, বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, মহাপরিচালক, নির্বাহী পরিচালক, যুগ্ম প্রধান, উপ-প্রধান, উপ-সচিব পর্যায়ের মোট ৫৮ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।

তাদের উদ্দেশে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ আশা করে আপনাদের কাছ থেকে ভালো আউটপুট। মানুষ মনে করে যে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় একটা টেকনিক্যাল মন্ত্রণালয়। এখানে সব অর্থনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা আছেন। তারা নিশ্চয় ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ভালো করে তৈরি করে দিয়েছে। মন্ত্রী নিয়ে তারা কনসার্ন নয়, কারণ মন্ত্রী আসে যায়। আপনারা তো স্থায়ী সিভিল সার্ভেন্টস। আপনারা ২০ বছর, ২৫ বছর কাজ করে এখানে এসেছেন। সব থেকে বড় কথা যেটা আমি বলতে চাই না, আই ফিল আনইজি। কিন্তু বলতে বাধ্য হই। যেখানেই যাই, যে আলোচনায় যাই, দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করে। আমি বিরক্ত হই। দুর্নীতি তো কোনো প্রশ্নের বিষয় নয়। এটা একটা ক্রিমিনাল অ্যাক্ট। পকেটমার একটা ক্রিমিনাল বিষয়। এটা নিয়ে আলোচনা করা, সেমিনার করার কোনো অর্থ হয় না। পকেটমার কী, আমরা বুঝি-জানি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আমি টেলিভিশনে বেশ প্রো-অ্যাক্টিভ। গতরাতেও আমি একজায়গা আলোচনায় ছিলাম। লন্ডন থেকে পরিচালিত একটি বাংলা চ্যানেলে। ওখানে দেখা যায়, ঘুরেফিরে দুর্নীতি নিয়েই আলোচনা। দুর্নীতিতে তাদের আগ্রহ বেশি এবং এটা নিয়ে প্রশ্ন করেন সঞ্চালক। আমি বললাম যে, দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার কিছু নাই, গবেষণা করারও কিছু নাই। দুর্নীতি হচ্ছে, অবশ্যই হচ্ছে। এটার ব্যবস্থাও আমাদের কাছে আছে। দুর্নীতি হলে কী করতে হবে, সেই বিধান তো আমাদের বইপত্রে আছে। আমরা এর বাইরে কিছু করতে পারবো না। যদি এটা কম হয়, তাহলে সরকারকে প্রশ্ন করেন তাহলে সরকার এটা বাড়াবে।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘যেহেতু আলোচিত হচ্ছে জিনিসটা সেজন্য আপনাদের নজরে আনলাম যে, এটা নিয়ে কিন্তু প্রচুর আলোচনা আছে। আমার ধারণা, এটা এক ধরনের হাইপ, এই ধরনের একটা ভাব। কিন্তু বাস্তবে স্বীকার করতে হবে জনগণের মধ্যে যেটা আছে, নিশ্চয় এর ভিত্তি একটা আছে। নাহলে এত আলোচনা কেন হচ্ছে? এ সমন্ধে আমাদের হওয়া প্রয়োজন।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন তিনি জানান, ‘তারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয় সম্পর্কে যখন প্রশ্ন করে তখন বলি, আমি তো বাস্তবায়ন করি না। তখন হাসে। আরে মান্নান সাহেব, আপনি কী জানেন, ডিপিপি তো আপনি বানায়া দেন। এইরকম মন্তব্য কেউ কেউ করেন। আমি বললাম উনারা তৈরি করে পাঠান। ডিপিপি এক্সপার্টদের কোম্পানি আছে, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা তাতে সহযোগিতা করেন। যাইহোক, এখানে একটা আলো-আঁধারি বিষয় আছে। আমাদের আরও যত্নবান হওয়া দরকার। যতটুকু সম্ভব, সচেতন থেকে এটাকে এড়িয়ে চলা।’
‘দুর্নীতিতে টিমওয়ার্ক মাঝে মাঝে হয় আমার ধারণা, কিন্তু সাধারণত ইন্ডিভিজুয়াল অ্যাক্ট। যদিও পকেটমার কিন্তু টিমওয়ার্ক। একজন নেয়, আরেকজনকে দিয়ে দেয়, সে আরেকজনকে দেয়– শুনেছিলাম। দুর্নীতিতে এরকম আছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুর্নীতি ইন্ডিভিজুয়াল (আলাদা) হয় বলে আমার ধারণা’, যোগ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রীর বিশ্বাস, তিনি দুর্নীতিবাজ কারও সঙ্গে কাজ করেন না। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা ব্যক্তিকে আমি নিজে সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত মনে করি সে দুর্নীতি করে নাই।’