নিজস্ব প্রতিবেদক : ৯ বছরেও জানা গেল না সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে। গোয়েন্দা পুলিশ ব্যর্থ হওয়ার পর এলিট ফোর্স র্যাব দায়িত্ব নিয়েও তদন্তে একচুল এগুতে পারেনি। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনই দাখিলের জন্য এ পর্যন্ত সময় পিছিয়েছে ৭৮ বার।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরের দিন ভোরে তাঁদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় রুনির ভাই বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। মামলার পর রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট ৮ জনকে আটক করা হয়।
বাকিরা হলেন— রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর, আবু সাঈদ ও বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির। এর মধ্যে পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান জামিনে রয়েছেন।
সাগর-রুনি হত্যার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সে সময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্তে ‘প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি’ আছে বলে তৎকালীন পুলিশপ্রধান মন্তব্য করেছিলেন।
মামলার প্রথম তদন্ত শুরু করেন শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জহুরুল ইসলাম। ৪ দিনের মাথায় মামলা হাতবদল হয় ডিবি পুলিশের কাছে। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। এরপর হাইকোর্ট বিভাগের এক রিট পিটিশনে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলার তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরের দিন ১৯ এপ্রিল র্যাব সদর দপ্তরের সিনিয়র পুলিশ সুপার মো. জাফর উল্লাহ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন।
দায়িত্ব নিয়েই সাগর ও রুনির মরদেহ কবর থেকে তুলে এনে আবারও ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা পরীক্ষা করে র্যাব। বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও তদন্ত আর এগোয়নি। সেই র্যাব নতুন করে আর কিছুই জানাতে পারছে না।
র্যাব কর্মকর্তা মো. জাফর উল্লাহ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ায় ২০১৪ সালের ১২ মার্চ এ মামলার তদন্তভার পান র্যাব সদর দপ্তরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. ওয়ারেছ আলী মিয়া। মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাগর-রুনির ছেলে মাহির সরোয়ার মেঘকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন তিনি।
২০১৫ সালের মাঝামাঝি র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহম্মদ এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। তিনি মামলার নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ২০১৮ সালের র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সহিদার রহমানের হাত ঘুরে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম। তিনি আগের সাক্ষীদের পর্যালোচনা করে তদন্ত অব্যাহত রেখেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা পরিকল্পিতভাবে তদন্ত করছি। আশা করছি শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারব।