প্রশংসায় ভাসছেন শেখ হাসিনা

এইমাত্র জাতীয়

নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক ২৭ মার্চ

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য পাঠিয়েছে চীন

 

 

বিশেষ প্রতিবেদক : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য উপহার পাঠিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। সোমবার গণভবনে এই উপহার হস্তান্তর করা হয়েছে।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য হস্তান্তর করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই ভাস্কর্য হস্তান্তর করা হয়।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তিনি ঢাকায় আসতে না পারলেও ভিডিওবার্তা পাঠাবেন।
জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৭ মার্চ ঢাকায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব ইস্যুতে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। সোমবার সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যেগুলো আলোচনা হবে সেগুলো মোটামুটি ঠিক হয়েছে। ওইগুলো যাতে বলবৎ থাকে, প্রয়োগে যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য হয়ত প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরতে পারেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, মোদির সফরে ভারতের সঙ্গে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া তিস্তা চুক্তি নিয়েও বাংলাদেশ আশাবাদী বলে জানান তিনি। মন্ত্রী আরও বলেন, ভারতের সাথে আমাদের প্রত্যেকদিন আলোচনা চলছে। পানি নিয়ে ইস্যু এবং আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটা কমার্স মানে বাণিজ্য। আমাদের সচিব পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের বড় ইস্যু ইচ্ছে বর্ডার কিলিং, সেটা আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সচিবদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ক্রিটিকাল সব বিষয় আমরা আলোচনা করেছি।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৬ ও ২৭ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন। সফরকালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। এছাড়া সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বাংলাদেশ সফরকালে তিনি সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জ জেলায়ও যাবেন।
এদিকে, বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকা-ের গতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজ’র চতুর্থ পর্বে কি-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় এই প্রশংসা করেন তিনি।
গতকাল সকালে রাজধানী ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘বঙ্গবন্ধু: দ্য সোল অব বাংলাদেশ’ বিষয়ক লেকচার সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে সেখান থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনও অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে বান কি মুন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মহান নেতা ছিলেন। বাংলাদেশের জনক হিসেবে সমৃদ্ধ দেশ গড়তে তিনি আজীবন কাজ করে গেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সে অনুযায়ী কাজ করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানবাধিকার রক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) চিন্তাভাবনা ছিল সেই সময়কার তুলনায় অনেক এগিয়ে।’
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়ও বাংলাদেশের প্রশংসা করেন বান কি মুন। তার মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
এরআগে, বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর বোঝা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী চলমান ভয়াবহ মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ যেভাবে প্রবৃদ্ধি অজর্ন নিশ্চিত করেছে, এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব থেকে বর্তমান বিশ্বের অনেক নেতারই শিক্ষনীয় রয়েছে।
কমনওয়েলথের মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড বাংলাদেশের বিগত এক দশকের অসামান্য অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের এই অসামান্য অর্জনের পুরো কৃতিত্বই তার একার।
লন্ডনে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাই কমিশন ও কমনওয়েথ সচিবালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা সভার পর বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে কমনওয়েলথ মহাসচিব এ কথা বলেন।
কমনওয়েলথের শীর্ষ এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মিয়ানমারে নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা তাদের জন্মভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর বোঝা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী চলমান ভয়াবহ মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ যেভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন নিশ্চিত করেছে, এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব থেকে বর্তমান বিশ্বের অনেক নেতারই শিক্ষনীয় রয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক ঝুঁকিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব থেকে আমরা এই নির্দেশনাই পাই যে, মানবতার বিনিময়ে উন্নয়ন অর্থহীন আর এই ধরনের দিকনির্দেশনাই প্রকৃত নেতৃত্বের মূল চাবিকাঠি হওয়া উচিৎ।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করতে গিয়ে কমনওয়েলথের এই শীর্ষ নির্বাহী রোহিঙ্গা সংকট, সকলের মাঝে সমানভাবে কোভিড-১৯ সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ভয়াবহ মহামারির ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে বিরূপ প্রভাবে পড়েছে, তা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা মহামারির মধ্যেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সফলভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে উন্নীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, শুধুমাত্র গত দশকেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১৮৮% বেড়েছে। গড়ে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল বছরে ৬-৭%। দেশটির তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শতভাগ আইসিটি পৌঁছে দেওয়াই এই অর্থনৈতিক অর্জনের অন্যতম প্রধান কারণ।
কমনওয়েলথ মহাসচিব জানান যে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য কন্যা ও তার নেতৃত্বের উপযুক্ত উত্তরসূরী। তিনি বলেন, “আমি মনে করি বাংলাদেশের সাফল্যের বীজ শেখ হাসিনা তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তিনি একটি স্বাধীন ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন।”
স্কটল্যান্ড বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু ধ্বংসস্তুপ থেকে একটি নতুন জাতি গঠনে অনেক কঠিন পরিস্থিতি ও বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “২০০২ সালে বিবিসি আয়োজিত সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জরিপে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সর্বাধিক ভোট পড়াটা কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়।” তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার আমলেই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ কমনওয়েলথভুক্ত হয়।
অপরদিকে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান। দু দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন আঙ্কারার প্রেসিডেন্ট ভবনে দেখা করতে গেলে এর্দোয়ান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তুরস্ক সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। এ সময় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন তিনি। এছাড়া তুরস্কের অর্থায়নে একটি উন্নতমানের হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জমি দিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানান।
বিভিন্ন সংবাদপত্রের সুত্রমতে, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। চীন ও তুরস্কের রাষ্ট্রদূত এবং ভারতের হাইকমিশনার তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে গত এক দশকের অর্জনকে অনন্য ও অতুলনীয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ১২ বছরের সময় সরকারপ্রধান হিসেবে পদ্মা সেতু, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়নের মতো বিষয়ে সরকারের অগ্রগতি ও উন্নয়ন হয়েছে। তিনি মহামারির কঠিন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা যে নেতৃত্ব দেখিয়েছেন, তা উল্লেখ করেন। এছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কটের মতো মানবিক ইস্যুতে শেখ হাসিনা কীভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং এ প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংযুক্ত করেছেন, সে বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার গত এক দশকে বাংলাদেশের পক্ষে যা অর্জন করেছে তা পুরোই ‘ব্যতিক্রমী’। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে এখনো দু’দেশের সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতার বড় সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার যে উন্নয়ন অর্জন করেছেন তা যেকোনো তুলনায় অনন্য। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি অপরিবর্তিত এবং দুই দেশের সম্পর্কের শিকড় যে কোনও কৌশলগত অংশীদারিত্বকে ছাড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশের অগ্রগতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্বীকৃত। জাতি হিসেবে টেকসই উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান বাঘ।


বিজ্ঞাপন