আবারও আইসিইউ সংকট

এইমাত্র জীবন-যাপন স্বাস্থ্য

দেশে আরো বাড়ল করোনায় মৃত্যু, শনাক্ত ১৭৭৩

 

বিশেষ প্রতিবেদক : সংক্রমণে ১৫ ভাগ পর্যন্ত বেড়েছে রোগী। আইসিইউতে খালি নেই শয্যা। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে করোনা সংক্রমণ। হাসপাতালগুলোতে ১৫ ভাগ পর্যন্ত বেড়েছে রোগী। আইসিইউতে খালি নেই শয্যা। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি জমায়েত পরিহার করার তাগিদ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশে করোনার সংক্রমণ নেমে আসে ২ দশমিক দুই ছয় শতাংশে যা ছিল এক বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। এর ২৪ দিন পর অর্থাৎ ৯ মার্চ বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করে পৌঁছে যায় ৫ দশমিক এক তিন শতাংশে। এর দুদিন পর ৬ শতাংশ পার হয়ে সর্বশেষ রোববার ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
এর প্রভাব স্পষ্ট রাজধানীর কোভিড হাসপাতালগুলোতেও। ফেব্রুয়ারির পর থেকে কোভিড রোগী ১০-১৫ শতাংশ বেড়েছে। সাধারণ শয্যা ফাঁকা থাকলেও পূর্ণ কেবিন। খালি নেই একটি আইসিইউ শয্যাও।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুল হক বলেন, এক সপ্তাহ বা দশ দিনের কথা বললে আমরা ক্রিটিক্যাল রোগী পেয়েছি। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় খারাপ রোগীগুলো আমরা পাচ্ছি।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরও। হাসপাতালগুলোকে নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানালেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রোগ নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে যে ধরণের শিষ্টাচার ছিল; সেটা গত কয়েক মাসে মানুষ ভুলে গিয়ে এক ধরণের উৎসবে মেতেছিল। এর প্রভাবটা এখন দেখতে পাচ্ছি।
এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ লাখ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। টিকা নেয়ার পরেও অনেকে সংক্রমিত হওয়ায় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার জোর তাগিদ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এদিকে মহামারি করোনা ভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ২৬ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ হাজার ৫৭১ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৭৩ জনের শরীরে। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্ত দাঁড়াল ৫ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৮ জন।
করোনাভাইরাস নিয়ে সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ১ হাজার ৪৩২ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ১৩ হাজার ১২৭ জন।
রোববার দেশে আরও ১ হাজার ১৫৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান ১৮ জন।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, সোমবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১২ কোটি ৪০ লাখ ৭ হাজার ৬২০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৬৩ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯ কোটি ৬৯ লাখ ৫৬ হাজার ৩২৬ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৮১ হাজার ৬৫৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ২৩৪ জনের।
আক্রান্তে ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭০ জন এবং মারা গেছেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৭ জন।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৫৮ হাজার ৭৬২ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ৬০৮ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ৯২ হাজার ৯০ জন।
আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসাবে যুক্তরাজ্য রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৩৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ২৫ হাজার ৫১৬ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় ফ্রান্স ষষ্ঠ, স্পেন সপ্তম, ইতালি অষ্টম, তুরস্ক নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।


বিজ্ঞাপন