অধিক ঝুঁকি বাজার-গণপরিবহনে

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

করোনায় দেশে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড
ভারতে দৈনিক সংক্রমণ প্রায় দেড় লাখ
আইসিইউ পেতে দিশেহারা রোগী-স্বজনরা
প্রবাসীরাই করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে

 

 

এমএ স্বপন : দেশে দুটি স্থান থেকে করোনায় আক্রান্ত বেশি হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে গণপরিবহন। অপরটি বাজার। আর এখন পর্যন্ত দেশে যতো করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার বড় অংশই হয় গণপরিবহন না হয় বাজারে গেছেন। গত বৃহস্পতিবার আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই কথা বলা হয়েছে।
আইইডিসিআর বলছে, করোনায় আক্রান্তদের বড় অংশই হয় গণপরিবহন ব্যবহার করেছেন, নয়তো বাজারে গেছেন।
এদিকে করোনা সংক্রমণের বিধিনিষেধ আরোপের পাঁচদিন পর গতকাল দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেয়া হয়েছে। এই দিন দোকানগুলোতে ছিল প্রচ- ভিড়। আর স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অনেকেই ছিলেন উদাসীন। এই কারণেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গণপরিবহন ও বাজারের বাইরেও সভা-সেমিনারসহ অন্য জায়গা থেকেও করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। এর মধ্যে রয়েছে, জনসমাগমস্থল, উপাসনালয়, এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে ভ্রমণ, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, পর্যটনকেন্দ্র এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের হিস্ট্রি পর্যালোচনা করে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ এসব উৎসস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে।
‘আক্রান্ত রোগীদের ৬১ শতাংশের গণপরিবহন ব্যবহার ও বাজারে যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে, ৩০ শতাংশের বেশি মানুষ উপাসনালয় ও জনসমাগমস্থলে গিয়েছে। আইইডিসিআর গত ৫ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট হাজার করোনা রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করেছে।
এবিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক তাহমিনা শিরিন বলেন, গত ৫ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ হাজার আক্রান্ত ব্যক্তির তথ্য তারা পর্যালোচনা করেছেন। এই ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
অন্যদিকে সাড়ে আট হাজার রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন ২২ শতাংশ এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়েছিলেন ২৬ শতাংশ, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ১২ শতাংশ এবং আন্তঃবিভাগ ভ্রমণ করেছিলেন ১৩ শতাংশ।
এদিকে দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন রোগীর শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুও বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১০ দিন ধরে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর তথ্য দিচ্ছে। গত ১০ দিনে ৫৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫ দিন ধরে মৃত্যু ৬০’র ওপরে।
মহামারি করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৭৭ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৬৬১ জনে। এর আগে গত ৮ এপ্রিল দেশে করোনায় সর্বোচ্চ ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৩৪৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জনে। এর আগে গত ৭ এপ্রিল দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়।
করোনাভাইরাস নিয়ে শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৮৩৭ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন।
এর আগে শুক্রবার দেশে ৭ হাজার ৪৬২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এ ছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান আরও ৬৩ জন।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, শনিবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ কোটি ৫২ লাখ ৯৫ হাজার ৬২২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৫৫৯ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার ৯১৭ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ১৮ লাখ ২ হাজার ৭৭২ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৮৪০ জনের।
আক্রান্তে ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪১৪ জন এবং মারা গেছেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৪ জন।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৩২ লাখ ২ হাজার ৭৮৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৭ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে ফ্রান্স রয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ৫০১ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ৯৮ হাজার ৩৯৫ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে রাশিয়া রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪৬ লাখ ২৩ হাজার ৯৮৪ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ দুই হাজার ২৪৭ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় যুক্তরাজ্য ষষ্ঠ, তুরস্ক সপ্তম, ইতালি অষ্টম, স্পেন নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।
ভারতে দৈনিক সংক্রমণ প্রায় দেড় লাখ : ভারতে দৈনিক সংক্রমণ একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দৈনিক সংক্রমণ আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। শনিবার সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া হিসেব অনুযায়ী, নতুন করে একদিনেই আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮৪ জন।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার ৯২৬। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনা সংক্রমণে ৭৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত ভারতে করোনায় প্রাণ হারিয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৬।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৬৭ হাজার ২৩। ফলে বর্তমানে সেখানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৬৩১, যা অন্যান্য সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ১৭ হাজার। তারপর থেকে গত কয়েক মাসে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমতে দেখা যায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তা দেড় লাখের নিচে নেমেছিল।
টানা চারদিন ধরেই ভারতে দৈনিক সংক্রমণ এক লাখের বেশি। প্রতিদিনই আশঙ্কাজনকহারে সংক্রমণ লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত পাঁচদিনেই ৬ লাখ ১৬ হাজারের বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে মধ্যে ৩ হাজার ৩৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত ৩১ মার্চে দৈনিক সংক্রমণ ছিল ৫৩ হাজার ৪৮০। কয়েকদিনে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। গত ৩১ মার্চের পর মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।
মহারাষ্ট্রে শনিবার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন জারি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সংক্রমণ ও মৃত্যুতে ভারতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ওই রাজ্য। সেখানে গত ২৪ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৯৩ জন।
এদিকে রাজধানী দিল্লিতে সব স্কুল, কলেজ পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে অরবিন্দ কেজরিয়ালের প্রশাসন। মধ্যপ্রদেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
আইসিইউ পেতে দিশেহারা রোগী-স্বজনরা: বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অদৃশ্য ভাইরাসটিতে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন শত শত মানুষ। মৃতের তালিকায় দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভাইরাসটির নতুন ঢেউয়ের সংক্রমণের হার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় এতো বিশাল সংখ্যক রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রাজধানীর হাসপাতালগুলোকে। রোগীর চাপে হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। মিলছে না নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ)।
রাজধানীর ১৯টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ১৭টিতেই ফাঁকা নেই আইসিইউ। হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও আইসিইউ খালি না পেয়ে রোগীর স্বজনরা। আইসিইউয়ের তীব্র সংকটের কারণে যথাসময়ে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। অনেক চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন হাসপাতালগুলোর ওপর যে হারে রোগীর চাপ বাড়ছে, তাতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা সেবা সংকটজনক হয়ে উঠছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শুক্রবারের দেয়া তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতে করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড ১০টি সরকারি হাসপাতালের নয়টিতে সর্বমোট আইসিইউ শয্যা ১৩২টি। এর মধ্যে ১২৯টিতেই রোগী ভর্তি রয়েছে। মাত্র একটি হাসপাতালে চারটি বেড ফাঁকা ছিল। তবে একটি হাসপাতালের আইসিইউ বেডের চেয়ে একজন রোগী বেশি ভর্তি ছিল।
এদিকে বেসরকারি নয়টি হাসপাতালের সাতটিতেই একটিও শয্যা ফাঁকা নেই। করোনা ডেডিকেটেড নয়টি বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৭৩টি। এর মধ্যে বেশিরভাগই রোগীতে পরিপূর্ণ।
শনিবার সকালে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় সুমি বেগম নামে এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণে সুমি বেগমকে নারাণগঞ্জ থেকে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু আইসিউ শয্যা খালি না থাকায় মুগদা হাসপাতাল থেকে সুমিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যান রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসাপাতালের দিকে।
তিনি আরও বলেন, শরীর অসুস্থ বেশ কয়েকদিন ধরে। জ্বর ঠান্ডা আছে। তবে হঠাৎই শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় তাকে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতলে ভর্তি করানোর চেষ্ট করি। কোনো আইসিউ না পেয়ে ঢাকায় নিয়ে আসি। এখন দেখি মুগদা হাসপাতালেও কোনো আইসিইউ খালি নাই।
মুগদা হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, আমাদের এখানে ১৯টি আইসিউ শয্যাসহ মোট ৩২৯টি বেড রয়েছে। এই মুহূর্ত রোগী ভর্তি আছে ৩৪৩ জন। আমরা সর্বাত্মক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে রোগীর চাপ ক্রমশই বাড়ছে।
মুগদা হাসপাতালে করোনা আইসিইউ বিভাগে কাজ করেন এমন একজন চিকিৎসক বলেন, এই হাসপাতালে যে পরিমাণ আইসিইউ আছে করোনার কারণে তার চাপ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রোগীর চাপ তৈরি হচ্ছে।
এই চিকিৎসক আরও বলেন, এখন যারা আসছে তাদের মধ্যে সাধারণ রোগীর সংখ্যা কম। বেশিরভাগই আইসিইউতে নেয়ার মতো রোগী। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে আইসিইউ-তে থাকার মতো যে পরিমাণ রোগী আসছেন সেটা সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। আর এই পরিমাণ আইসিইউ শয্যা ব্যবস্থা করাও সাধারণ কথা নয়।
করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভোগান্তির প্রসঙ্গে এই চিকিৎসক বলেন, আমরা যারা করোনা আক্রান্ত হইনি তারা এই ব্যথাটা বুঝবো না। একজন রোগীকে ভর্তি করাতে স্বজনরা হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে পায়ে পর্যন্ত পরে যাচ্ছেন। একজন চিকিৎসক কখনো বেড খালি রেখে রোগী ফিরিয়ে দেন না।
হাসাপাতাল সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকে বেশ কয়েকজন রোগী মুগদা জেনারেল হাসপাতলে আসে আইসিইউ বেডের খোঁজ করতে আসেন। শয্যা সংকটের কারণে কুর্মিটোলা ও কুয়েত মৈত্রি ও ঢাকা মেডিকেলের কলেজ হাসাপাতালে রোগী নিয়ে ছুটে যান স্বজনরা।
শুধু মুদগা হাসপাতাল নয়, করোনা চিকিৎসার জন্য রাজধানীর প্রতিটি ডেডিকেটেড হাসপাতালেই আইসিইউয়ের এমন সংকট চলছে। প্রতিটি হাসপাতালেই আইসিইউ পেতে বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিয়েও স্বজনরা আইসিইউ পাচ্ছেন না।
প্রবাসীরাই করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে : দেশে প্রবাসীদের মাধ্যমে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়েছে। কারণ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা যাত্রীদের সঠিকভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পারেনি। ফলে বর্তমানে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের চেয়ে করোনার নতুন এই ধরণ ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়ায়। যার ফলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তাই নতুন এই ভাইরাসটি যাতে দেশে না ঢোকে বিভিন্ন দেশ সেই চেষ্টাই করছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর কোনো তৎপরতা ছিল না। একারণে বিদেশফেরত যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে কোয়ারেন্টাইনে না থেকে বাসায় গেছেন। আর তারা বাসায়ও কোয়ারেন্টিনে না থেকে ঘুরে বেড়িয়েছেন। যার খেসারত এখন সবাইকে দিতে হচ্ছে।
এবিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ভাইরাস মানুষের জীবন কেড়ে দিচ্ছে। এরপরও অনেকে তোয়াক্কা করছে না। আর কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না এবং মাস্কও পরছে না।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ড. সমীর সাহা বলেন, করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট আমরা লক্ষ্য করছি। যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। পাশাপাশি দেশে রাশিয়া ও সৌদি আরব ভ্যারিয়েন্টও পাওয়া গেছে। তাই এখন করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
একই বিষয়ে আইইডিসিআরের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুশতাক আহমেদ বলেন, যেসব দেশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছে তারাই করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানেনি তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এরমধ্যে বাংলাদেশ একটি। স্বাস্থ্যবিধি সবার মেনে চলতেই হবে। আর সরকার লকডাউন দিচ্ছে। এটা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে।
মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিনে রাখতে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সারা দেশে তারা ছড়িয়ে পড়েছে।


বিজ্ঞাপন