১০ লাখ রেনু পোনা নদীতে অবমুক্ত রোকসানা রুনু : জাটকা রক্ষার জন্য ডিমওয়ালা মা-মাছ এবং ১০ ইঞ্চি ও ২৫ সেন্টিমিটার কিংবা তার চেয়ে ছোট রেণু পোনা ভাইছা মাছ নিধন করা সরকারের সম্পুর্নভাবে নিষেধাজ্ঞা মানছে এক শ্রেণির অসাধু জেলে সম্প্রদায়। এব্যপারে মাছ শিকারি জেলেদের সচেতনতা বাড়াতে প্রণোদনামূলক কর্মসূচি, আলোচনাসভাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করলে জেলেরা প্রশাসনের চক্ষু আড়ালে রেণুপোনা নিধনের মহাউৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এর প্রতিরোধে অচিরেই নদী ও খাল-বিলগুলোতে ভ্রম্যমাণ আদালত চালু করা হচ্ছে। কারেন্ট ও চরগোরা জালের প্রভাবে খাল, বিল নদীতে মাছের রেণু ধরা পড়ে মাছের প্রজনন প্রচান্ডভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিদিন পিরোজপুরের নেছারাবাদে নিধন করা হচ্ছে লাখ- লাখ রেণু পোনা মাছ। উপকুলীয় অঞ্চলসহ পিরোজপুরের নেছারাবাদে(স্বরুপকাঠি) নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সন্ধ্যা, কচা, কালিগঙা ও বেলুয়া নদীতে কারেন্ট জাল, চরগোরা,মশরীনেট জাল, বিহিন্দী ও বক্স আকৃতির বিভিন্ন ধরণের জাল পেতে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা রেণু মাছ নিধনের ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। বর্ষা মৌসুমে নতুন পানি আসতে শুরু করলে নদী, খাল ও বিলে প্রজনন ডিমওয়ালা মা-মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনায় ভরে উঠে খাল- বিল ও নদী-নালাগুলো। এ সময় প্রজননখম মাছ ও পোনা মাছ নিধন, বিক্রি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বর্ষার পানি বাড়ার সাথে সাথে নেছারাবাদসহ উপকুলীয় এলাকাগুলোর খাল নদী ও বিলগুলোতে প্রতিদিন লাখ-লাখ ভাইছা রেণু পোনা নিধন করে জেলেরা। নেছারাবাদ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এম,কে পারভেজের নেতৃত্বে নেছারাবাদ কোর্স গার্ড ইয়ুকুব আলী প্যাটি অফিসারের ৪ সদদ্য একটি টিম গতকাল দুপুর ২টায় সন্ধ্যা নদী থেকে ৩ লাখ টাকার ২০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও প্রায় ১০ লাখ ইলিশের পোনাসহ ভাইছা মাছের রেণু পোনা মাছ উদ্ধার করে কোর্সগার্ড। উদ্ধারকৃত বিভিন্ন আকৃতির কারেন্ট জালগুলো উপজেলার ফেরীঘাটে আগুনে পুড়ে ধ্বংশ করার পর ১০ লাখ ভাইছা রেণু পোনা মাছ সন্ধ্যা নীতে অবমুক্ত করেন মৎস্য কর্মকর্তা এম কে পারভেজ। অবমুক্ত করার আগেই প্রায় ১৫ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা যায় বলে জানান,মৎস্য অফিসার। স্থানীয়রা জানান, প্রজনন মৌসুমসহ এসব নদীগুলোতে প্রতিদিন শতে-শতে ছোট নৌকায় নিধন করা হচ্ছে ভাইছা রেণু পোনা মাছ। এতে মিঠা পানির বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ বিলীন হতে চলছে। শহর-বন্দর গ্রাম-গঞ্জে সর্বত্রই দেশীয় মাছের চরম সঙ্কট। যা পাওয়া যায় তাও অগ্নিমূল্যে নিম্ম আয়ের মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব হয় না। বাজার দখল করে আছে চাষের পাঙ্গাস, কৈ, তেলাপিয়া সরপুটি, মাগুরসহ শতপ্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। মাসুষ্যসৃষ্ট নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশীয় মিঠাপানির সু-স্বধূ মাছের অনেক প্রজাতি এখন আর চোখে পড়ে না। বর্ষা মৌসুমের সময়ও ব্যাপকহারে ডিমওয়ালা মাছ নিধনে দেশীয় মিঠা পানির বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ক্রমেই অস্তিত্ব বিলীন হতে চলছে। পিরোজপুর জেলা নেছারাবাদ(স্বরুপকাঠি) উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দু‘দশক পূর্বে এসব নদীগুলোতে ২৭৬ প্রজাতির দেশীয় মাছের অস্তিত্ব থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন হ্যাচারী ও চাষের ৫০ প্রজাতির সচরাচর চোখে পড়লেও দেশীয় মাছের অস্তি¡ত আজ পুরোপুরিই হুমকির মুখে। দেশীয় মাছ-টাকি, শোল, ভোয়াল, কৈ, গজাল, টেংরা, শিং, চিতল, খয়রা, বাটা, পাইশ্য, কালিবাউশ, কাজলী, বাইল্য, ডরগী, সরপুটি, পাবদা, খৈলশা, বাশপাতা, জাবা, ভোলা, বাপাড়া, কাইন, খলা, ভাঙ্গন, দেশীয় পুটি ও গোদা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মিঠাপানির মাছ রেণু পোনা নিধনের কারণে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। দেশীয় মাছ রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রেণু পোনা নিধন বন্দের ও সরকারের জাটকা নিধনের নিষেধাজ্ঞা আইনের প্রতি জেলেদের সচেতনাতা করে তুলতে হবে।