প্রীতি আক্তার : সাম্প্রতিক সময়ে স্মার্টফোনের আলোচিত একটি অ্যাপের নাম ‘টিকটক’। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন আতংকের আরেক নাম। চেনা গান হোক বা জনপ্রিয় কোনও সিনেমার ডায়লগ— ক্যামেরার সামনে কয়েক সেকেন্ডের ভঙ্গিমার মাধ্যমে সেই গান বা ডায়লগই পারফর্ম করছেন আম জনতা। মুহূর্তে তা শেয়ার হয়ে যাচ্ছে সোশ্যাল ওয়ালে।
মাত্র ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে ডুবে আছে শিক্ষার্থী, শিল্পী, চিকিৎসক সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। অন্যের মনোযোগ আকর্ষন করে নিজেকে আলোচনা আনার এমন প্রবনতাকে অসুস্থতা বলছেন মনোবিদরা।
টিকটক এক দিকে যেমন অশীল রুচিশীল কর্মকান্ডে বিস্তার ঘটাচ্ছে অন্য দিকে তৈরী করছে মানসিক বৈকল্য তাই অ্যাপসটি বন্ধে প্রশাসনিক উদ্যোগ দরকার বলেও মনে করছেন প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা।
কাওরান বাজারের চা বিক্রেতা রায়হান; বেচা বিক্রির ব্যস্ততার মধ্যেও সচল তার মোবাইলে টিকটক অ্যাপস। পছন্দের গানের সাথে ক্রমাগত মুখোভঙ্গি করে ঠোট মিলিয়ে যাচ্ছে। ভিডিওটি আপলোড হলেই লাইক, শেয়ারের বন্যা বইবে বলে মনে করছে রায়হান। জানতে চাইলে বলেন, কাজের ফাঁকে ফাঁকে করি একটু আধটু বিনোদন নেয়া। একাকীত্ব দূর করতেই এইডা করি। ছেলে-মেয়েরা নিজেদের আলােচনায় আনার জন্য এতই অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে যেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সত্যিকার অর্থেই বেশ অসামাজিক।
পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, অল্প সময়ে ঠিক কতখানি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই টিকটক। কিন্তু আসলে এই টিকটক অ্যাপটি যুবপ্রজন্মকে পর্নের প্রতি আকৃষ্ট করছে। অল্প বয়সিদের উপর এর খুব খারাপ প্রভাব পড়ছে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতেই সারা বিশ্বের এক বিলিয়ন মানুষ এটি ডাউনলোড করেন। এটি ২০১৮ সালে চতুর্থ সর্বাধিক ডাউনলোড হওয়া গেম ব্যাতীত অ্যাপ্লিকেশন। ফেব্রুয়ারিতে ২৪০ মিলিয়ন বার ডাউনলোড হয়েছে এই অ্যাপটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সঞ্চারী প্রতিভা বলেন, বিষন্নতা অথবা এনজাইটির রিলেটেড যে ডিসঅর্ডারের গুলো আছে মানসিক রোগের ডিকশনারিতে, সে ধরনের রোগ গুলো এ হীনমন্যতা থেকে তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা আসলে খুব ছোট বয়সেই বাচ্চাদের মোবাইল দিচ্ছি। আগেও কিন্তু ছেলে মেয়েরা বড় হয়েছে মোবাইল ছাড়া। এখন হচ্ছে বাসায় বাচ্চা কাঁদছে, তাকে একটা মোবাইল হাতে ধরিয়ে দিলো। এ প্রবনতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরমের সভাপতি মোজাহেদুল ইসলাম বলেন, সামাজিক সচেতনতা জরুরী কিন্তু এ সচেতনতা কতক্ষন। সে হয়তো বাহিরে গিয়ে পার্কে গিয়ে ভিডিওটা বানাচ্ছে। কিংবা অন্য জায়গায় গিয়ে ভিডিওটা বানাচ্ছে। তখন আসলে বাবা মায়ের কিছু করার থাকে না। রাষ্ট্র যদি এটার ব্যবস্থা না নেয় তবে এর প্রবনতা দিনদিন আরো বাড়বে।
২০১৬ সালে চীনে টিকটকের জন্ম হলেও সেখানে এটির ব্যবহার নেই বললেই চলে। অথচ ভারতে এর অ্যাপসটি ডাউনলোটের হয়েছে ২৪ কোটিবার। বাংলাদেশও এখন কি সে পথে হাটবে?