দেশবাসী ও যোগ্য সহকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধ চালিয়েছে

জাতীয়

সুভাষ সিংহ রায় : ২৫শে মার্চ (১৯৭১) রাতে আমি গ্রেফতার হবার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দেই। পুলিশ হেডকোয়াটার্সের মাধ্যমে ওয়্যারলেসে সে ঘোষণা সব জেলা সদরে পাঠানো হয়। আমি বিভিন্ন চ্যানেলে ভারতের সঙ্গেও যোগাযোগ করে যাই। তা না হলে তোমরা অত সহজে অস্ত্র ও সাহায্য সহযোগিতা পেতে না।


বিজ্ঞাপন

আমরা প্রশ্ন করলাম কিন্তু আপনি কেন ওদের হাতে ধরা দিলেন। তিনি বললেন, ‘এ ব্যাপারে আমার বেশ ক’টি চিন্তা কাজ করেছে। এক. আমাকে ধরতে না পারলে ওরা আরও বেশি লোককে খুন করতো; দুই. আন্তর্জাতিকভাবে আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ভারতের ক্রীড়নক বলে প্রমাণিত হতাম এবং এতে আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা কমতো এবং আরও বেশি দেশ আমাদের আন্দোলন সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করতো। আর একটা কথা বলি, তোমরা কিভাবে নেবে জানি না, প্রফেসর সাহেব আমার সঙ্গে একমত হবেন কিনা তাও বলতে পারি না- তবে আমার সুদৃঢ় বিশ্বাস আমি পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি থাকায় আমার দুঃখী বাঙালিদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ যেমন বেড়েছে তেমনি মানুষ আমার অনুপস্থিতিতে আমার একটা বিশাল প্রতীক মনে মনে তৈরি করে নিয়েছে। এটা ছিল মুক্তিযুদ্ধের খুব বড়ো একটা শক্তি। আমি প্রবাসী সরকারে থাকলে শুধু প্রমাণ সাইজের মুজিবই থাকতাম। ওদের হাতে বন্দি থাকায় আমি এক মহাশক্তিধর ও বাংলাদেশের সকল মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতার ভূমিকায় স্থান পাই। মানুষ আমার নাম দিয়ে হেলায় হেসে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। কি অমোঘ অস্ত্র ছিলো, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। ওরা যদি আমাকে মেরে ফেলতো, তাহলে আমি আরো বড়ো প্রতীকে পরিণত হতাম। বাংলার মানুষ আরো লড়াকু হয়ে যুদ্ধ করতো। তাছাড়া, আমার জাতি আমাকে যে মর্যাদা দিয়েছে তার প্রতি সম্মান রেখেই আমি আমার বুঝ মতো ব্যবস্থা নিয়েছি, আর আমার দেশবাসী ও যোগ্য সহকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধ চালিয়েছে। (তথ্য সূত্র : বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ , লেখক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। প্রকাশক- দ্য রয়েল পাবলিশার্স)