রেকর্ড শতাধিক মৃত্যু

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা সারাদেশ স্বাস্থ্য

রোগীরা ছুটছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে
আক্রান্ত শতাধিক সংসদ সদস্য

 

এমএ স্বপন : ‘সর্বাত্মক লকডাউন’র তৃতীয় দিন দেশের ইতিহাসে করোনায় সর্বোচ্চ ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০ হাজার ১৮২ জনে। এর আগে বুধবার (১৪ এপ্রিল) সর্বোচ্চ ৯৬ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪ হাজার ৪১৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এতে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১১ হাজার ৭৭৯ জনে।
করোনাভাইরাস নিয়ে শুক্রবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ৫ হাজার ৬৯৪ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ২ হাজার ৯০৮ জন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দেশে আরও ৪ হাজার ১৯২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া মারা যান দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৪ জন।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন ১৩ হাজার ৮৩৯ জন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৩৬ হাজার ২৯৪ জন। এ নিয়ে বিশ্বে মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ লাখ ৯৯ হাজার ২৪৬ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার ৮০০ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১ কোটি ৮৭ লাখ ১৯ হাজার ৫৬ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ২২ লাখ ২৪ হাজার ১৩৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৯৯৩ জনের।
আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ৪২ লাখ ৮৭ হাজার ৭৪০ জন এবং মারা গেছেন এক লাখ ৭৪ হাজার ৩৩৫ জন।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিল এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫৪ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৭৯ জন। ভাইরাসটিতে মারা ১ লাখ ৭৩ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে রাশিয়া রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৫৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ৪ হাজার ৩৯৮ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় যুক্তরাজ্য ষষ্ঠ, তুরস্ক সপ্তম, ইতালি অষ্টম, স্পেন নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে রয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।


বিজ্ঞাপন

রোগীরা ছুটছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে : সর্বাত্মক লকডাউনে হাসপাতালে রোগীর চাপ কমলেও আইসিইউ সংকট আরো বেড়েছে। শয্যা না পেয়ে মুমূর্ষু রোগীরা ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। কমেছে করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে আসা লোকজনের উপস্থিতিও।
পঞ্চাশোর্ধ্ব মাহবুবুর রহমান। কিডনি জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগতে থাকা এই রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা নেমে এসেছে ষাটের নিচে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যার জন্য চার দিনের অপেক্ষা শেষে মুমূর্ষু অবস্থাতেই অন্য হাসপাতালের দিকে যাত্রা।
রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় দিনভরই করোনায় বিপন্ন মানুষের এমন উপস্থিতি চোখে পড়ে। আইসিইউ সংকট যেন ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। আর তাই বাড়ছে হাসপাতালে থেকে হাসপাতালে অসহায় রোগীদের ছোটাছুটিও।
একজন ভুক্তভোগী বলেন, আইসিইউ পাচ্ছি না। এখন মহাখালীতে একটা হাসপাতালে পেয়েছি। তাই সেখানে নিয়ে যাচ্ছি।
স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হওয়ার পর হাসপাতালে রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে।
স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেন, এখন অনলাইনের মাধ্যমে সিরিয়াল নেওয়া হয়। সময় বলে দেওয়া হয়। সে সময়েই আসেন রোগী।
এদিকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার নিবন্ধন অনলাইনে হওয়ায় আগের থেকে ভোগান্তি অনেকটাই কমেছে বলে জানান আগতরা।


বিজ্ঞাপন

আক্রান্ত শতাধিক সংসদ সদস্য : দেশে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এখন পর্যন্ত বর্তমান সংসদের চারজন আইন প্রণেতার মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন শতাধিক সংসদ সদস্য। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার না ফেরার দেশে চলে গেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু। এছাড়া গত মাসে মারা যান সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।
ডিকেল সেন্টার এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশের প্রায় ১১১ জন সংসদ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ৩৪ জন সংসদ সদস্য। অবশ্য আক্রান্তদের অনেকেই তাদের তথ্য প্রকাশ করতে আগ্রহী হন না।
গত বছর সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং নওগাঁ-৬ আসনের ইসরাফিল আলম মারা যান। ওই সময় মারা যান টেকনোক্র্যাট কোটার প্রতিমন্ত্রী শেখ মুহম্মদ আবদুল্লাহ।
করোনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত দুই মাসে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের অনেকেরই আক্রান্ত হয়েছেন প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করার পর। কেউ কেউ দ্বিতীয় দফায়ও আক্রান্ত হয়েছেন।
সংসদ সচিবালয়ের মেডিকেল সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকজন সংসদ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হলেও কোনো উপসর্গ তাদের ছিল না। সদ্য সমাপ্ত সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার কারণে সংসদ সচিবালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করে কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা করাতে গেলে অনেকের পজেটিভ হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, কোনো সংসদ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেলে স্পিকার, চিফ হুইপসহ আমরা হুইপরা নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখি। সংসদের মেডিকেল সেন্টার থেকেও তাদের চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হয়। ঢাকার বাইরে থেকে চিকিৎসার জন্য আনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সার্বিক সহযোগিতা ও খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। আর মহামারির শুরু হওয়ার পর জনপ্রতিনিধিরা মানুষের মধ্যে গিয়েছেন। তাদের পাশে দাঁড়াতে হয়েছে। এ কারণেই তারা বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণের পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ১৪ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে করোনা পজিটিভ হয়। গত ৮ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেন। এর আগে গত ৯ এপ্রিল রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী করোনা পজিটিভ আসে। প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার ৪৮ দিন পর ৮ এপ্রিল আক্রান্ত হন ঢাকা-২০ আসনের বেনজীর আহমদ। ৭ এপ্রিল আক্রান্ত হন নোয়াখালী-৩ আসনের মামুনুর রশীদ কিরণ। ৬ এপ্রিল আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন নেত্রকোণা-৩ আসনের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল।
বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ আসে কোনো লক্ষন ছাড়াই। সদ্য সমাপ্ত সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে বাধ্যতামূলকভাবে নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে তাদের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারা হলেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয়, টাঙ্গাইল-২ আসনের ছোট মনির, গাজীপুর-৫ আসনের মেহের আফরোজ চুমকি, হবিগঞ্জ-১ আসনের গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, সংরক্ষিত আসনের খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন, কক্সবাজার-১ আসনের জাফর আলম, কক্সবাজার-২ আসনের আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৪ আসনের শাহীন আকতার ও সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম। এদের মধ্যে তানভীর শাকিল হয় ও ছোট মনির দ্বিতীয়বারের মত করোনায় আক্রান্ত হন।
সংসদের মেডিকেল সেন্টারের এক কর্মকর্তা জানান, তারা খবর পেলে বা সংসদ সদস্য নিজে যোগাযোগ করলে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার প্রায় দুই মাস পরে ৩০ মার্চ আক্রান্ত হন পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির। এরআগের দিন ২৯ মার্চ করোনা পজিটিভ আসে জাতীয় পার্টির নীলফামারী-৪ আসনের আহসান আদেলুর রহমানের। ২৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হন হবিগঞ্জ-২ আসনের মো. আবদুল মজিদ খান। টিকা নেওয়ার দেড় মাস পর গত ২৫ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হন রাজবাড়ী-১ আসনের কাজী কেরামত আলী। গত ২৩ মার্চ করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ঢাকা-৭ আসনের হাজী মো. সেলিম। ২০ মার্চ সস্ত্রীক আক্রান্ত হন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান।
১৩ মার্চ ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, ১২ মার্চ সস্ত্রীক আক্রান্ত হন গাইবান্ধা-৪ আসনের মনোয়ার হোসেন চৌধুরী। মার্চ মাসের শুরুর দিকে আক্রান্ত হন সংরক্ষিত আসনের রওশন আরা মান্নান।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি করোনায় প্রথম ডোজ টিকা নেন সিলেট-৩ আসনের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। এর প্রায় এক মাসের মাথায় ৭ মার্চ তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। নমুনা পরীক্ষা করলে তার ফলাফল পজিটিভ আসে। টিকিৎসাধীন অবস্থায়ই তিনি ১১ মার্চ মারা যান।
এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, জানুয়ারি মাসে গাইবান্ধা-৩ আসনের উম্মে কুলসুম স্মৃতি, সংরক্ষিত সংসদ সদস্য সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিনের আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। ওই সময় বগুড়া-৭ আসনের স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্যে নাহিদ ইজহার খান, শিরীন আহমেদ, জান্নাতুল বাকিয়া, আরমা দত্তের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়।
এদিকে সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৬ জন এমপির করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে মারা যান দুজন। সংসদ সদস্যদের মধ্যে প্রথম এই করোনা আক্রান্ত হন নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার। দেশে সংক্রমণের ৫২ দিনের মাথায় ৩০ এপ্রিল তার শরীরে ভাইরাস ধরা পড়ে। পরে এই সংসদ সদস্য আরো একবার আক্রান্ত হন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং প্রথম এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন।
৩০ এপ্রিল নওগাঁ-২ আসনের শহীদুজ্জামান সরকার আক্রান্ত হওয়ার পর ১৬ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের এবাদুল করিমের করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়। জুনে তিন মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জন এমপি আক্রান্ত হয়েছিলেন। সরকারি দলের সদস্য ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজাও ওই সময় আক্রান্ত হন। ওই মাসে সাবেক মন্ত্রী সিরাজগঞ্জ-১ আসনের মোহাম্মদ নাসিম, গোপালগঞ্জ-৪ আসনের মুহম্মদ ফারুক খান, ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী গাজীপুর-১ আসনের আ ক ম মোজাম্মেল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী রংপুর-৪ আসনের টিপু মুনশি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, সাবেক প্রধান হুইপ ও মৌলভীবাজার-৪ আসনের আব্দুস শহীদ, যশোর-৪ আসনের রণজিৎ কুমার রায়, জামালপুর-২ আসনের ফরিদুল হক খান (বর্তমান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী), চট্টগ্রাম-৮ আসনের মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম-১৬ আসনের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-২ আসনের মোকাব্বির খান, নড়াইল-২ আসনের মাশরাফি বিন মর্তুজা, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বরিশাল-৫ আসনের জাহিদ ফারুক, রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক এবং সংরক্ষিত আসনের ২৫ জুন ফেরদৌসী ইসলাম জেসির করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ার খবর আসে। এদের মধ্যে মোহম্মদ নাসিম ১৩ জুন মারা যান। একই দিনে মারা যান ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মুহম্মদ আবদুল্লাহ।
জুলাইতে নওগাঁ-৬ আসনের ইসরাফিল আলম, সিরাজগঞ্জ-৫ আব্দুল মমিন মন্ডল, নওগাঁ ৩-এর ছলিম উদ্দিন তরফদার, সাতক্ষীরা-২ আসনের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, টাঙ্গাইল-৮ আসনের জোয়াহেরুল ইসলাম ও কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এম এ মতিন আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে ইসরাফিল আলম ২৭ জুলাই মারা যান।
আগস্টে এক মন্ত্রীসহ ১১ জন সংসদ সদস্য আক্রান্ত হন। তারা হলেন- মৌলভীবাজার-১ আসনের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৬ আসনের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, বিএনপির সংরক্ষিত আসনের রুমিন ফারহানা, সংরক্ষিত আসনের সালমা চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও-১ রমেশ চন্দ্র সেন, ঠাকুরগাঁও–২ আসনের দবিরুল ইসলাম, রাজশাহী-৫ আসনের মনসুর রহমান, টাঙ্গাইল-৭ আসনের মো. একাব্বর হোসেন, পটুয়াখালী-৩ আসনের এস এম শাহজাদা, মেহেরপুর-২ আসনের মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান ও কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নুর মোহাম্মদ।
সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত হন দিনাজপুর-২ আসনের সদস্য নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, খুলনা-৬ আসনের আক্তারুজ্জামান বাবু, টাঙ্গাইল-২ ছোট মনির, শেরপুর-১ আসনের হুইপ আতিউর রহমান আতিক ও বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ।
অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, হবিগঞ্জ-৩ আসনের আবু জাহির এবং ফেনী-৩ আসনের জাতীয় পার্টির মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী আক্রান্ত হন।
নভেম্বরে মাসে তিন মন্ত্রী, দুই প্রতিমন্ত্রী, একজন উপমন্ত্রী ও একজন হুইপসহ ২৩ জন এমপি আক্রান্ত হন। তারা হলেন, বাগেরহাট-১ আসনের শেখ হেলাল উদ্দীন, টাঙ্গাইল-৫ ছানোয়ার হোসেন, ঢাকা-১০ আসনের শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন,পাবনা-৪ আসনের নুরুজ্জামান বিশ্বাস, নওগাঁ-২ আসনের শহীদুজ্জামান সরকার, পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পাবনা-৩ আসনের মকবুল হোসেন, ঢাকা-১৩ আসনের সাদেক খান, সিলেট-৪ আসনের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের মুজিবুল হক চুন্নু, লালমনিরহাট-১ আসনের মোতাহার হোসেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বগুড়া-৩ আসনের নুরুল ইসলাম তালুকদার, ঢাকা-১৭ আসনের আকবর হেসেন পাঠান (ফারুক), গাজীপুর-২ আসনের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, কুষ্টিয়া-৩ আসনের মাহবুব উল আলম হানিফ, ঝিনাইদহ-৩ আসনের শফিকুল আজম খান চঞ্চল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জাতীয় সংসদের হুইপ জয়পুরহাট-২ আসনের আবু সাঈদ আল মাহমুদ (স্বপন), বিএনপির এমপি ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান এবং সংরক্ষিত নারী আসনের নাদিরা ইয়াসমিন জলি ও তাহমিনা বেগম।
শিক্ষামন্ত্রী ও চাদঁপুর-৩ আসনের দীপু মনিসহ ডিসেম্বরে আটজনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। অন্যরা হলেন, নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট-৬ আসনের নুরুল ইসলাম নাহিদ, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের মৃণাল কান্তি দাস, বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান, চট্টগ্রাম-১২ আসনের সামশুল হক চৌধুরী ও পাবনা-৫ আসনের গোলাম ফারুক প্রিন্স।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। গত ১ এপ্রিল তা ৬ লাখ পেরিয়ে যায়। সে হিসেবে ১৬ দিনেই আক্রান্ত হল আরও ১ লাখ লোক।