উত্তরের পথ স্বাভাবিক
ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে খন্ড খন্ড জটে ধীরগতি
চেকপোষ্টে ভোগান্তি
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় উপচেপড়া ভিড়
এম এ স্বপন : ঈদের বাকি আর দুদিন। শেষ সময়ে নগর ছাড়ছেন মানুষ। আন্তঃজেলা বাস বন্ধ থাকায় ঝুঁকি নিয়েই ট্রাকে বা কাভার্ডভ্যানে করে দূর গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই সবাই ছুটছেন গ্রামে।
স্রোত এখন গ্রামমুখী। করোনার ঝুঁকি তুচ্ছ করে স্বজনের টানে ছুটছে সবাই। আর তাই ভিন্নরকম এক ঈদযাত্রা। বেরিয়েছেন ঘর থেকে কিন্তু নিশ্চিত নয় বাহন ব্যবস্থা। সংখ্যায় কম হলেও অনেকগুলো সিটি বাস যাচ্ছে দূরপাল্লায়। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার যেভাবেই হোক যেতে হবে বাড়ি।
একজন জানান, গন্তব্য হলো বাড়ি পর্যন্ত। এখনও কোনো পরিবহন ম্যানেজ করতে পারেনি।
এক নারী জানান, কিছু টাকা আয় করেছি। সেগুলো নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু ভাড়া দিতেই সব শেষ। ৫০০ টাকার ভাড়া মাইক্রোবাসে চাওয়া হচ্ছে ১৫০০ টাকা।
রাজধানীর গাবতলী বা সাভারের আমিনবাজার এলাকা দিয়ে হাজারো মানুষ ছাড়ছেন ঢাকা। তবে গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া।
এক ট্রাক ড্রাইভার জানান, ঢাকা থেকে কাঁচামালের ট্রিপ নিয়ে এসেছিলাম। এখন দেখি যাত্রীরা ভোগান্তিতে; সেজন্য ৪০০ টাকা যাত্রী নিয়ে যাচ্ছি।
আন্তঃজেলা বাস বন্ধ থাকায় বিড়াম্বনা চরমে পৌঁছেছে ঘরে ফেরাদের।
মহাসড়কে খন্ড খন্ড জটে ধীরগতি, চেকপোষ্টে ভোগান্তি : কুমিল্লার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ বেড়েছে। ঈদকে সামনে রেখে বাড়ি ফেরা শুরু হওয়ায় যানবাহনের চাপে মহাসড়কের কোথাও ধীরগতি, আবার কোথাও খ- খ- যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ বেড়েছে। ঢাকা থেকে কুমিল্লামুখী দূরপাল্লার বাস প্রবেশ করতে না দেওয়ায় দাউদকান্দির টোলপ্লাজা এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট থেকে হেঁটে যাত্রীরা গন্তব্যে যাচ্ছেন। আবার অনেকে বিকল্প বাহন হিসেবে পণ্য পরিবহনের ট্রাকে করে গন্তব্যে ফিরছেন। তবে মহাসড়কের কোনও অংশে দীর্ঘ যানজট নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার ভোর থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দির শহীদনগর থেকে পুটিয়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কে যানবাহনের ধীরগতির সঙ্গে খ- খ- যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
মহাসড়কের গৌরিপুর এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় সংবাদকর্মী কামরুল হোসেন জানান, ঈদকে ঘিরে মহাসড়কের যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় খ- খ- যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে মহাসড়কের গাড়ির ধীরগতি রয়েছে। তবে কোথাও যানজট স্থায়ী হয়ে দীর্ঘ হচ্ছে না।
লাকসাম উপজেলার সিরিয়াল গ্রামের বাসিন্দা চাকরিজীবী কাউসার আলম সকাল ৯টার দিকে দাউদকান্দির গৌরিপুর বাসস্ট্যান্ডে যানজটে আটকে আছেন জানিয়ে বলেন, স্ত্রী নিঝুম আক্তার ও ছয় মাসের মেয়ে ফাতিহাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে রওনা হই ভোর পাঁচটায়। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বাসে উঠেছি। পথে যানজটে আটকে থেকে দাউদকান্দির গৌরিপুর পর্যন্ত এক ঘণ্টার পথ পার হয়েছি চার ঘণ্টায়। বাকি পথের ভোগান্তি মাথায় রেখেই আপনজনের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী প্রাইভেটকারের চালক জাহিদ হাসান বলেন, ভোর পৌনে পাঁচটায় ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে কুমিল্লার মুরাদনগরের দিকে রওনা দিয়েছি। তিনি জানান, ঈদ সামনে রেখে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায়, উল্টো পথে যানবাহন চলাচল, মহাসড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে লোকাল বাসের স্ট্যান্ড গড়ে তোলায়, পণ্যবাহী যানবাহন ছোট যানবাহনকে যথাসময়ে সাইট না দেওয়ায় অহেতুক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি জহরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের বিভিন্ন ধরনের গাড়ির চাপ বেড়েছে। দূরপাল্লার কোনও বাস যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে না। চেকপোস্টে ঢাকা থেকে কুমিল্লামুখী যাত্রী পরিবহন করা বাস আটকে দেওয়া হচ্ছে। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়েছে মহাসড়কে। সেই সঙ্গে পণ্য পরিবহনের গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখী মানুষ। মহাসড়কের গাড়ির চাপ বাড়ায় ধীরগতি তৈরি হচ্ছে। তবে যানজট নেই বলে দাবি করেন তিনি।
উত্তরের পথ স্বাভাবিক : ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও গাড়ির ধীরগতি বা যানজট দেখা যায়নি। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। এজন্য শুধু পণ্যপরিবহনে নিয়োজিত যানবাহন, ট্রাক, পিকআপভ্যান, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করছে। এ কারণে মহাসড়কে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে যানবাহনের জট নেই। স্বাভাবিক গতিতেই চলছে যানবাহন। তবে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ছে।
এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীরা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। দীর্ঘ সময়েও গাড়ি না পেয়ে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। আবার অনেকে ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপভ্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়িতে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরছেন। এতে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার কথা হয়েছে। গার্মেন্টস ছুটি হলে বিকালে সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও যানবাহন আটকে নেই।’ তবে তার দাবি সড়কে কোনও গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় উপচেপড়া ভিড় : নানা বাধা উপেক্ষা করে প্রতিদিনই ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপ অব্যাহত থাকায় ফের ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করেছে ফেরি কর্তৃপক্ষ। তবে যাত্রী ও রোগীবাহি এ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য বিশেষ কিছু যানবাহন পারাপারে প্রয়োজন অনুযায়ী ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। নির্ধারিত কয়টি ফেরি চলাচল করবে তা নির্দিষ্ট করেনি কর্তৃপক্ষ। ফেরি ছাড়ার খবর শুনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঈদে ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের ফেরিগুলোতে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা ফেরিগুলো উপচেপড়া যাত্রী এবং ছোট ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে আসে। নানা ধরণের ভোগান্তি মাথায় নিয়ে প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দটুকু ভাগাভাগি করতে সাধারণ মানুষ অতিরিক্ত কয়েকগুণ টাকা খরচ করে নারী টানে বাড়ি ফিরছেন। তবে যাত্রীদের অত্যাধিক চাপের কারণে কারো মধ্যেই দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি মানার লক্ষণ।
যাত্রীরা বলেন, ফেরির সাথে এখন স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে গণপরিবহনগুলো খুলে দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন। এতে তারা ঈদের আনন্দটুকু পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করতে পারবেন বলেন। দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় তারা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন, গন্তব্যে পৌঁছাতে ভাড়া গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ। তারা ফেরি চালু হওয়ায় ঈদে পরিবার পরিজনদের সাথে ঈদ করতে বাড়ি ফিরছেন। তবে গণ পরিবহন না থাকায় তাদের ভোগান্তি ছিলো অসহনীয়। তার পরও তারা পথে পথে যানবাহন পরিবর্তন করে অতিরিক্ত কয়েকগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে নানা ভোগান্তি ও বাঁধা বিপত্তির সহ্য করে বাড়ির উদ্দেশে ছুটে চলেছেন এবং বাড়ি ফিরতে পারছেন এতে তারা আনন্দিত। শত কষ্টের মাঝেও তারা বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছেন এটাই তাদের কাছে বড় খুশি।
বিআইডব্লিউটিসি বাণিজ্য শাখার এজিএম নাসির মাহমুদ চৌধুরী (পাটুরিয়া) জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে প্রয়োজন অনুযায়ী যাত্রী, রোগীবাহি এ্যাম্বুলেন্স ও বিশেষ কিছু যানবাহন পারাপারেও ফেরি সচল রয়েছে। ঘাটে চাপ থাকলে ফেরি চলাচল যানবাহন ও মানুষ পারাপারে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে। তবে কতগুলো ফেরি চলাচল করবে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। প্রয়োজন অনুযায়ী ফেরি সচল থাকবে ঘাটে।