নিজস্ব প্রতিবেদক : আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য পর্যালোচনা করে আরও দেখা গেছে, ৭ থেকে ১২ বছর শিশুরাও ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পায়নি এই মহামারিকালেও।
২০২০ জানুয়ারি থেকে ২০২১ এপ্রিল। এই ১৬ মাসে সারাদেশে ২০১৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ভিকটিমদের মধ্যে বেশিরভাগই ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী। ২০২০ সালে ১৬২৭টি ধর্ষণেরে ঘটনায় এ বয়সীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ৩০০ এর মতো। ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৭১ জন। আত্মহত্যা করেন ১৮ জন। এ ছাড়া ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটে ৪০২টি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক-পারিবারিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে যৌনশিক্ষা দেওয়া হয় সেটা সঠিক নয়। সঠিক যৌনশিক্ষা দেওয়া হলে এবং সেইসঙ্গে ছেলেমেয়েরা যদি নৈতিক শিক্ষার বলয়ে বেড়ে ওঠে, তবে তাদের মধ্যে সহিংস হওয়ার প্রবণতা কমবে।
অন্যদিকে, মহামারির কারণে মানসিক ও আচরণগত সমস্যাও বাড়ছে। যৌন নির্যাতন ব্যক্তির আচরণগত সমস্যার অংশ। করোনাকালীন ঘরে থেকে ও কাজ হারিয়ে অনেকেই হতাশায় ভুগছে। আর তাই পরিবারের সদস্যদের দ্বারাও সহিংসতার কবলে পড়ছেন নারীরা। অনেক সময় দেখা যায় ঘটনার শিকার হলেও নারী ও শিশুরা পরিবারকে এসব বিষয়ে জানাতে চান না।
আবার ধর্ষণকারী প্রভাবশালী হলে অনেকেই এ ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও জানাতে চান না। বিচারহীনতার সংস্কৃতিও এখানে বড় ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, করোনাকালীন ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার আরেক অন্যতম কারণ, স্যোশাল সাপোর্ট সিস্টেমের ঘাটতি। অন্য সময় বিভিন্ন সংগঠনগুলোতে নারীরা সহায়তা চাইতে পারতেন। কিন্তু করোনার কারণে এখন তা কম পারছেন। নারী সংগঠনগুলোর সামাজিক যোগাযোগটা শক্ত হলে দেখা যেতো ধর্ষকের মনে একটা ভয় থাকতো।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সিনিয়র উপ-পরিচালক নীনা গোস্বামী বলেন, বিচারহীনতার কারণেই ধর্ষণ বেড়েছে। আইনের আওতায় আনার পর বিচারকাজ যদি অন্তত ছয়মাস বা এক বছরে শেষ করা যেতো তাতেও কাজ হতো। যারা ভুক্তভোগী তারা আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হয়রান হচ্ছেন, আশাহত হচ্ছেন। আমরা বিভিন্ন সময় বলছি, ধর্ষণ মামলাগুলোর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বেঞ্চ করতে হবে। যেখানে ধর্ষণের মামলাগুলো হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তাড়াতাড়ি শেষ করার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের কাছে এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল। ধর্ষণের প্রতিরোধে আইনের সংস্কার দরকার। কিন্তু এগুলো আমলে না নিয়েই আইন সংশোধন করা হলো।