নিজস্ব প্রতিবেদক : শুনে অবাক হবেন কিন্ত ঘটনা ঘটনা সত্য। দেশের বিদ্যমান সমবায় আইন, বিধিমালা ও কালবের উপ-আইন লংঘন করে চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী এখন জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন। ৭ মে কালবের ৮ম বোর্ড সভায় ভারপ্রাপ্ত জিএম রোমেল ক্রুজকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে পরবর্তি সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যান অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জিএম এর দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি সদস্য সমিতি গুলোতে নোটিশ দিয়ে জিএম এর সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এদিকে ঠুনকো কারনে জিএমকে অপসারন ও আইন লংঘন করে চেয়ারম্যন কর্তৃক জিএম এর দায়িত্ব গ্রহনকে কেন্দ্র করে সমবায় অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্যদের লুটপাটে বাধা দেয়ার কারনেই জিএমকে ঠুনকো অজুহাতে অপসারন করা হয়েছে। কালবে জোনাস ঢাকী গংদের সীমাহীন লুটপাট ও বেআইনী কার্যক্রম বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে সমবায় অধিদপ্তরের প্রতি আহবান জানিয়েছেন কালবের সচেতন ডেলিগেটগণ।
এদিকে আচমকা তিনি মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ব্যানারে আমন্ত্রণপত্রে নামের পূর্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা শোভা পাচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর দেশবাসি একজন নতুন মুক্তিযোদ্ধার নাম শুনে চমকিত। আর বীরমুক্তিযোদ্ধার এলাকাবাসি শুনে তো অবাক। কেউবা হেসে কুটি কুটি। এই ব্যক্তির নাম জোনাস ঢাকী। সমবায় অঙ্গনে বহুল সমালোচিত ব্যক্তি। যার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ। নামের সাথে হঠাৎ মুক্তিযোদ্ধা যোগ করায় সমবায় অঙ্গনে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। সমবায়ীদের মতে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ধূর্ত জোনাস ঢাকী সময়ের ট্রেন্ড বুঝে জাতে উঠার জন্যে মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন।
এবিষয়ে প্রতিবেদক জোনাস ঢাকীর এলাকা বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলায় খোঁজ খবর নিয়েছেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ নাগরিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, জোনাস ঢাকী নামে কোন মুক্তিযোদ্ধা এই এলাকাতে নেই। তার নাম ঠিকানা কিছুই তারা জানেনা। ৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালে জোনাস ঢাকীর নামও তারা কোন দিন শুনেনি। স্বাধীনতার ৫০ বছর প্রতিবেদকের কাছে এই নাম শুনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা অবাক হয়ে বলেন আচানক এই মুক্তিযোদ্ধা কোথা থেকে আবির্ভুত হলো। এই প্রতিবেদককে তার সম্পর্কে অনুসন্ধান করার জন্যে অনুরোধ করেন। সরকারি মুক্তিযোদ্ধার কোন তালিকায়ও তার নাম নাই। অথচ তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা! এবার জেনে নিন মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার জোনাস ঢাকীর সমবায় অঙ্গনে দুর্নীতির কাহিনী।
দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ লিঃ (কালব) এর চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী ও ট্রেজারার জয়নাল আবেদিন এবং একাধিক পরিচালক সমবায় প্রতিষ্ঠানকে লুটপাটের আখড়ায় পরিনত করেছেন। তাদের ভাগ বাটোয়ারায় সারথী হয়েছেন রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পন্ন একজন পরিচালক। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের মতামতের গুরুত্ব দেয়া হয় না। বরং বিগত নির্বাচনে সদস্যদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত দুর্নীতির নাটেরগুরু সাবেক সেক্রেটারী এমদাদ হোসেন মালেককে ছায়া সেক্রেটারী মনে করা হয়। নতুন বোর্ড গঠনের পরও বর্তমান সেক্রেটারীকে বাদ দিয়ে কালবের নথিপত্রে মালেকের স্বাক্ষর পর্যন্ত নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে জোনাস ঢাকীর দুর্নীতির প্রধান সারথী হয়েছেন ট্রেজারার জয়নাল আবেদিন। পরপর দুই মেয়াদে ট্রেজারের দায়িত্ব পালন করে জয়নাল আবেদিন এখন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন। কালবে রক্ষিত সমবায়ীদের অর্থ লুটপাট করে এখন তিনি প্রচুর অর্থ বিত্তের মালিক। সরকারী চাকরী করেও তিনি কালবে দুই মেয়াদে ট্রেজারের দায়িত্ব পালন করছেন। তার প্রাথমিক সমবায় সমিতি মৌচাক কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নেও জয়নাল আবেদিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি জোনাস ঢাকী নিজের নামের পূর্বে বীরমুক্তিযোদ্ধা যোগ করছেন। অথচ তার প্রধান সহযোগী জয়নাল আবেদিন জামায়াত ইসলামী’র স্থানীয় একজন নেতা।
এদিকে বিনা প্রয়োজনে জমি ক্রয়, ভবন নির্মান, গাড়ি ক্রয়, প্রধান কার্যালয় বিক্রি করে আবার নতুন ভবন নির্মানের জন্যে জমি ক্রয়, রিসোর্ট ও মদের বার করার নামে প্রায় ১০০ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলে জানা গেছে। কালব লুটপাট করে কানাডার টরেন্টোতে বাড়ি কিনেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে। তার দুই মেয়ে বর্তমানে টরেন্টোতে বসবাস করে। জোনাস ঢাকী ১০বছরের ফ্রি ভিসায় কানাডায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। নাগরিকত্ব কনফার্ম হলে কালবের তহবিল শূণ্য করে দিয়ে কানাডায় পালাবেন। তার পূর্বের চেয়ারম্যান সাইমন এ পেরেরা ১০০ কোটি টাকা লোপাট করে নাগরিক হওয়ার সুবাদে আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদক ইতিমধ্যে মামলা করেছে। অর্থের বিনিময়ে কালবে জব্দ সাইমনের পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে আমেরিকায় পালাতে সহায়তা করেছে জোনাস ঢাকী। এক্ষেত্রে সমবায় অধিদপ্তরের ভূমিকা রহস্যজনক। জোনাস ঢাকীর বেপরোয়া লুটপাটের কারনে কালব ধ্বংসের প্রহর গুনছেন সদস্যগণ।
এদিকে জোনাস ঢাকীর লুটপাটে অতিষ্ট অসহায় বোর্ডের অন্য সদস্যগণ। অতিষ্ঠ হয়ে বর্তমান বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারী চেয়ারম্যানের দুর্নীতির ফিরিস্তি সমেত খোলা চিঠি দিয়েছেন। বিগত ২৮-১২-২০১৯ খ্রীঃ তারিখে দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ(কালব) নির্বাচনে জোনাস ঢাকী পুনরায় জয়লাভ করে ০১-০১-২০২০ খ্রীঃ তারিখে দায়িত্ব গ্রহণের পরে কার্যক্রম পরিচালনায় প্রাক্তন সেক্রেটারি এমদাদ হোসেন মালেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মি. জোনাস ঢাকী বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচার ও ষড়যন্ত্রের কারণে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনায় নানা প্রকার বাঁধার সম্মুখিন হতে হচ্ছে এবং কালব ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
ভাইস চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারীর খোলা চিঠি এবং কালবের ইন্টারনাল অডিট রিপোর্ট এর তথ্য অনুযায়ী, ২৮-১২-২০১৯ তারিখে নির্বাচনের পূর্বে চেয়ারম্যান মি. জোনাস ঢাকী ও প্রাক্তন সেক্রেটারি এমদাদ হোসেন মালেক ক্যাশ থেকে বোর্ডের অনুমোদন না নিয়েই ৩২,৮০,৩৭৬/- টাকা অগ্রীম নিয়েছেন। কোন অগ্রীম ভাউচারেও স্বাক্ষর করেননি।
নির্বাচনের পরের দিন ২৯-১২-২০১৯ তারিখে উক্ত ৩২,৮০,৩৭৬/- টাকা সফ্টওয়্যারে স্টাফদের বোনাস দেয়ার কথা বলে একটি ভূয়া ভাউচার পোস্টিং দিয়ে উক্ত ক্যাশ এডজাস্ট করে দিয়েছেন।
স্টাফদের বোনাস দেয়ার নাম করে তারা দুইজনে ৩২,৮০,৩৭৬/- টাকা আত্মসাৎ করে স্টাফদের সাথে চরম প্রতারণা করেছে।
অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি উক্ত ৩২,৮০,৩৭৬/-টাকার বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছেন, প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতি বোর্ড সভায় উক্ত বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আলোচ্যসূচী থাকলেও সময়ের অজুহাত দিয়ে উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিয়ে টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্য সময় পার করা হচ্ছে।
করোনাকালীন প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রতিবেদন ছাপানোর জন্য কালব এর বর্তমান কোন কর্মকর্তার বক্তব্য না থাকা সত্বেও চেয়ারম্যানের একক অনুমোদন বিল প্রদান করা হয়েছে।
২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের অডিট রিপোর্টে ঢাকী-মালেক তাদের বিরুদ্ধে অনেক দায় আসার কথা ছিল, কিন্তু চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী বোর্ডের সাথে কোন আলোচনা না করেই অনৈতিক লেনদেন করে তাদের বিরুদ্ধে কোন দায় না আসার বিষয়ে অডিটরকে প্রভাবিত করে।২০১৮-১৯ অর্থ বছরের অডিট রিপোর্ট পযালোচনা করে তার প্রমানও পাওয়া গেছে।
এছাড়া, বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ডিএম-দের ট্রান্সফার করা হবে, এইচআর বিভাগ থেকে ট্রান্সফার প্রস্তাব প্রস্তুত করে এইচআর বিভাগ, জিএম এবং সেক্রেটারির স্বাক্ষর নিয়ে চেয়ারম্যানের অনুমোদনের জন্য দেয়া হলে চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী এইচআর বিভাগকে দিয়ে উক্ত প্রস্তাবে সেক্রেটারির স্বাক্ষর বাতিল করে তার একক স্বাক্ষর করেন। উপ-আইন অনুযায়ী নথিপত্রে সেক্রেটারির স্বাক্ষর আবশ্যিক থাকলেও সেক্রেটারির স্বাক্ষর বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান একাই স্বাক্ষর করেন।
অন্যদিকে ২৮-১২-২০১৯ তারিখে নির্বাচনের পরে ০১-০১-২০২০ তারিখে বিগত বোর্ড বর্তমান বোর্ডের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের অডিট সম্পন্ন হয়েছে ৩০-০৯-২০২০ তারিখে। একাউন্টসে চেয়াম্যান জোনাস ঢাকী, ট্রেজারার এম জয়নাল আবেদিন স্বাক্ষর করেছে, সাথে অবৈধভাবে প্রাক্তন সেক্রেটারি এমদাদ হোসেন মালেক- এর স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। ০১-০১-২০২০ তারিখের পরে প্রাক্তন সেক্রেটারির স্বাক্ষর করার কোন অধিকার না থাকা সত্বেও বর্তমান সেক্রেটারির স্বাক্ষর না নিয়ে প্রাক্তন সেক্রেটারির স্বাক্ষর নিয়ে চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী ও ট্রেজারার এম জয়নাল আবেদিন সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচার ও অবৈধ কাজ করেছে ।কালবের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির তদন্তে উপরোক্ত অভিযোগ সমুহের প্রমান পাওয়া গেছে।
নির্বাচনের পূর্বে জোনাস ঢাকী ও এমদাদ হোসেন মালেক- এর বিরুদ্ধে নিবন্ধক বরাবর পূর্বেও বোর্ডের একজন পরিচালক অভিযোগ করেছিল, এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছে এবং তদন্ত রিপোর্টে জোনাস ঢাকীর বিরুদ্ধে অনেক আর্থিক দায় নির্ধারণ হয়েছে। অধিকতর তদন্ত করার জন্য ৪৯ ধারায় তদন্ত করার সুপারিশ করেছে। সুপারিশ অনুযায়ী নিবন্ধন মহোদয় ৪৯ ধারায় ১০ বছরের তদন্ত করার জন্য আদেশ দিয়েছেন।
বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত হয়েছে- তদন্ত কমিটিকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী ৪৯ ধারায় তদন্ত বাতিল করার জন্য হাইকোর্টে রিট করেছেন। তিনি যদি নির্দোষ হন তাহলে কেন তিনি তদন্ত বাতিল করার জন্য রিট করলেন। রিট করে তিনি যে দোষি তা তিনি নিজেই প্রমাণ করলেন বলে সংশ্লিষ্টগণ মহল মনে করেন।
বোর্ড সভায় এসকল বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করা হলেও কোন সফল হয়নি বরং মারমুখি আচরণ করা হয়। নানারকম ষড়যন্ত্র করা হয়।
এমতাবস্থায় সমবায়ীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কালবের চুড়ান্ত ধ্বংসের পূর্বে দুর্নীতিবাজ সাইমন এ. পেরেরার মত চেয়ারম্যান পদ থেকে জোনাস ঢাকী’র অপসারন দাবি করেছেন কালবের সচেতন ডেলিগেটগণ।