শুভ জন্মদিন বাবা

অন্যান্য

শ্যামল সেন গুপ্তা : আজ থেকে ১০৮ বছর পূর্বে (১৯১৩, ২১ মে —–২০২১)আমাদের বাবা ব্রাহ্ম মূহূর্তে জন্ম গ্রহন করেছিলেন বৃহত্তর ফরিদপুরের, অধুনা মাদারীপুর জেলার “পাঁচ্চর” গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত “বৈদ্যব্রাহ্মন” পরিবারে।


বিজ্ঞাপন

ছোটবেলা থেকেই স্বদেশী সংগে চলাফেরার কারনে বড়ভাই তৎকালীন ঢাকার এসডিও/ মহকুমা প্রশাষক নগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত গ্রামের স্কুল থেকে কোলকাতার মিটিয়াবুরুজের ” সেন্ট বার্নামাস স্কুলে” পাঠিয়ে দেন, পড়াশোনার মনোযোগের জন্য।

কিন্তু পরবর্তিতে আবার নারায়নগন্জে আগমন এবং জয়গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন, ১৯৩৫ সনে। কিন্তু বারবার পড়াশোনার ব্যাঘাত হয়েছে স্বদেশী,র সংগের কারনে।

“চারনকবি ওহিভূষনের ” গান শুনার জন্য বিভিন্ন যায়গায় চলে যেতেন।

পরবর্তিতে বাবার মামা উপমাহাদেশের বিখ্যাত আয়ূর্বেদিক চিকিৎসক ঁ কবিরাজ বিপীন কুমার সেনগুপ্তের বকুনিতে জে,বি,রায় অষ্টাংগ আয়ূর্বেদ মেডিক্যাল কলেজ ও হসপিটালে ভর্তি হন, ১৯৩৮ সনে, গ্রাজুয়েশান শেষ করেন (১৯৩৮—১৯৪৪)০৬ বছর পর কৃতিত্তের সহিত। বিশেষ কৃতিত্বের জন্য ” বৈদ্যশিরোমনি” এম,এ,এস,এফ ডিগ্রী অর্জন করেন।

পরবর্তিতে জে,বি,রায় ষ্ট্রেট আয়ূর্বেদ মেডিক্যাল কলেজে, ০৬ মাস বর্হিবিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন, এছারা উক্ত কলেজের প্রভাষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন, বাবা আর তার ঘনিষ্ট বন্ধু ভরত চ্যাটার্জী, কিন্তু দুজনেই স্বদেশী ছিলেন বলে, বাবা পূর্ববংগে আর ভরত চ্যাটার্জী কোলকাতায় ই থেকে যান। বাবার আরেক ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন, চট্রগ্রামের রাউজানের প্রধীর কুমার দাশগুপ্ত।
বাবা এই দুই বন্ধুর কথা প্রায়শই বলতেন। আরো ছিলেন বিখ্যাত আয়ূর্বেদিক চিকিৎসক, মোমেনশাহী আয়ূর্বেদিক কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ চিত্ত চন্দ্র নাথ।
তৎকালীন জে,বি,, র অধ্যক্ষ প্রানাচার্য ডা. নলিনী রন্জন সেনগুপ্ত এম,ডি (ইংলেন্ড), বাবা কে খাঁটিবৈদ্য” বলে পিঠে হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন।

আমার স্বর্গত পিতা, খুব অভাগা ছিলেন। পিতৃস্নেহ পাননি, কারন বাবার জন্মের ০৫ মাস পূর্বে ই হঠাৎ On duty, stroke করে আমাদের ঠাকুরদাদা/Grandfather প্রসন্ন কুমার সেনগুপ্ত Dist. Jailer , Pabna, District. মারা যান। উপমহাদেশের অত্যন্ত সৎ, মেধাবি পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তৎকালিন সময়ে, বৃষ্টিশ রাজ আমার ঠাকুরদাদার পরিবার কে ৫০০০ রুপি প্রদান করেন।

ছোট বেলা থেকে বাবা সাধু সংগ করতেন, বহু নাগা সাধুর সংষ্পর্শে এসেছিলেন, বহু নাগাসাধুদের প্রদেয় ঔষধ রয়েছে আমাদের পরিবারে, যা খুবই কার্যকর।

শুভাশিষ পেয়েছেন, শ্রীরামকুৃষ্ঞ দেবের পার্ষদ স্বামী বিরজানন্দ মহারাজের, উনি মাথায় হাত দিয়ে বাবাকে বলেছিলেন ” যা করছো বাবা, তাই করে যাও, লোক দেখে মোহিত হয়ো না” ( ১৯৪৪ বেলুর মঠ)।

এছারা শ্রী রাম ঠাকুরের স্বাক্ষাৎ পেয়েছেন তিন বার, ঠাকুর বাবাকে নিজে প্রসাদ দিয়েছেন ( নারিকেল কোড়া+ মিশ্রী), ১৯৪৫।
এছারা, শ্রীরাম ব্রহ্মচারী, স্বামী স্বরুপানন্দজী, লক্ষন সাধু, দ্বিগবিজয় সাধু, ব্রজানন্দজী,
পেশোয়ারের একজন ফকির ও আসতেন বাবার কাছে।
বাবা, আমৃত্যু আয়ূর্বেদের সেবা করে গেছেন।
বাবাকে দেখেছি, রোগীর নাড়ী পরীক্ষা করে মৃত্যু নিশ্চিৎ বলেছেন, মৃতবৎস্যার, সন্তান কী ভাবে হবে তার চিকিৎসা দিয়েছেন, দেখেছি বেশ কিছু নিঃসন্তান দম্পত্তির সন্তান কী ভাবে হবে তার চিকিৎসা দিতে।

বাবা, মুখ দেখে রোগীর মনোভাব / রোগ বলেদিতে পারতেন, শুধু নাড়ী পরীক্ষা করে বলেদিতেন, এই ঔষধ গুলো লিখে দে। রোগী হতোবাক, হতো।

বাবা একাধারে চিত্রশিল্পী, বংশিবাদক, এবং সংগীত প্রেমী ছিলেন। আমরা তার গুনের ধারে কাছেও নাই।

বাবা ইহধাম ত্যাগ করে চলে যান ২০১১ সালে ০৩ ফেব্রুয়ারী, বৃহষ্পতিবার বিকেল, ৫.০৭ মিনিটে, ৯৮ বছর বয়সে, স্বজ্ঞানে, বলে কয়ে।

যাক্, আমরা অত্যন্ত ধন্য এমন পিতার সন্তান হতে পেরে।
বাবা, তুমি বেঁচে থাকো, তোমার কর্মে, তোমার আদর্শে যেন আজীবন চলতে পারি।
নির্মোহ, সদালাপি, নিরহংকার পিতাকে জানাই প্রনাম।