নিজস্ব প্রতিবেদক : মৃত এক বাংলাদেশি নারীর নাম ব্যবহার করে রমজান বিবি নামের রোহিঙ্গা নাগরিক পান জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ। শুধু তাই নয় জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার পর বাংলাদেশি পাসপোর্ট করার জন্যও কাগজপত্র তৈরি করেছিলেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে ওই নারীসহ চার মিয়ানমার নাগরিকের একটি দল ধরা পড়েছেন। দুর্নীতির মামলার আসামি হয়েছেন নির্বাচন অফিসের চার কর্মচারী এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ মোট ১১ জন।
মঙ্গলবার (১৫ জুন) দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের জনসংযোগ দফতর থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
মামলার আসামিরা হলেন- হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন অফিসারের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর (অস্থায়ী) মো. সাইফুদ্দিন চৌধুরী, কেরানীগঞ্জের লালবাগ উপজেলা নির্বাচন অফিসের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট (অস্থায়ী) সত্য সুন্দর দে, ডবলমুড়িং উপজেলা নির্বাচন অফিসারের অফিস সহায়ক মো. জয়নাল আবেদীন, চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মো. নুর আহম্মদ, হাটহাজারী ৩ নং মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নুরুল আবছার, সদস্য নুরুল ইসলাম ও সাবেক জন্মসনদ প্রস্তুতকার মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন।
রোহিঙ্গা চার নাগরিক হলেন- রমজান বিবি ওরফে লাকী, লাকীর কথিত পিতা মো. আ. ছালাম, ছালামের ছেলে মোহাম্মদ আজিজুর রহমান এবং লাকীর স্বামী সৌদি প্রবাসী রোহিঙ্গা নাগরিক নাজির আহম্মেদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া পরিচয় ও নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, জাতীয়তা সনদপত্র ও জন্মনিবন্ধন তৈরি করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরির চেষ্টা করেছেন। এর আগে রোহিঙ্গা নাগরিক রমজান বিবি ২০১৯ সালের জুলাই মাসে স্থানীয় এক মৃত নারী লাকীর নাম ধারণ করে হাটহাজারী ৩ নং মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ হতে নাগরিক সনদপত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করেন। সেখানে অপর রোহিঙ্গা আ. ছালামকে পিতা পরিচয় দিয়েছেন এবং সৌদি প্রবাসী রোহিঙ্গা নাগরিক নাজির আহম্মেদকে স্বামী হিসাবে উল্লেখ করেছেন। নাজির আহম্মদ প্রকৃত স্বামী হলেও ছালাম তার প্রকৃত পিতা নন।
এর আগে আ. ছালাম ও ছেলে আজিজুর রহমান জাল নথিপত্র বানিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। একই প্রক্রিয়ায় সৌদি প্রবাসী রোহিঙ্গা নাগরিক নাজির পাসপোর্ট তৈরি করেছিলেন বলেও অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরিতে ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও মেম্বার এবং নির্বাচন অফিসের ওই কর্মচারীরা সহায়তা করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।