বিচ্ছিন্ন ঢাকা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

৭ জেলায় কঠোর লকডাউন
তৃতীয় ধাপের নমুনা শুরু
ফাইজারের টিকা নিতে ভিড়
শিক্ষা ক্ষেত্রে বাড়ছে উদ্বেগ
আরও ৭৮ জনের মৃত্যু

 


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোভিড-১৯ তান্ডবে সারাদেশের সাথে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে ঢাকা। মঙ্গলবার থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকার চারপাশের ৭ জেলায় কঠোর লকডাউন দেয়া হয়েছে। এসময়ে ওইসব জেলায় গণপরিবহনও চলবে না। সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওইসময়ে এসব জেলাতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধু পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকবে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৬২৬ জনের। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৩৬ জন। মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩০৪ জনে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর তিনটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসের ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। টিকা নিতে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভিড় করছেন অনেকে। প্রথম দিন এই টিকা পাচ্ছেন ৩৬০ জন। টিকা নিতে প্রতিটি কেন্দ্রেই ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউটের পরিচালক ফারুক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেও টিকা পাননি এমন ১১৫ জনকে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। এই ১১৫ জনের মধ্যে যারা আসবেন তাদের সবাইকেই ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে।
করোনা ঠেকাতে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলে ৭ জেলাসহ গোটা দেশ হতে একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে ঢাকা এমন মন্তব্য করে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, লকডাউন চলাকালীন শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা যেমন- কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস/ জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাকগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
তিনি বলেছেন, জেলাগুলোতে সরকারি-বেসরকারি অফিসসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে। মানুষও যাতায়াত করতে পারবে না। মালবাহী ট্রাক এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কিছু চলবে না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলাগুলো ব্লকড থাকবে, কেউ ঢুকতে পারবে না। জেলাগুলো হলো- নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ী।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার এবং ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জরুরি বৈঠকে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজকের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ঢাকাকে আমরা একটু কাট-অফ (বিচ্ছিন্ন) রাখতে চাই অন্য জেলার সঙ্গে। ঢাকাকে শুধু নিরাপদ নয়, ঢাকার সঙ্গে কমিউনিকেশনটা যদি কাট-অফ হয় তাহলে এমনিতেই মুভমেন্ট অনেক কমে যাবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের মংলা, যশোর পৌরসভা, অভয়নগর, বেনাপোল, শার্শা, ঝিকরগাছা, কুষ্টিয়া সদর, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, মেহেরপুরের পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড, মাগুরা পৌরসভা, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, নাটোর পৌরসভা, সিংড়া, বগুড়া পৌরসভা, জয়পুরহাট পৌরসভা, কানাই, পাঁচবিঘা, নওগাঁর প্রতিটি উপজেলায় স্থানীয়ভাবে লকডাউন চলছে।
শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই
চলমান লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এমন অভিযোগ এখন প্রায় সব অভিভাবকদেরই। বিশেষ করে লকডাউনে বন্দি থেকে ছেলে-মেয়েরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রায় সবাই।
যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার না কমলে ছুটি ফের বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সরকারি বিধিনিষেধ ও ঈদুল আজহার সঙ্গে মিলে রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আরো এক মাস বাড়তে পারে। সে হিসেবে আগামী জুলাইয়েও খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
৩০ জুনের পর ছুটি কতদিন বাড়তে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, চলতি সপ্তাহ করোনা মোকাবিলায় সরকারের গঠিত পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ সপ্তাহে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
আর এসব খবর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আরো ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একদিকে শিক্ষার্থীদের মাঝে একাকিত্ব, স্মার্টফোন, ভিডিও গেমস এবং ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি বাড়ছে। এতে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। কারণ এর ফলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর কেটে গেছে প্রায় ১৬ মাস। ফলে অনাগত ভবিষ্যতে অনিশ্চিত শিক্ষাজীবন, নানাবিধ পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত শিক্ষার্থীদের ঘিরে ধরেছে হতাশা ও বিষণœতা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি ও হতাশায় ভুগছেন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।
তাদের অনেকেই জানান, বন্ধের প্রথম অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে গিয়ে নিশ্চিন্তে থাকলেও এখন সবকিছু খুলে দিলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলায় চরমভাবে হতাশ। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, যাদের সিংহভাগই টিউশনি অথবা খ-কালীন চাকরির সামান্য টাকায় নিজের চলাফেরা ও পড়াশোনার খরচ নির্বাহ করতে হয়। কিন্তু এই দীর্ঘ ছুটিতে একদিকে হারিয়েছেন আয়ের উৎস, অন্যদিকে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিক্ষাজীবন।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২১ সালেও হচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। তবে গতবছরের মতো অটোপ্রমোশন না দিয়ে এবার হোমওয়ার্কের মাধ্যমে মূল্যায়ন করে পরবর্তী শ্রেণিতে প্রমোশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কোন পদ্ধতিতে তাদের পরবর্তী ক্লাসে প্রমোশন দেওয়া হবে তার সারসংক্ষেপ তৈরির কাজ শুরু করেছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পদ্ধতি নির্ধারণ করে খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে অনুমোদনের জন্য। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেলে জুলাই মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আগেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, এবারের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষাও হবে না। একই রকম সিদ্ধান্ত হতে পারে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ব্যাপারেও। এ দুটিই অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা।
গতবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে পিএসসি, জেএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। পিএসসি ও জেএসসি শিক্ষার্থীদের অটো প্রমোশন দেওয়া হয়। আর এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি শিক্ষার্থীদের ফলাফল দেওয়া হয়।