জলবিদ্যুৎ আমদানির চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষ

এইমাত্র জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করবে সরকার। এলক্ষ্যে একটি চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করেছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। জুলাই মাসে দেশটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি সামনে আসে ২০১৬ সালে। ওই বছর দেশটির জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী জনার্দন শর্মার ঢাকা সফরের সময় বিষয়টি অনেকটাই চূড়ান্ত হয়। এরপর দীর্ঘ সময় কেটে যায়। ২০১৯ সালে নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, নেপালে আপার কার্নালি হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্ট থেকে ভারতের মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করবে সরকার। এজন্য ২৫ বছরে ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। কার্নালি নদীর উজানে রফতানির উদ্দেশ্যে ৯০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে ভারতের জিএমআর কোম্পানি।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, জিএমআর এর সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে ওই কোম্পানি ভারতে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে। তিনি বলেন, মাত্র নেপালের সঙ্গে শুরু হয়েছে, ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ রফতানির চুক্তিও বাংলাদেশ করতে পারবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। যা দেশে বিদ্যুতের মোট চাহিদার অর্ধেকের মতো। বাংলাদেশ এরমধ্যেই ভারত থেকে ১৩শ’ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ ক্রয় করছে। তারপরেও দেশটি থেকে বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এ খাতে একটি পারস্পারিক বিনিয়োগের সুযোগ তৈরিও উদ্দেশ্য।
নেপাল সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশটিতে চাহিদা পুরনোর পর যে পরিমান বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকবে, তা বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে বিক্রি করতে পারবে নেপালের বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হলে দুটি দেশ থেকে বিদ্যুৎ কিনতেও পারবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার এবং ভারতের অরুনাচল মিলিয়ে এক লাখ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই সম্ভাবনার সামান্যই ব্যবহার হচ্ছে। দেশগুলো এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে এ অঞ্চলের জ্বালানি সমস্যার সমাধান হবে।
বাংলাদেশে যে কয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে তারমধ্যে মাত্র একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। চট্টগ্রামের কাপ্তাই লেকে অবস্থিত কেন্দ্রটি থেকে মাত্র ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। তাও বর্ষা মৌসুমে। শুষ্ক মৌসুমে পানি কম থাকায় পূর্ণ মাত্রায় চালানো সম্ভব হয় না। জানা গেছে, নানাভাবে জরিপ অনুসন্ধান করেও দেশে নতুন করে কোনো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের স্থান মেলেনি। তাছাড়া এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেশি বরং আমদানিতে কম। সব দিক বিবেচনা করেই সরকার জলবিদ্যুৎ আমদানির পদক্ষেপ নিয়েছে।


বিজ্ঞাপন