রিফাত হত্যায় জড়িতরা সরকারি দলের হলেও রেহাই পাবে না

অপরাধ জাতীয় ঢাকা রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতরা সরকারি দলের হলেও রেহাই পাবে না বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নয়জন গ্রেফতার হয়েছে। আমার বিশ্বাস, বাকিরাও অচিরেই গ্রেফতার হয়ে যাবে। গ্রেফতারের জন্য সিরিয়াসলি অভিযান চলছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এ হত্যাকা-ের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত, তারা যদি সরকারি দলেরও কেউ হন; রেহাই পাবে না। এটা পুলিশকে জানানো হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সরকারের মনোভাব জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রিফাত হত্যায় জড়িতদের সরকারি দলের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে আসছে- এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। এর অর্থ হচ্ছে, দেশের যিনি সরকার প্রধান তিনি এ ক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতায় রয়েছেন। হলি আর্টিজানের পর সরকার জঙ্গিবাদ নিয়ে স্বস্তিতে আছে কি- প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমার মনে হয়, শ্রীলংকার ঘটনার পর কেউই মনে করছে না তারা স্বস্তিতে আছে। টেরোরিজম এখন নরওয়ের মতো দেশেও হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের মতো দেশে মসজিদে হামলা হচ্ছে। লন্ডন-ইউরোপ-স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কান্ট্রি; কেউই তো এখন মুক্ত নয়। তামিল বিদ্রোহ দমনের পর শ্রীলংকাকে মনে করা হয়েছিল শান্তিপূর্ণ দেশ। সেই শ্রীলংকা তো শান্ত থাকলো না। কাজেই এ ব্যাপারে আমরা আতঙ্কিত নই, তবে সতর্কতা আছে। নবম ওয়েজ বোর্ডের বিষয়ে এ কমিটির চেয়ারম্যান ওবায়দুল কাদের বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই দিয়ে দেবো। এটা ঝুলিয়ে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটা কি জুলাইয়ের সধ্যে সম্ভব- প্রশ্নে বলেন, সম্ভব। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি জনগণের জন্য বোঝা কি-না- প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কিছুটা অস্বস্তির বিষয় তো অবশ্যই আছে। তবে জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের এবং এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের যে বক্তব্য সেটা হচ্ছে, আগে এলএনজি আমদানি প্রতি ইউনিট গ্যাসের মূল্য ৭ টাকা ৮০ পয়সা ছিল, বিক্রয় মূল্য ৭ টাকা ১৭ পয়সা। এ হিসাবে প্রতি বছর লোকসান প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে প্রতি ইউনিট এলএনজি আমদানি মূল্য ৩৯ টাকা, ব্র্যান্ডিং মূল্য ১২ টাকা ৫০ পয়সা। এ হিসাবে মাসে এক হাজার ৮৬০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। এখানে মূল্য সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল, সেটাই করা হয়েছে। আমি যতোটুকু জেনেছি, এ মূল্য সমন্বয়ের পরও সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকে বিএনপি মহাসচিব গণবিরোধী আখ্যা দেওয়ার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা বিরোধীদলের ভাষা। বিরোধীদল গণবিরোধী বলবে এটাই স্বাভাবিক, বাস্তবতা ভিন্ন। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকেও কি আপনি জনবান্ধব বলবেন- প্রশ্নে তিনি বলেন, জনবান্ধবের জন্য তো দাম বৃদ্ধি হয়নি। এটা প্রাইস সমন্বয়। দেশ তো চালাতে হবে। গ্যাসের সংকট আছে, এটা বাস্তবতা। অস্বীকার করার তো উপায় নেই। মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর একটা সংবাদ এসেছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনি কীভাবে নিউজ পেলেন। আমি জেনারেল সেক্রেটারি জানি না। আমাদের স্পেক্টেকুলেশন আর বাস্তবতার মধ্যে একটা পার্থক্য থাকতেই পারে। ফেসবুকে অনেকে বাহাউদ্দিন নাসিমকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন- এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাহাউদ্দিন নাসিম তো কাল আমার সামনে ছিল। ফুল পেয়েছে আমি জানি না তো। বাহাউদ্দিন নাসিম স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাচ্ছেন বলে তার সমর্থকেরা কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক কিছুই হতে পারে। এটা (পরিসর বাড়ানো) এখনো গুঞ্জন-গুজবের পর্যায়ে আছে। প্রাইম মিনিস্টার তো আজ দেশের বাইরে যাচ্ছেন। কিছু হলে সেটা অবশ্যই জেরারেল সেক্রেটারি অব দ্য পার্টি হিসেবে আমি জানবো। সে ধরনের কিছু এখনো আমি জানি না। কেবিনেট সাফল-রিসাফলের বিষয়টা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। আমার মনে হয় কিছুকিছু পদ-পদবি এখনো খালি আছে। কাজেই এখানে রিসাফলিংয়ের চেয়ে এক্সপাংশনের বিষয়টাই ফোকাসড। এক্সপান্ড হতে পারে। যেমন- মহিলা ও শিশু, এখানে মন্ত্রী নেই। ওবায়দুল কাদের বলেন, ছয় মাসে তো একজনের কর্মকা–পারফরমেন্সের মূল্যায়ন করা যায় না। অন্তত এক বছর, দেড় বছর, দু’বছর যাওয়ার আগে; এসব বিষয়গুলো এখন আছে। এখন এক্সপাংশন হবে। রদ-বদল হয়তো কারো দপ্তর পরিবর্তন হবে, এমন হয়ে গেছে। কিছু মাইনর একটা চেঞ্জ হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৭ ফেব্রুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন। শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় বর্তমানে ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিন জন উপ-মন্ত্রী রয়েছেন। তিন মাসের মাথায় মন্ত্রিসভায় সামান্য রদবদল আনা হয়। সে সময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। মন্ত্রিসভার পরিসর সহসাই বাড়ছে কিনা- প্রশ্নে কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী চীন থেকে ফিরে এলে তখন এটা জানবো। আমার মনে হয় না খুব সহসাই হচ্ছে। আপনি চীনে যাচ্ছেন- প্রশ্নে কাদের বলেন, আমি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি, আমাকে দেশেই থাকতে হবে। প্রয়োজন না থাকলে তো আমাদের যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করিনি, আমার যাওয়ার প্রয়োজনও নেই। সেখানে দু’একটি বিষয় আছে, সচিবরা গেলেই চলবে। আমাদের সড়ক ও সেতু বিভাগের সচিব যাচ্ছে। চীনের সঙ্গে কানেকটিভি সড়ক হওয়ার কথা ছিল- এটার অগ্রগতি নিয়ে কাদের বলেন, প্রজেক্ট আছে। এগুলো আলাপ-আলোচনা করে কিছু প্রজেক্টের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতাবিরোধীদের পরিবারের সদস্যরা যুক্ত হতে পারবে কিনা- এ নিয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ ব্যাপারে অবস্থান একেবারেই স্পস্ট। স্বাধীনতাবিরোধী, সাম্প্রদায়িক কাউকে স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেইনি। তার মানে হচ্ছে এদের ব্যাপারে আমরা এদের কোনো অবস্থাতেই আমাদের দলের বা সরকারের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ সমর্থন করছি না, বিরোধিতা করছি। সে সিদ্ধান্ত থেকে আমরা এখনো সরে আসিনি। যাচাই প্রক্রিয়া নিয়ে কাদের বলেন, দলীয়ভাবে ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খতিয়ে দেখবো। কাদের জানান, ১ থেকে ২০ জুলাই সদস্য সংগ্রহের বই সংগ্রহ করবে, ২১ তারিখ থেকে সদস্য সংগ্রহ করবো। মূলত এখানে ফোকাস হচ্ছে- জাতীয় নির্বাচন ও মেয়র ইলেকশনের মধ্যে দিয়ে বহু নতুন মুখ আওয়ামী লীগের মিছিলে যোগ দিয়েছে, নৌকার সমর্থন করেছে এবং নৌকার প্রার্থীদের ভোট দিয়েছে। এই নতুন মুখদের দলের সদস্য হিসেবে নিতে চাই, যদিও তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড, তাদের আদর্শগত সমস্যা না হয়- এগুলো দেখেশুনে সদস্য সংগ্রহ শুরু করবো।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *