বিশেষ প্রতিবেদক : আইনী জটিলতায় বিচারের দীর্ঘসুত্রিতার পাশাপাশি জামিনে মুক্তি পাওয়ার সুযোগে চট্টগ্রামে আবারো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরী।
গত ৯ বছরে হিযবুত তাহরীর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৪০টি মামলা হলেও এর একটি’ও নিষ্পত্তি হয়নি। এর মাঝে জামিনে মুক্তি পেয়ে গেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া একশ’র বেশি সদস্য। এর মধ্যে তৎপরতা চলছে ৫ই জুলাই অন লাইনের সম্মেলন আয়োজনের।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মাঝে’ও ৫ই জুলাই অনলাইন সম্মেলনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় অনেকটা গোপনে সেই আয়োজনের পোষ্টার লাগিয়ে যায় হিযবুত তাহরীর সদস্যরা। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ এসে ছিঁড়ে ফেলে সেই পোষ্টার। আর গত কিছু দিন ধরেই চলছে পুলিশ-হিযবুত তাহরীর এই লুকোচুরি।
সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেফতার হওয়া হিযবুত তাহরীর সদস্যরা স্বীকার করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি নিজেদের সংগঠিত হওয়ার তথ্য।
সিএমপি কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার পলাশ কুমার নাথ বলেন, হিজবুত তাহরীতে যারা সদস্য হতে আসেন,তারা মূলত হিজবুতের পরবর্তী সদস্যর হিসেবের তাদের পরিচিত শিক্ষক, বন্ধ অন্য যে কাউকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেন।
সিএমপি কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘পোস্টারিং করার সময় আমার বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে, এবং আমি কিছু না পেয়েছি তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বিগত ২০১০ সাল থেকে গত নয় বছরে চট্টগ্রামে হিযবুত তাহরীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ৪০টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। আর এসব ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে হিযবুত তাহরীর ১২৬ জন সক্রিয় সদস্যকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যেমন এসব মামলার একটিরও বিচার শেষ হয়নি। তেমনি জামিনে মুক্তি পেয়ে গেছে অধিকাংশ হিযবুত তাহরীর সদস্য।
সিএমপি অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ৩২ টির মামলার মধ্যে দুইটি মামলা এখনো তদন্তাধীন আছে। আর বাকি মামলা গুলোর চার্জশিট চলে আসছে। এগুলো বিচারাধীন আছে।
তবে সরকার নিয়োজিত কৌসুলির দাবী, জঙ্গি ঘটনার বিচারাধীন মামলাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী থাকে তদন্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু তারাই মামলায় সাক্ষ্য দিতে না আসায় দীর্ঘ সূত্রিতার সৃষ্টি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন আহমেদ বলেন, দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কোর্টকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের রাষ্ট্র পক্ষ থেকে উদ্যোগী হতে হবে। যেনো সাক্ষীগুলো আসে। সেই তদবিরগুলো আমাদের পক্ষ থেকে করে সাক্ষীদের এনে এই মামলাগুলো তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।
জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে বিগত ২০১০ সালে নিষিদ্ধ হওয়ার পর সংগঠনটি ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো অন লাইন সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানের জানান দিয়েছিলো। এবার দ্বিতীয় বারের মতো অর্থনৈতিক সম্মেলন করতে যাচ্ছে জঙ্গি সংগঠনটি।