চাঁদায় দিশেহারা পরিবহন শ্রমিকরা

অপরাধ রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর অনুমতি পেয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে চলতে শুরু করেছে গণপরিবহন। তবে করোনাকালে লকডাউনে কেউ পাশে না থাকায় বেশ কষ্টে সময় কেটেছে এই খাতের হাজার হাজার শ্রমিকের। তাই ঈদের আগে কয়েকদিনের জন্য পরিবহন চালানোর অনুমতি পেলেও তাতে খুব একটা খুশি নন শ্রমিকরা। এরমধ্যে লাইন খরচসহ নানা নামে গাড়ি চলতে তাদের প্রতিদিন সড়কে যে চাঁদা দিতে হয় তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন পরিবহন শ্রমিকরা। দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে আপাতত যেন এই চাঁদা তোলা বন্ধ হয় সেই দাবি করছেন শ্রমিকরা।
গত বৃহস্পতিবার থেকে গণপরিবহন চলতে শুরু করে ঢাকাসহ সারাদেশে। দুই একটি কোম্পানির গাড়ির শ্রমিকরা প্রথম দিনে রাস্তায় নানা খাতের নামে চাঁদা দেয়ার থেকে রক্ষা পেলেও অনেকেই মুক্তি পাননি। বরং চাঁদার টাকা না দিতে চাইলে শ্রমিকদের দিকে তেড়ে আসার ঘটনাও ঘটেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলিস্তানে এমন ঘটনা ঘটেছে। এসময় চাঁদা না দিলে রাস্তায় গাড়ি চলতে পারবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে গাজীপুরা রুটে চলা ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের একটি গাড়ি দিনে রাস্তায় চলতে ৮৫০টাকা চাঁদা দিতে হয়। দিনে আয় যতই হোক চাঁদা দেয়ার হাত থেকে রক্ষা পান না কেউ।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার একাধিক পরিবহন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বললে তারা এমনটাই জানান।
শ্রমিকরা বলছেন, কোরবানির ঈদের সময় মানুষের বেশি চাপ থাকে গরুর হাটে। তাই যাত্রী আগের মতো পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে নিয়ম অনুযায়ী গাড়িতে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চলতে হবে। এই অবস্থায় যদি দৈনিক কয়েকশ টাকা চাঁদা দিতে হয় তাহলে দিনশেষে চলার মতো টাকা রাখা যাবে না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে গাজীপুরা-সদরঘাট রুটে চলা ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের কন্ট্রাকটর নজরুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের সময় কেউ খোঁজ নেয় নাই। খাইয়া, না খাইয়া দিন কাটাইছি। এখন গাড়ি চলা শুরু হলে দেখা যাবে চাঁদা নেয়া শুরু হইছে। এইরকম চললে কি ইনকাম করমু আর কি খামু।
জানা যায়, সারাদেশের মতো ঢাকায় প্রত্যেক রুটের বাস চলাচল করতে মালিক সমিতি, লাইন খরচ এসব অঘোষিত নিয়মের বেড়াজালে শ্রমিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার চাঁদা তোলা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যও এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ আছে।
বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিলেও চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। যদিও গতবছর করোনার সংক্রমণ বাড়ার পর দেয়া লকডাউন শেষে রাস্তায় এই ধরণের চাঁদা আদায় পুরোপুরি বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চাঁদা আদায় বন্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। ফলে বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল চাঁদা আদায়। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই আবার শুরু হয় চাঁদাবাজি।
যে কয়দিন গাড়ি চলবে আবারও চাঁদা দিতে হয় কিনা সেই শঙ্কার কথা শোনা যায় আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের চালক জাকির হোসেনের কাছেও। তিনি বলেন, প্রথম দুইদিনে অল্প কিছু চাঁদা দিতে হয়েছে। সামনে কি হয় জানি না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিক্টর পরিবহনের কন্ট্রাকটর রফিক মিয়া বলেন, সকালে বের হওয়ার পর ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে সিটি করপোরেশনের নামে ৫০টাকা চাঁদা দিয়েছি। রোড খরচের নামে গুলিস্তানে ৫০০টাকা চাইছিল কিন্তু প্রথম ট্রিপে দেয়নি। দেখি দিনের অন্য সময় কি করে।
বাস-মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ খান বলেন, এতটাকা তো চাঁদা তোলার সুযোগ নেই। অভিযোগ শুনলাম আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো। কি ব্যবস্থা নেয়া যায় দেখব।
একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে গাজীপুরা রুটে চলা ভিক্টর পরিবহনের একটি বাস রাস্তায় বের হলে যে পরিমাণ চাঁদা দিতে হয় অনেক সময় দিন শেষে সে পরিণাম টাকা খরচ বাদে আয় করাও সম্ভব হয় না।
তারা জানান, প্রতিদিন একটি গাড়ি থেকে ৫০টাকা দিতে হয় সিটি করপোরেশনের চাঁদা। রোড খরচের নামে গুলিস্তানের পাবলিক টয়লেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন লোক নেন ৫০০টাকা। পুরো রাস্তায় দুই পাশে পাঁচজন করে দশজন লাইনম্যানকে দিতে হয় ২০টাকা করে দুইশ টাকা। এছাড়া আব্দুল্লাহপুরে রাতে গাড়ি রাখার জন্য মাঠ খরচ দিতে হয় ১০০টাকা।
এমন চাঁদার তথ্য শুধু ভিক্টর পরিবহন নয়, ঢাকার রাস্তায় চলা অন্যান্য পরিবহন থেকে প্রকাশ্যে তোলা হয় চাঁদা।


বিজ্ঞাপন