গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর মারা গেছেন

জাতীয়

বেলাল হোসেন চৌধুরী : একুশে পদকপ্রাপ্ত গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজিউন!)। শুক্রবার রাত ১০-৫৬ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ফকির আলমগীরের মত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব।


বিজ্ঞাপন

এর আগে, শুক্রবার রাত ১০টার কিছুক্ষণ আগে হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন তিনি।

করোনা আক্রান্ত ফকির আলমগীরকে গত ১৫ জুলাই রাতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানেই দুইদিন পরে তাকে কোভিড ইউনিটের আইসিইউতে নেওয়া হয়।

তাঁর ছেলে রাজীব জানায়, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর বাবার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৪৫-এ নেমে আসে, যার কারণে চিকিৎসকেরা তাঁকে ভেন্টিলেশনে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

ভেন্টিলেশনে নেওয়ার পর থেকে ফকির আলমগীরের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০-এ উন্নীত হয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। এক সময় রক্তে ও ফুসফুসে ইনফেকশন পাওয়া যায়। রক্তচাপ খুবই নেমে যায়। রক্তে ইনফেকশনের জন্য প্রায় প্রতিদিনই সকালে জ্বর আসছে। শুক্রবার নতুন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে রাতে আবারও অবস্থার অবনতি হয়, শেষ পর্যন্ত করোনার কাছে হেরে যান গণসংগীতের এই কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী।

ফকির আলমগীর ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। রাজপথে বিভিন্ন আন্দোলনে তাকে বহুবার দেখা গেছে। তিনি ষাটের দশক থেকে গণসংগীতের সঙ্গে যুক্ত। ফকির আলমগীর ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেব ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে যোগ দেন।

১৯৭১ সালে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন এ শিল্পী।

ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তার পিতা মোঃ হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেছা। ফকির আলমগীর কালামৃধা গোবিন্দ হাই স্কুল থেকে ১৯৬৬ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তার।

সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে একুশে পদক পান ফকির আলমগীর।
আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন।