মাদক নিরসনে মাদক নীতি

অপরাধ

আজকের দেশ ডেস্ক : মাদক সমস্যা নিরসনে বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্য মডেল হতে পারে পর্তুগাল। পর্তুগালের ড্রাগ নীতি ২০০০ সালে গ্রহণ করা হয় এবং ২০০১ সালের জুলাই মাস থেকে কার্যকর করা হয়। ১৯৯৯ সালে, পর্তুগালের মাদক চিত্র অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর মতো হলেও ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণের ফলে এইচআইভি আক্রান্ত ছিল প্রায় ৪৫% যা ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ মাদকাসক্ত ব্যক্তিই ছিল হেরোইনে আসক্ত। আনুমানিক ১ কোটি জনসংখ্যার দেশে প্রতিবছর নতুন করে মাদক মামলা হতো ২,০০০ টি। পর্তুগালের ড্রাগ নীতির মূলমন্ত্র ছিল মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের অপরাধী হিসাবে বিবেচনা না করে, রোগী হিসেবে তাদের সহয়তা করা। ১০ দিনে যতটুকু মাদক সেবন করা যায়, ততটুকু পরিমাণ মাদক (উদাহরণ স্বরূপ গাঁজা ২৫ গ্রাম, হেরোইন ২ গ্রাম) সহ আটক হলে সাধারণত মাদকসেবী হিসাবে বিবেচনা করা হতো তবে বিক্রি করা অপরাধ হিসাবেই বিবেচিত হতো। সুতরাং ২০০১ সালে পর্তুগাল সরকার মাঝারি থেকে শুরু করে ভয়ানক, সকল প্রকার মাদকের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং বৈধতা প্রদান করে। এক্ষেত্রে কালোবাজারিদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর কোটি কোটি টাকা আইনি যুদ্ধে খরচ করার চেয়ে পর্তুগাল বরং মনোযোগ দেয় পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এবং ক্ষতি হ্রাসের উপর। এর ফলাফল ছিল বিষ্ময়কর। গত ১৫ বছরে পর্তুগালের মাদক সেবনের হার বাড়বে কি, বরং কমে গেছে ২৫-৩০ শতাংশের মতো, যা ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম, যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। শুধু তাই নয়, কমেছে মাদক সংক্রান্ত মৃত্যু এবং রোগের প্রাদুর্ভাব। বিশেষ করে এইচআইভি সংক্রমণ তো বর্তমানে পর্তুগালে নেই বললেই চলে। এর পেছনের কারণগুলো খুবই স্বাভাবিক। যখন অ্যালকোহল বা গাঁজার মতো স্বল্প ক্ষতিকারক মাদকদ্রব্যের উপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তখনই সেবনকারীর অধিকতর ঝুঁকিপ‍ূর্ণ মাদকের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা না থাকলে এরকম হবার সুযোগ নেই। অন্যদিকে আইনি কড়াকড়ি না থাকায় মাদকাসক্তরাও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় যেতে পারে নির্দ্বিধায়। আর নিষেধাজ্ঞা কীভাবে মাদক ব্যবসাকে প্রসারিত করে তার তো প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের মাদকের বিরুদ্ধে আইনি হস্তক্ষেপের ইতিহাস বহু পুরনো। তবে প্রাথমিক সময়ে সবচেয়ে চমকপ্রদ ছিল ১৯২০ সালে সংবিধানের অষ্টাদশ সংশোধনী। আমাদের আলোচনার শুরু সেখান থেকেই। মার্কিন প্রশাসন পাস করে দেশব্যাপী সকল প্রকার নেশাজাতীয় পানীয় উৎপাদন এবং ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করে। এর পেছনে যুক্তি ছিল, অ্যালকোহলের কারণে মার্কিন সমাজে ধর্ষণ, চুরি, বিবাহ বিচ্ছেদ সহ নানা প্রকার স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে। তাই সমাজকে রক্ষা করতে করা হলো নতুন আইন। কিন্তু ফলাফল হলো বিপরীত। এক বছরের মধ্যে আমেরিকায় অ্যালকোহলের গ্রহণের হার আগের চেয়ে দ্বিগুণ হলো। প্রকাশ্যে বিক্রয় করতে না পারায় মদ ও অন্যান্য নেশাজাতীয় তরলের বিশাল কালোবাজার গড়ে উঠলো। আবার সহজলভ্য মাদক ক্রয় করতে না পেরে অনেকে হেরোইন, কোকেন, ফেনিসিডিলের মতো আরো গুরুতর মাদকের উপর নির্ভরশীল হলো। ফলে সমাজে অপরাধমূলক কর্মকান্ডও বেড়ে গেলো। আর কড়াকড়ির কারণে অ্যালকোহলের দাম বৃদ্ধি পেল অনেকাংশে। তাই অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য অনেকে নতুন করে অ্যালকোহল উৎপাদন ও বিক্রয়ের সাথে যুক্ত হলো।
অষ্টাদশ সংশোধনীর বহুমাত্রিক ব্যর্থতায় তা ১৯৩৩ সালেই বাতিল করা হয়। কিন্তু ততদিনে মাদক ব্যবসা এবং মাদক সেবন বহুদূরে পৌঁছে গিয়েছে। তাই আমেরিকার তখন আর মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায়ও রইলো না। আর মার্কিন প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে যত কঠোর হতে লাগলো, মাদক ততো সহজে আমেরিকাকে গ্রাস করে নিতে লাগলো। ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের হাত ধরে শুরু হলো “ওয়্যার অন ড্রাগ” বা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। সে যুদ্ধের ফলাফল- কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে মারিজুয়ানার মেডিসিন হিসাবে ব্যবহারেরর স্বীকৃতি দেয়া হলো, ৪ টি অঙ্গরাজ্যে বিনোদনমূলক ব্যবহারের জন্য মারিজুয়ানা স্বীকৃতি পেল, আর অধিকাংশ অঙ্গরাজ্য একেবারে বৈধতাই দিয়ে দিল। বলে রাখা ভালো, তারা বৈধতা ইচ্ছে করে দেয়নি, বরং অতিরিক্ত টাইট দিতে গিয়ে তাদের বোতলের ছিপির প্যাচই কেটে গিয়েছিল।
ছিপির কীভাবে ঢিলে হয়ে গেল তা একটা উদাহরণ দিলেই টের পাবেন। ১৯৮০ সালে মাদকের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে যুক্তরাষ্ট্রের জেলখানাগুলোতে বন্দী ছিল ৫ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষ। ২০১৪ সালে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৫ লক্ষ ৬১ হাজারে। এর মধ্যে আবার ৭ লক্ষাধিক ছিল কেবলই মারিজুয়ানার আসামী। এবার বুঝুন, মার্কিন অঙ্গরাজ্যগুলো কেন মরিয়া হয়ে মারিজুয়ানার বৈধতা প্রদান করছে। অন্যদিকে মাদকের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন দিনকে দিন কঠোর করা হচ্ছে। যেমন, একবার যদি কেউ মাদক বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের অপরাধে ১ মাসের জন্য হলেও জেল খাটে, তাহলে আজীবন সে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে- ভালো চাকরি পাবে না, ভাতা পাবে না, অনেক কিছুর অনুমতি পাবে না। সামাজিকভাবে হেয় ও অপদস্থ হওয়ার পর তারা অনুশোচনা না করে বরং জড়িয়ে যায় নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ডে।
মার্কিন প্রসাশন সাম্প্রতিককালে অর্থনৈতিকভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা সাজায়। তারা পানির মতো সহজ একটি সূত্র ধরে এগোতে শুরু করে যে, সরবরাহ বন্ধ করে দিলে চাহিদা ও বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ সরবরাহ বন্ধ করতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে মাদকের বাজারে ঘাটতি সৃষ্টি হবে। আর অর্থনীতির চিরন্তর নিয়ম অনুযায়ী, সরবরাহ কমে গেলে চাহিদা বেড়ে যায়, একই সাথে বাড়ে দাম। ব্যাপারটা উল্টো মনে হচ্ছে না? দাম বাড়ছে তো চাহিদা কমবার কথা, তাই না? কিন্তু মনে রাখতে হবে, এখানে পণ্যটি হচ্ছে মাদক। শুধু তা-ই নয়, অনুমোদিত মাদকের উপরেও উচ্চহারে ট্যাক্স বসানো শুরু করে মার্কিন সরকার। কিন্তু একটি সাধারণ বিষয় তাদের চিন্তার বাইরেই রয়ে যায়। সেটি হচ্ছে, “দাম বেড়ে গেলে চাহিদা কমে যায়”, অর্থনীতির এই চিরন্তন সূত্র মাদকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ৩ টাকার বেনসন সিগারেট বর্তমানে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তথাপি এর চাহিদা পূর্বের চেয়ে বহুগুণ বেশি। ঠিক এ কারণেই মার্কিনীদের অর্থনৈতিকভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণের বুদ্ধিও বিপরীত ফলাফল বয়ে আনে। বিক্রেতারা ট্যাক্সের ভার পুরোটাই ক্রেতাদের উপর ছেড়ে দেয়, গড়ে ওঠে কালোবাজার, অধিক মুনাফার জন্য তৈরি হয় নতুন নতুন মাদক উদ্যোক্তা।
এখন অনেকেই ভাবতে পারেন, মাদক কেন সম্পূর্ণরূপে অবৈধ ঘোষণা করছে না আমেরিকা। প্রথমত, মাদকদ্রব্য সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা মানে মাদকের বাজার পুরোটাই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়া। আবার নিষেধাজ্ঞার কারণে, মাদক সরবরাহ করা হয় ভুল লেবেল লাগিয়ে। সংশ্লিষ্ট মাদক বিষয়ক অধিকাংশ তথ্যই নিরাপত্তার খাতিরে গোপন রাখে উৎপাদনকারীরা। ফলে, অধিক লাভ করার আশায় অনেকেই কম খরচে নিম্নমানের মাদক উৎপাদন করবে, যা অনেক সময়ই বিষাক্ত হয়। এতে করে মাদক সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাবে। আবার সকল প্রকার মাদক নিষিদ্ধ হওয়ায় মানে মাদক সরবরাহের খরচ বেড়ে যাওয়া, যেহেতু তা চোরাই পথে অনেক কায়দা করে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ বহন করে স্বপ্লমূল্যের মাদক বিক্রয় থেকে পিছিয়ে আসে বিক্রেতারা। তারা নির্ভর করে দামী মাদকদ্রব্যের উপর, যেগুলো অত্যাধিক ক্ষতিকর। ফলে মাদক সংশিষ্ট রোগব্যাধি বেড়ে যায়। আর দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধির অর্থনৈতিক নিয়মের ব্যাপারটা তো আছেই।
মাদকদ্রব্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দিলে আরো একটি গুরুতর অপ্রত্যাশিত সমস্যা হাজির হবে, তা হচ্ছে কার্টেল। মাদক ব্যবসা এবং উৎপাদন যখন নিষিদ্ধ হবে, আইনশৃঙ্খনা বাহিনীর সাথে সংঘাত যখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হবে- তখন স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায় ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যাবে এবং প্রয়োজন পড়বে অধিক লোকবল। ফলে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করবে, সৃষ্টি হবে কার্টেলের। আর ড্রাগ কার্টেল মানেই সিভিল সার্ভিসে অসীম দুর্নীতি। কার্টেলকে রক্ষা করতে ব্যবসায়ীরা পুলিশ, প্রশাসন থেকে শুরু করে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদেরও বিশাল অঙ্কের ঘুষ প্রদান করবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টাকার অঙ্ক এত বড় যে তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। ফলে শুরু হবে দুর্নীতির নিরবচ্ছিন চক্র। মেক্সিকোতে ১ কেজি আফিমের মূল্য ১৫ হাজার ডলার আর আমেরিকাতে কড়াকড়ির জন্য ১ কেজি আফিমের মূল্য ৪০,০০০-৫০,০০০ ডলার। ফলে মার্কিন ও মেক্সিকান ব্যবসায়ীদের মধ্যে গড়ে ওঠে কার্টল, শুরু হয় বেচা কেনা। অধিকাংশ কঠোর আমেরিকাতেই বরং চলে আসছে অধিকাংশ মেক্সিকান আফিম। মার্কিনদের আইনী কড়াকড়ি একইসাথে ক্ষতিগ্রস্ত করছে মেক্সিকোকেও। ২০০৪-০৫ সালের দিকে আমেরিকায় মেথাঅ্যাম্ফেটামিন তথা মেথের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। পুরো আমেরিকায় ২৪ হাজারের অধিকা মেথ তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। কিন্তু পরবর্তী ১০ বছরে ডিইএ (ড্রাগ এনফোর্সেমন্ট অ্যাডিমিনিস্ট্রেশন) এর তৎপরতায় সংখ্যাটা ১১ হাজারে নেমে আসে। তবে মার্কিনীদের মেথ সেবন কিন্তু কমেনি, কমেছিল দেশীয় মেথ সেবনের হার। ততদিনে আমেরিকার মেথ বাজার সয়লাব হয়েছে মেক্সিকান মেথে। মেক্সিকোতে গড়ে ওঠা সুপারল্যাবগুলো থেকে আমেরিকায় চালান করা হতো এই ভয়াবহ মাদক। এর মধ্য দিয়ে মেথ নামক আরো একটি ভয়াবহ মাদকে আক্রান্ত হলো মেক্সিকোও। আর সেখানেও শুরু হলো মাদকবিরোধী যুদ্ধ এবং নিরন্তর রক্তপাত।
মাদকবিরোধী যুদ্ধের এতসব বিপরীত ফলাফল কি যুক্তরাষ্ট্রকে থামাতে পেরেছে। নাহ, মোটেই না। বরং যুক্তরাষ্ট্রের মাদক যুদ্ধ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে গিয়ে পৌঁছেছে। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করার পর প্রথমদিকে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে, তালেবান এবং আল-কায়দার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে মার্কিন সৈন্যরা। পর্যাপ্ত তথ্যাদি এবং সহায়তা পাবার পরই ২০০৩-২০০৪ সালে মার্কিন বাহিনীর বোধোদয় হয়। এবার তারা আফগানদের আফিম এবং পপি উৎপাদনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে এগোতে শুরু করে। এক যুদ্ধের সাথেই আফগানিস্তানে আরো একটি নতুন যুদ্ধ শুরু করে আমেরিকা। ডিইএ অফিস ২০০৩ সালে ১৩ টি থেকে ২০০৪ সালে ৯৫ এ গিয়ে দাঁড়ায়। পাল্লা দিয়ে বাড়ে সামরিক ব্যয়। আফগান যুদ্ধ বাদে, কেবল মাদক বিরোধী অভিযানের জন্য ২০০৩-১২ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে আমরিকা ব্যয় করে ৮.৪ বিলিয়ন ডলার। ফলাফল- ২০০২ সালে ৭৬ হাজার হেক্টর জমির বিপরীতে ২০১৩ সালে আফগানরা ২,০৯,০০০ হেক্টর জমিতে আফিম চাষ করে, বিশ্বে আফিম বাজারের ৮০ শতাংশ দখল করে একচেটিয়ে রাজত্ব বসিয়েছে।
মার্কিনদের দীর্ঘমেয়াদী মাদকবিরোধী যুদ্ধের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সেই দেশের সাধারণ জনগণ। মার্কিন নাগরিকদের সামষ্টিক মতামতের উপরও তাই প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। ১৯৯০ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে ৭৩ শতাংশ মানুষ বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের মৃত্যুদন্ড চাইতো। অথচ ২০১৪ সালে এসে এই মৃত্যুদন্ড চাওয়া মানুষের সংখ্যা ২৫ ভাগে নেমে এসেছে। তাদের চাওয়া, সরকার যেন ভিন্নপন্থায় রক্তপাতবিহীন উপায়ে মাদক নির্মূলে মনোযোগ দেয়।
বাংলাদেশকে ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবার প্রধান অন্তরায় হলো মাদকাসক্ত জনগোষ্ঠী। মাদক নিয়ন্ত্রণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তিন কর্মকৌশল অনুসরন করে- মাদকের যোগান হ্রাস, চাহিদা হ্রাস ও ক্ষতি হ্রাস। মাদকের যোগান হ্রাসকল্পে সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যেমন জড়িত, তেমনি চাহিদা হ্রাসকল্পে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ অনেক প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত। কিন্তু মাদকের ক্ষতি হ্রাসকল্পে অর্থ্যাৎ মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সংক্রান্ত পুরোটাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এককভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তরুণদের মাদকের ভয়াল আসক্তি থেকে মুক্ত করতে প্রতিটি জেলায় সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। সাথে সাথে বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোর মান উন্নয়নের জন্য সরকারি অনুদান ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোর জন্য সরকারি অনুদান সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০১৯ গ্রহণ করা হয়েছে। এ নীতিমালা অনুসারে বিগত দুই বছর যাবৎ বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো আর্থিক সহয়তা পেয়ে আসছে। এই অনুদানের উদ্দেশ্য হলো- (ক) বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রসমূহের রোগীদের চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি করা (খ) মাদকাসক্তির চিকিৎসার প্রসার ঘটানো (গ) মানব সম্পদ উন্নয়ন।
অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশও মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের পর্তুগালের মতো অপরাধী না ভেবে, রোগী বিবেচনায় নিরাময় কেন্দ্রসমূহে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করে সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আসবে এই প্রত্যাশায় রইলাম।
(লেখাটির প্রয়োজনীয় তথ্যাদি তথ্য ব্যুরো অব জাস্টিস স্ট্যাটিস্টিকস ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট হতে নেয়া হয়েছে)


বিজ্ঞাপন