কঠোর বিধিনিষেধেও বেপরোয়া মানুষ!

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন স্বাস্থ্য

*মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট *বেড়েছে যান চলাচল


বিজ্ঞাপন

 

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের চাপ আগের চেয়ে বেড়েছে। বেড়েছে মানুষের চলাচল। পাশাপাশি বিভিন্ন চেকপোস্টে ছিল তল্লাশিও। তবে চেকপোস্টে ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা গেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) চতুর্থ দিন ছিলো সোমবার। বিধিনিষেধে রিকশা ছাড়া সব ধরনের যন্ত্রচালিত গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। খোলেনি মার্কেট ও দোকানপাট। রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তবুও গত তিনদিনের তুলনায় যেমন বেড়েছে মানুষের চলাচল, তেমনই বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা। চেকপোস্টে রিকশা-যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করায় কোথাও কোথাও কিছুটা যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে, রাজধানীর অনেক বেসরকারি অফিস খোলা থাকায় বাধ্য হয়ে তারা বের হয়েছেন কর্মীরা। রিকশা, ভ্যান কিংবা ব্যক্তিগত প্রাইভেট গাড়িতে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন তারা। অনেকে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে ভোগান্তি নিয়ে যাচ্ছেন কর্মস্থলে।
সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, শাহবাগ, বাংলামোটর, পান্থপথ, কাওরান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ, গুলশান, বাড্ডা, কুড়িল বিশ্বরোড, মতিঝিল, গুলিস্তান, মুগদা, মানিকনগর এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, প্রায় সবগুলো সড়কেই আগের তিনদিনের তুলনায় ব্যক্তিগত যানবাহন, রিকশা ও মানুষের চলাচল বেড়েছে কয়েকগুণ। চেকপোস্টগুলোতে প্রথম তিনদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে তৎপরতা ছিল সেটা আজ তেমন দেখা যায়নি। বেশিরভাগ গাড়ি তল্লাশি না করে চেকপোস্ট থেকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
পুলিশের তল্লাশি চৌকির পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের সড়কে টহল দিতে দেখা যায়। কিছু কিছু চেকপোস্টে অপ্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন তাদের অনেককেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। গাড়ির নামে মামলা হয়েছে, গুনতে হয়েছে জরিমানা।
বাংলামোটর মোড়ে আফজাল উদ্দীন নামে এক মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, রাস্তায় এখন মানুষ বেশি, কিন্তু পরিবহন নেই। তাই সংসার চালাতে বাইক নিয়ে বের হওয়া। অন্যদিন পুলিশের চেকিংয়ের ভয় থাকলেও আজ সেরকম কড়াকড়ির মধ্যে পড়তে হয়নি।
কারওয়ান বাজারে রিকশাচালক আক্তার হোসেন বলেন, অন্যদিনের তুলনায় এখন লোকজন একটু বেশি বাইরে চলাচল করতে শুরু করেছেন। তবে এখনো অনেকেই জরুরি দরকার ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না।
কারওয়ান বাজারের একাধিক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতেই আসছেন ক্রেতারা। অন্যদিনের চেয়ে একটু একটু করে ক্রেতা সমাগম বাড়ছে।’
সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানম-ি, জিগাতলা, রাসেল স্কয়ার এলাকা ঘুরে তল্লাশি চৌকিগুলোতে পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। গত তিনদিনের তুলনায় এসব তল্লাশি চৌকিতে গাড়ির জটলা বেশি ছিল। ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশার পাশাপাশি মোটরসাইকেলের সংখ্যাও ছিল চোখে পড়ার মতো। এসবের বেশিরভাগই ছিল বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কর্মীদের।
গত তিনদিনের তুলনায় রিকশাভাড়া কিছুটা কমলেও এখনো অন্তত দিগুণ ভাড়া হাঁকছেন চালকরা। মিরপুর মোড় থেকে ঝিগাতলায় কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন ব্যাংককর্মী অরন্য আবির মাহমুদ। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময় ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় যাওয়া গেলেও এখন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। রাস্তায় রিকশা থাকলেও সবাই অতিরিক্ত ভাড়া চায়।
ওই মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালক কামাল শেখ বলেন, সারাদিনে খ্যাপ তো বেশি পাই না। সকাল-বিকেল দুই বেলা কিছু যাত্রী আসে। সন্ধ্যার পর রাস্তা খালি হয়ে যায়। ভাড়া একটু বেশি না নিলে চলুম (চলবো) কেমনে।
এদিকে, বেশকিছু আবাসিক এলাকা ও অলিগলি ঘুরে দেখা যায়, মাস্ক ব্যবহার না করেই অপ্রয়োজনে অধিকাংশ মানুষ চলাফেরা করছেন। এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চোখে পরেনি। এসব এলাকার অলিগলিতে প্রায় প্রতিটি চায়ের দোকানই খোলা রাখা হয়েছে।
রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই বিধিনিষেধ মানতে এমন অনীহা দেখা যায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে জনসমাগম। আর সন্ধ্যা থেকে পাড়া মহল্লায় দূরত্ব না মেনে চলে অপ্রয়োজনে ঘোরাফেরা।
এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ নিশ্চিতে তৃতীয়দিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হাতে গ্রেফতার হন ৫৮৭ জন। ২৩৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয় এক লাখ ৯৫০ টাকা। এ ছাড়া ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক ৫২১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয় ১২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। তিনদিনে রাজধানীতে মোট গ্রেফতার হলেন ১ হাজার ৩৭৩ জন।
আর কঠোর বিধিনিষেধ নিশ্চিতে তৃতীয়দিনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় সারাদেশে ১৮৯ জনকে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা করে র‌্যাব। সারাদেশে ২৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এই জরিমানা করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে আমাদের যা যা করণীয় সবকিছুই করব। তবে জনগণকেও সহযোগিতা করা উচিত।
এদিকে ভিন্ন চিত্র দেখা যায় বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায়। এ ব্রিজের মুখে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। তবে সেখানে খুব শক্ত অবস্থান দেখা যায়নি। ঢিলেঢালা চেকপোস্ট পেরিয়েই মানুষ ঢুকছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা সকাল থেকেই কঠোর বিধিনিষেধের দায়িত্ব পালন করে আসছি। যাদের সন্দেহ হচ্ছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার।