অস্ত্র ও ইয়াবাসহ কন্ট্রাক্ট শুটার দলের ৩ সদস্য গ্রেফতার

অপরাধ

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় আরব আলীকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ(ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।


বিজ্ঞাপন

গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ সাহজামান ওরফে সাবু, মোঃ দুলাল প্যাদা ও মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে সুজন।

গতকাল ২৮ জুলাই, বুধবার ধারাবাহিক অভিযানে চাঁদপুর ও রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকা হতে তাদেরকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম।

বৃহস্পতিবার ২৯ জুলাই, বেলা সাড়ে ১১ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ক্যান্টনমেন্ট থানার পশ্চিম মাটিকাটা এলাকায় বসবাসকারী পানি ও সুয়ারেজ লাইন ঠিকাদার আরব আলীকে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা রুজু হয়।

এ ঘটনায় চাদঁপুর জেলার হাইমচর থানার মিয়া বাজার ও রাজধানীর পল্লবী এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে অস্ত্র ও মাদকসহ কন্ট্রাক্ট শুটার দলের সদস্য সাবু, দুলাল ও সুজনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।

অভিযুক্তদের গ্রেফতার সংক্রান্তে তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত, সিসি ক্যামেরার ভিডিও চিত্র ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ২৮ জুলাই, (বুধবার) চাঁদপুর হাইমচর এলাকায় অভিযান করে সাবুকে গ্রেফতার করা হয়।

তার দেয়া তথ্য মতে পল্লবী থানার কালশী বাউনিয়াবাধস্থ তার বাসা হতে ৬ চেম্বার বিশিষ্ট ১টি রিভলবার ও ১০০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

ধারাবাহিক অভিযানে কালশী এলাকা হতে ঘটনায় জড়িত দুলাল ও সুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত হতে ১টি পিস্তল ও ২০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত এ সকল সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বিদেশে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী ইব্রাহীম এবং যুবরাজের তত্ত্বাবধানে থেকে ঢাকা মহানগরীর ভাষানটেক, ক্যান্টনমেন্ট ও পল্লবী থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় মাটি ভরাট, বিতর্কিত জায়গায় জমির দখল-বেদখল এবং গ্যাস, পানি ও সুয়ারেজ লাইন তৈরির কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি করতো।

এছাড়াও তারা অত্র এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিয়ে জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায় করতো।

গ্রেফতারকৃত সন্ত্রাসীরা তাদের শিষ্যদের দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করতো।

তিনি আরো বলেন, এ সকল সন্ত্রাসীরা ঘটনা ঘটানোর পর আদায়কৃত চাঁদার টাকা, ইয়াবা বিক্রির টাকা নিয়ে পদ্মা-মেঘনার দুর্গম চর এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করতো।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকার হাজারীবাগ ও পল্লবী এলাকায় সংঘটিত ঘটনায় সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগরীতে জমি দখল-বেদখল ও কন্ট্রাক্ট শুটারসহ চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।

চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও কন্ট্রাক্ট শুটিংয়ের সাথে সম্পৃক্ত সন্ত্রাসীদের বিষয়ে পুলিশকে তথ্য প্রদানের জন্যে নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ করেন পুলিশের এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র আইনে পৃথক ৩ টি মামলা রুজু হয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ মশিউর রহমান, বিপিএম-বার, পিপিএম এর সার্বিক তত্তাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এস.এম. রেজাউল হক এর নেতৃত্বে অফিসার, ফোর্সসহ গোয়েন্দা ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম এই অভিযানটি পরিচালনা করেন।

প্রসঙ্গত, ক্যান্টনমেন্ট থানার পশ্চিম মাটিকাটা এলাকাবাসীর সংগৃহীত টাকায় সুয়ারেজ লাইনের মেরামতের কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় পানির লাইন ও সুয়ারেজ ঠিকাদার আরব আলীকে। কাজ চলাকালীন সন্ত্রাসীরা আরব আলী এবং নির্মাণ শ্রমিকদের কাছে চাঁদা দাবি করে। আরব আলী টাকা দিতে অস্বীকার করলে গত ৩০ মার্চ, দুপুর সোয়া একটায় ক্যান্টনমেন্ট থানার ৩৩/এ নং বাসার সামনে ভিকটিমকে লক্ষ্য করে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসীরা উপর্যপুরি গুলি করে।

উপস্থিত বুদ্ধিতে ভিকটিম শুয়ে পড়ে কোন রকমে নিজের জীবন রক্ষা করতে পারলেও তার ডান পা ও উরু গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম প্রাপ্ত হয়।

এ ঘটনায় ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩০ মার্চ, ২০২১ তারিখে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা রুজু হয়। এ মামলার তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম।