‘নিষ্ঠুরতম’ জুলাই মাস

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

করোনা অতীতের প্রায় সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে


বিজ্ঞাপন

সামনে পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে খুবই শঙ্কিত

 

বিশেষ প্রতিবেদক : সদ্য সমাপ্ত জুলাই মাসে করোনা অতীতের প্রায় সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এ মাস সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয় দিক দিয়ে ছিল ভয়াবহ। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে দেয়া মাসওয়ারি হিসাব বলছে, দেশে করোনায় জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ হাজার ১৮২ জন। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বিগত যেকোন মাস থেকে কয়েকগুণ বেশি। এ ভয়াল মাসে প্রতিদিন গড়ে করোনায় প্রাণ গেছে ২০০ জনের।
সংক্রামক বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের করোনা সংক্রমণের হার এখনোও কম-বেশি ৩০ শতাংশে রয়েছে। সংক্রমণের এই হার নি¤œমুখী না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা কমবে না।
মাসওয়ারি হিসাবে দেখা গেছে, জুলাই মাসের আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাস ছিল সংক্রমণ ও মৃত্যুর দিক দ্বিতীয় ভয়াবহ মাস। ওই মাসে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭ জন শনাক্ত ও ২৪০৪ জন মৃত্যুবরণ করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, জুলাই মাসে করোনার নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা, শনাক্ত, মৃত্যু শনাক্তের হার মোট ৫টি ক্ষেত্রে রেকর্ড হয়েছে। এরমধ্যে ২৮জুলাই একদিনে ৩টি রেকর্ড হয়। এরমধ্যে ৫৬১৫৭টি নমুনা সংগ্রহে রেকর্ড, ৫৩৮৭৭জনের নমুনা পরীক্ষা ও ১৬২৩০জনের করোনায় শনাক্তের রেকর্ড হয়। এছাড়া ২৭ জুলাই ২৫৮ জনের মৃত্যুর রেকর্ড এবং ২৪ জুলাই ৩২.৫৫ শতাংশ শনাক্তের হারের রেকর্ড হয়।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। ওই মাসে ৫১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর এপ্রিলে ৭৬১৬ জন, মে ৩৯৪৮৬ জন, জুন ৯৮৩৩০, জুলাই ৯২১৭৮ জন, আগস্ট ৭৫৩৩৫ জন, সেপ্টেম্বর ৫০৪৮৩ জন, অক্টোবর ৪৪২০৫ জন, নভেম্বর ৫৭২৪৮ জন, ডিসেম্বর ৪৮৫৭৮ জন রোগী শনাক্ত হয়। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২১৬২৯ জন, ফেব্রুয়ারি ১১০৭৭ জন, মার্চ ৬৫০৭৯ জন, এপ্রিল ১৪৭৮৩৭ জন, মে ৪১৪০৮, জুন ১১২৭১৮ ও জুলাই ৩৩৬২২৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়।
অন্যদিকে গত বছরের ১৬ এপ্রিল প্রথম মৃত্যু হয়। ওই মাসে মোট ৫ জন মৃত্যুবরণ করেন। এরপর এপ্রিলে ১৬৩ জন, মে ৪৮২ জন, জুন ১১৯৭, জুলাই ১২৬৪ জন, আগস্ট ১১৭০ জন, সেপ্টেম্বর ৯৭০ জন, অক্টোবর ৬৭২ জন, নভেম্বর ৭২১ জন, ডিসেম্বর ৯১৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৫৬৮ জন, ফেব্রুয়ারি ২৮১ জন, মার্চ ৬৩৮ জন, এপ্রিল ২৪০৪ জন, মে ১১৬৯, জুন ১৮৮৪ জন ও জুলাই ৬১৮২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
হাজার মৃত্যুর রেকর্ড অনুযায়ী দেখা যায়, প্রথম মৃত্যুর দুই মাসে পর ১০ জুন দেশে মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজারে দাঁড়ায়। পরে ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৫ অগাস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার, ৪ নভেম্বর ৬ হাজার এবং ১২ ডিসেম্বর ৭ হাজার ছাড়ায়।
এরপর চলতি বছর ২৩ জানুয়ারি করোনায় মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার, ৩১ মার্চ ৯ হাজার, ২৫ এপ্রিল ১০ হাজারে পৌঁছায়। পরে গত ১১ মে করোনায় মৃত্যু ১২ হাজার, ১ জুন করোনায় ১৩ হাজার, ২৬ জুন ১৪ হাজার ও ৪ জুলাই মৃত্যু ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এরপর আজ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৯১৬ জনে।
পরিসংখ্যান বলছে, করোনায় এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার ১৪২ জন পুরুষের মৃত্যু হয়েছে, যা ৬৭.৬১ শতাংশ। আর নারী ৬ হাজার ৭৭৪ জন, যা ৩২.৩৯ শতাংশ। এছাড়া সরকারি হাসপাতালে ১৮ হাজার ২৪২ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ২ হাজার ৭৭ জন এবং বাসায় ৫৭২ জন মৃত্যুবরণ করেন। সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ৯ হাজার ৫৫৮ জন মৃত্যুবরণ করেন।
সামনে পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে খুবই শঙ্কিত : দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে জীবন হাতে নিয়ে মানুষ ঢাকা ফিরছেন। ফেরি, লঞ্চসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে কর্মজীবীরা গাদাগাদি করে ফিরছেন। সর্বত্রই স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে। সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে খোদ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, যতবারই আমরা চাই সংক্রমণের লাগাম টানতে, বৈজ্ঞানিক পরামর্শ মতো সংক্রমণের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে, কোনোবারই তা শেষ পর্যন্ত নিতে পারলাম না। ক্ষতি তো সবার হচ্ছেই। সামনে পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে খুবই শঙ্কিত।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনায় মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু আমরা স্বাস্থ্যের লোকজন-চিকিৎসক-নার্সরা তো আর রাস্তায় নেমে মানুষের চলাফেরা ঠেকাতে পারি না। ব্যবসা-বাণিজ্যিক অঙ্গনকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তো আমাদের না। গার্মেন্ট সেক্টরের প্রতি আমাদের অনুরোধ ছিল, অন্তত ১৪টা দিন সময় দেন, দেখি না কতটা কমানো যায়, কিন্তু এবারও তা হলো না। এটাই বড় আক্ষেপ। এখন তো আবার বেড়ে যাবে। সামনে আক্রান্ত ও মৃত্যু কতটা বাড়বে তা নিয়ে খুবই শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছি।


বিজ্ঞাপন