ভয়ংকর হচ্ছে ডেঙ্গু

এইমাত্র স্বাস্থ্য

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ১৪ জুন হঠাৎ জ্বর আসে রাজধানীর উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার্স স্কুলের মনিটরিং অফিসার মোসলেহ উদ্দিনের সন্তান সম্ভবা স্ত্রী ফাতেমা বেগমের। ১৬ জুন রিপোর্টে ধরা পড়ে ডেঙ্গু; ততক্ষণে রক্তে প্লেইটলেটস নেমে আসে ১৮ হাজারে। এরপর আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। প্লেইটলেটস দেওয়ার পরও অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ২০ জুন পেটেই তার সন্তান মারা যায়। ২৬ ব্যাগ রক্ত দিয়েও বাঁচানো যায়নি ফাতেমাকে।
দুই মাস আগে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর বেশ কিছুদিন ভুগে সুস্থ হয়েছিলেন কুমিল্লার তিতাস উপজেলার প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান। গত ২৬ জুলাই থেকে তিনি আবার জ্বরে পড়েন। তখন করোনা ও ডেঙ্গুর পরীক্ষা দেন চিকিৎসক। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। গত ২৮ জুলাই থেকে তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১ আগস্ট দুপুরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব ঘটনাই বলে দেয় বর্তমান দেশের পরিস্থিতি। প্রতিদিনই করোনাভাইরাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এত দিন পর্যন্ত এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দুই শর নিচে ছিল, গত রোববার (১ আগস্ট) তা বেড়ে পৌঁছে গেছে ২৩৭ জনে। এটাই এ বছর এক দিনে হাসপাতালে ভর্তির সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণেও জ্বর যেমন হয়, ডেঙ্গুতেও তাই হয়। যেকোনো ধরনের জ্বর হোক না কেন জ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কেউ যেনো অবহেলা করে ঘরে বসে না থাকেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রোববার সকাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৩৭ ডেঙ্গু রোগী; এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২১৮ জন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আরো ১৯ জন।
বর্তমানে দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮৬২ জন। এর মধ্যে ঢাকাতেই ভর্তি রয়েছে ৮২৮ জন। বাকি ৩৪ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এ ছাড়া ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজার ৮৯৫ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছে দুই হাজার ২৯ জন।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেছেন, জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। অমুক ওষুধ খেলে জ্বর ভালো হয়ে যাবে, এজাতীয় ভাবনা যে কারো জন্যে ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অবহেলা করে ঘরে বসে থাকা যাবে না। জ্বর হলে ডাক্তার দেখাতেই হবে। অন্তত ডেঙ্গু হয়েছে কী না তা পরীক্ষা করে নিতে হবে। জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। এমনকি ডেঙ্গু হলেও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই যদি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যায়।
তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় হলো- ডেঙ্গু জ্বরের সময় ভীষণ ব্যথা হয় বলে অনেকে বিভিন্ন রকমের ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন। নিয়ম হচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না। তা না হলে পরিস্থিতি বিপদজনক হতে পারে। জ্বর হলে কী ধরনের খাবার খাবেন, সে বিষয়েও ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু করা যাবে না।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেছেন, জুন মাসে ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও দেশের বিভিন্ন স্থানে এডিস মশা নিয়ে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, সারা দেশ ও রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে এডিস মশার ঘনত্ব গত বছরের তুলনায় বেশি ছিল। নিয়মিত এ গবেষণার তথ্য ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দেখে মনে হচ্ছে, সামনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে এটি বাড়তে থাকবে।


বিজ্ঞাপন