বিশেষ প্রতিবেদক : মহল্লায় নতুন ভাড়াটিয়া আসতে দেখলেই টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বাসায় ঢুকে করা হয় হেনস্তা। তাদের ভাষায় যাকে বলে ‘ফিটিং দেওয়া’। শুধু তাই নয়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে দিনভর চলে আড্ডা, নারীদের দেখে করা হয় অশালীন মন্তব্য। আবার আধিপত্য বিস্তারের জেরে নিজেদের মধ্যে মাঝেমেধ্যেই মারামারি- এমনকি খুনের ঘটনাও ঘটে অহরহ।
রাজধানীর পাড়া মহল্লার কিশোর বা যুবক গ্যাংগুলো এভাবেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে দিনকে দিন। কিশোর বা যুবক গ্যাংয়ের অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় বাসায় ঢুকে মারধর করা হয় জিগাতলার তল্লাবাগ এলাকার তাকিম-জ্যোতি দম্পতিকে।
জ্যোতি বলেন, ওরা ঘরে ঢুকে আমার স্বামীকে মারধর করতে থাকে। এ সময় আমি প্রতিবাদ করতে গেলে, ওরা বলতে থাকে, তুই যত চিৎকার করবি, তোর স্বামীকে ততো বেশি মারব।
কোনো শত্রুতা নেই আগে থেকে, কেউ কাউকে চিনতেনও না। ঘটনা রাজধানীর জিগাতলার তল্লাবাগ এলাকায়। তাকিম ও জ্যোতি ওই বাসা ভাড়া নেওয়ার দুদিন পরই তাদের জীবনে নেমে আসে সেই ভয়ংকর রাত। হাতিয়ে নেওয়া হয় টাকাপয়সা। ভাঙচুর করা হয় আসবাবপত্র।
যদি এ ঘটনা কেউ জেনে যায় তাহলে গুম করারও হুমকি দেয় গ্যাং সদস্যরা।
জুলাইয়ের ৫ তারিখে পুরো ঘটনা ঘটিয়ে ৯ জনের দলটি রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ওই বাসা থেকে নেমে যায়। এ সময় তারা বিজয়ীর বেশে উল্লাস করতে করতে এলাকা ছাড়ে। এর আগে ৮টার পর থেকে একে একে ওই বাসার নিচে জড়ো হয় ওই গ্রুপের সদস্যরা। এসবই ধরা পড়ে এলাকার সিসি টিভি ক্যামেরায়। পরদিন হাজারীবাগ থানায় মামলা করে তাকিম। কিন্তু এখনও বেশিরভাগ আসামি পলাতক। যদিও সিসিটিভি ক্যামেরায় সবাইকেই দেখা গেছে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গ্যাংটির দখলে আছে এলাকার ইন্টারনেটসহ বেশ কিছু ব্যবসা। মামলার অন্যতম আসামি শাখাওয়াত হোসেন জনির সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় সময় সংবাদের। তার দাবি, তিনি ওই ঘটনায় জড়িত নন।
মামলার পাঁচ নম্বর আসামি শাখাওয়াত হোসেন জনি বলেন, আমি সেখানে ছিলাম না। পরে বাড়িওয়ালা আমাকে ফোন করাতে আমি সেখানে গেছি। সেখানে যারা গেছে (গ্যাং) তাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কও নেই।
অভিযোগ আছে এ বাহিনীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন ইসমাইল হোসেন তপু। তার চেম্বারও বন্ধ পাওয়া যায়। ফোন করলেও সেটি রিসিভ করেননি তিনি। জানা গেছে, শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে তাকে সরকার দলীয় একটি সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে বাড়ির মালিকও ভয়ে আছেন। মামলার সাক্ষী হওয়া তো দূরের কথা মডিয়ার সামনেই কথা বলতে রাজি নন তিনি।
বাড়িওয়ালা বলেন, আমি ফ্যামিলি নিয়ে থাকি, আমার মা একজন বয়স্ক মানুষ। এমন ঘটনা তো যে কারো জীবনে ঘটে যেতে পারে।
ওই এলাকায় এ ঘটনা নতুন নয়, স্থানীয়রা বলছেন এর আগে এক ভাড়াটিয়া ভয়ে এলাকাই ছেড়েছে।
সূত্র বলছে, রাজধানীতে এমন শতাধিক গ্যাং আছে। পুলিশের রমনা ও মতিঝিল জোনেই এমন গ্রুপের সংখ্যা ১৯টি। তাদের জ্বালায় অতিষ্ঠ এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশের দাবি, এমন অপরাধ কমাতে তারা কাজ করছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা অনুযায়ী, তাদের পিতা-মাতাদের ডেকে নিয়ে এসে আমাদের ডিসি অফিসগুলোতে সতর্ক করা হয়। হাজারীবাগ থানায় কিশোর গ্যাংয়ের একটা মামলা হয়। এ মামলাটি তদন্ত শেষের পথে। যতদ্রুত সম্ভব মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।
অপরাধবিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো এসব তরুণকে ব্যবহার করে তাই কমছে না এমন অপরাধ।
অপরাধ বিশ্লেষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, প্রভাবশালী গোষ্ঠী স্থানীয়ভাবে অনেক অপরাধে কিশোরদের ব্যবহার করে। এই বিষয়টা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেজন্য সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, অভিভাবক, পরিবার সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পরিবারকে আরও সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2021/08/আবারো-ভয়ংকর-হচ্ছে-কিশোর-গ্যাং.png)