আঞ্চলিক সংকট মোকাবিলায় আসিয়ান নেতাদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহবান

আন্তর্জাতিক জাতীয়

নিজস্ব প্রতিনিধি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন এ অঞ্চলের সংকট মোকাবিলায় আশিয়ান নেতাদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান। তিনি রোববার আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের ২৮তম সভায় বক্তৃতা প্রদানকালে এ আহবান জানান।


বিজ্ঞাপন

এ সময় ড. মোমেন এআরএফ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপে বাংলাদেশের সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস প্রদান করেন।

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা সম্পর্কেও মোমেন সভাকে অবহিত করেন। তিনি বৈশ্বিক জলবায়ু অগ্রগতি সাধনের নিমিত্ত প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে নেতাদের প্রতি ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীবৃন্দ বিভিন্ন আঞ্চলিক ইস্যু যেমন রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, পারমাণবিকায়ন, সাইবার নিরাপত্তা এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সমস্যা সম্পর্কে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়ে পারস্পরিক মতবিনিময় করেন।
এআরএফ- এর গতিশীল নেতৃত্বে, এ অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সুশাসন এবং শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত রচিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকা সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য প্রদানকালে জনকল্যাণের সহিত অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হওয়ায় তিনি ভ্যাকসিনকে “পাবলিক গুড” হিসেবে অভিহিত করে বলেন এর প্রযুক্তি সকলের মধ্যে সমভাবে বণ্টণ হওয়া উচিত এবং সেই সাথে তিনি সাশ্রয়ী মূল্যে ভ্যাকসিন উৎপাদনের উপরও জোর দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদিও বাংলাদেশ ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রটোকলের স্বাক্ষরকারী নয়, তথাপি শুধুমাত্র মানবিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ১.১ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান করেছে। তিনি আরও বলেন, ৬৮০০ একর সার্বভৌম বনভূমি আপোষ করে বাংলাদেশের পক্ষে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ বোঝা বহন করা সম্ভব নয়। অধিকন্তু, এ অঞ্চলের জলবায়ুর উপর ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমনের জন্য তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করেন। এআরএফ সদস্য দেশ অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, সিঙ্গাপুর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে একমত প্রকাশ করেন। তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ স্বদেশ প্রত্যাবাসনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

বক্তৃতা প্রদানকালে তিনি নিরস্ত্রীকরণকে বাংলাদেশের শান্তিকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির একটি মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির উপর গুরুত্বারোপ করায় বাংলাদেশ সবসময় স্ব-প্রণোদিত হয়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং অস্ত্রীকরণ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে। জাতিসংঘের সদস্য হবার পর থেকে বাংলাদেশ সবসময় জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ কূটনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। তিনি আরো বলেন, ১৯৭৯-১৯৮০ এবং ২০০০-২০০১ সময়কালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি ও অন্যান্য দলিলের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্তকরণসহ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

আসিয়ান একটি বহুপক্ষীয় আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম যা এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ধারাকে ত্বরান্বিত করতে এবং দেশগুলির মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার মাধ্যমে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।

২৮তম আশিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ)- সভা আজ ব্রুনেই-এ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সহ ২৬টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ এবারের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এবারের সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্রুনেই এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাটো এরিওয়ান পেহিন ইউসুফ।

পরিশেষে “Chairman’s Statement of the 28th ARF” ইস্যু করার মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।