শেখ মুজিব-বাংলাদেশের নাম

উপ-সম্পাদকীয়/মতামত

ডা. খালেদ শওকত আলী
“… তুমি কেউ নও, বলে ওরা, কিন্তু বাংলাদেশের আড়াইশত নদী বলে, তুমি এই বাংলার নদী, বাংলার সবুজ প্রান্তর তুমি এই চর্যাপদের গান, তুমি এই বাংলার অক্ষর, বলে ওরা, তুমি কেউ নও, কিন্তু তোমার শব্দে নেচে ওঠে পদ্মার ইলিশ; তুমি কেউ নও, বলে ওরা, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গান আর নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা বলে,তুমি বাংলাদেশের হৃদয়।” {মহাদেব সাহা}
বাংলাদেশের হৃদয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর মুক্তির নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শাহাদাৎ বার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
১৩৯৩ খৃষ্টাব্দে বিশ্ব কবি রবীদ্রনাথ ঠাকুর ‘স্বদেশী সমাজ’ এ লিখেছেন, স্বদেশকে একটি বিশেষ ব্যক্তির মধ্যে আমরা উপলব্ধি করিতে চাই। এমন একটি লোক চাই, যিনি আমাদের সমস্ত সমাজের প্রতিমা স্বরূপ হইবেন। তাহাকে অবলম্বন করিয়াই আমরা আমাদের বৃহৎ স্বদেশীয় সমাজকে ভক্তি করিব, সেবা করিব। তাহার সঙ্গে যোগ রাখিলেই সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের যোগ রক্ষিত হইবে, ‘রবীদ্রনাথ যেমন মানুষটির খোঁজ করছিলেন, সেই মানুষটির জন্ম নিতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল অনেক বৎসর, ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ পর্র্যন্ত। যেদিন গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান ও সাহারা খাতুনের ঘরে জন্ম নিল তাদের তৃতীয় সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান, টুঙ্গিপাড়ার জন্ম নেওয়া মানুষটি একদিন হলেন রবীদ্রনাথের সেই ‘বিশেষ ব্যক্তি’, হলেন বাংলার সকল মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক, যাকে ঘিরে স্বাধীনতার স্বপ্ন দানা বাঁধলো, যাকে কেদ্র করে সমাজের আত্মচেতনা প্রসারিত হতে থাকলো এবং কালক্রমে যিনি স্বীয় যোগ্যতা ও মানবিকতার বলে দেশের মঙ্গল, গৌরব আর মানুষের মুক্তিকে ধারণ করলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির প্রয়াস, স্বাধীনতার সংগ্রাম একদিনের জন্য তাকে সুখ স্বাচ্ছন্দ দিতে না পারলেও তার আপন বল আর সহিষ্ণুতার গুণে তিনি বাঙালি জাতিকে এক সুতোয় বেধে ধীরে ধীরে আত্মমর্যাদার দিকে, এবং গৌরবের দিকে নিয়ে যান। বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদার আকাঙ্খা, স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল সুদীর্ঘকালের। বারবার সেই আকাঙ্খা, ঘুরপাক খেয়েছে তীতুমির, ক্ষুদিরাম, ইলামিত্রসহ আরো শত নাম জানা অজানা বিপ্লবী বীরদের রক্ত¯স্রোতে। সবাই মিলে যুগে যুগে জাতীয়তা বোধের স্বপ্নকে উসকে দিয়েছেন। লালন করেছেন। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই মুক্তির স্বপ্নকে ধারণ করে, সমাজের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সঞ্চিত শক্তিকে একত্র করে, বাঙালী শক্তিকে মহাশক্তিকে পরিণত করে ঘটিয়েছেন মহাকান্ড, এনেছেন বাংলার স্বাধীনতা, জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের, একেঁছেন নতুন লাল সবুজ পতাকা, নতুন মানচিত্র।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ওই একই প্রবন্ধে লিখেছিলেন, এমন ব্যক্তি চাই যিনি, আমরা নিজে যা, তা সজ্ঞানভাবে, সরলভাবে, সচলভাবে, সম্পূর্ণভাবে হয়ে ওঠার কাজটিকে ত্বরান্বিত করতে পারেন।” বহুর মধ্যে ঐক্য উপলব্ধি, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের এই মহাযজ্ঞ বাংলার ইতিহাসে শুধুমাত্র একবার যিনি ঘটাতে পেয়েছেন তার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি এমন এক সফল সংগঠক যিনি সমাজের নিচের থেকে ওপর পর্যন্ত সবাইকে বাংলাদেশের স্বার্থে একই বন্ধনে বাধতে পেরেছিলেন। জনতার সাথে নেতার আত্মিক বন্ধন তখনই সুদৃঢ় হয় যখন উভয়েই আন্তরিক থাকেন তাঁদের লক্ষ্যে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন তার জনতাকে, আর জনতা বিশ্বাস করতেন শেখ মুজিবকে, এই সেই নেতা যিনি সাহসের সাথে এগিয়ে যাবেন তাঁদের আকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্যে, আর সে কারণেই শেখ মুজিব হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, জননন্দিত নেতা – জাতির পিতা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বেড়ে উঠেছিলেন স্বকীয় সত্তায়, নেতৃত্বের গুণে, আর সেই সাথে সাহায্য করেছেন বাঙালি জাতিকে বেড়ে উঠতে। তাকে কেন্দ্র করেই রূপান্তর ঘটানো বাঙালি জাতি স্বত্মার, জন্ম নিল মুক্তির আকাঙ্খা, তার সাহসের স্পর্শে সাহসী হয়ে উঠে বাঙালি জাতি, তার উপস্থিতিতে সকলের প্রাণে জাগলো সাড়া। নিজের উপর, নিজের মানুষের উপর আস্থা স্থাপন করে, দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসায় অবিচল থেকে, সকল শক্তিকে এক জায়গায় সংহত করে, জনসাধারণকে আত্ম শক্তিতে বলিয়ান হাজার বছরের গ্লানি মুছে ফেলে মাথা উঁচু করে দাড়াবার শক্তি দিলেন, নিজের জাতীয় পরিচয় তুলে ধরবেন বীরের মতো, ”শত বছরের মত সংগ্রাম শেষে
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অতঃপর কবি জনতার মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল
হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা, কে বোধে তাহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
সূর্যের মঞ্চ কাপিয়ে কবি শোনালেন তার অমর কবিতা খানি;
এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম,”
ওই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের। (নির্মলেন্দুগুন)। সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি বাংলাদেশের আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানেই বাংলাদেশ। “তুমি কেউ নও, বলে ওরা, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গান আর নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা বলে, তুমি বাংলাদেশের হৃদয়।”
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ


বিজ্ঞাপন