ইভ্যালির দেনা ৫৪৪ কোটি টাকা

অর্থনীতি

আজকের দেশ রিপোর্ট : ইভ্যালির দেনা ৫৪৪ কোটি টাকা বলে বানিজ্য মন্ত্রনালয়কে জানিয়েছেন ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল, এটি গত জুন মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন রিপোর্টে উল্লেখ করা ইভ্যালির দেনার তুলনায় ১৪০ কোটি টাকা বেশি।


বিজ্ঞাপন

কাস্টমার ও মার্চেন্টদের কাছে ই-কমার্স প্লাটফর্ম ইভ্যালির প্রকৃত দেনার পরিমাণ আরও বেশি বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল।


বিজ্ঞাপন

তার হিসাবেই গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত কাস্টমারদের কাছ থেকে নেওয়া অগ্রিম, সরবরাহকারীদের কাছে দেনা ও ব্যবসায়িক দেনাসহ ইভ্যালির মোট চলতি দায়ের পরিমাণ ৫৪৩ কোটি টাকা। এছাড়া শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটি বাবদ দায় রয়েছে আরও এক কোটি টাকা।

অর্থাৎ, ইভ্যালির মোট দেনার পরিমাণ ৫৪৪ কোটি টাকা। এটি গত জুন মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন রিপোর্টে উল্লেখ করা ইভ্যালির দেনার তুলনায় ১৪০ কোটি টাকা বেশি।

বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কোম্পানিটি। দায় বিবরণীতে কাস্টমার, মার্চেন্টদের কাছে দেনার পরিমাণ আলাদাভাবে দেখানো হয়নি।

অন্যদিকে, ইভ্যালি তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির যে হিসাব দিয়েছে, তাতে এর মোট সম্পদ মূল্য ১২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করলে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের দেনার মাত্র ২২.৩০ শতাংশ পরিশোধ করা সম্ভব।

ইভ্যালির ব্যালেন্স শিট অনুযায়ী, কোম্পানিটির মোট অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৫.৮২ কোটি টাকা। আর স্থায়ী সম্পদ হিসেবে কোম্পানিটির প্রপার্টি, প্ল্যান্ট ও যন্ত্রপাতি রয়েছে ১৪.৮৭ কোটি টাকার। এর বাইরে কোম্পানির চলতি সম্পদের পরিমাণ ৯০.৬৬ কোটি টাকা।

মোট দেনার তুলনায় ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পদ মূল্য বাদ দিলে ঘাটতি দাঁড়ায় ৪২২ কোটি টাকারও বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া কোম্পানির ব্যালেন্সশিটে ঘাটতির সমপরিমাণ অর্থ বা ৪২২.৬২ কোটি টাকা কোম্পানির ব্রান্ডভ্যালু হিসেবে দেখিয়েছে ইভ্যালি।

আর্থিক বিবরণীর সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে মোহাম্মদ রাসেল দাবি করে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ও সাম্প্রতিক সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর একই ধরণের ব্যবসায়ের মূল্যায়ণের প্রেক্ষিতে বর্তমানে ইভ্যালির ন্যূনতম ব্রান্ডভ্যালু ৫০০০ কোটি টাকা হয়। তবে আমাদের কোম্পানির ব্রান্ডভ্যালু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র ব্যয়ের সমপরিমাণ অংশটুকু বিবেচনা করেছি।’

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ইভ্যালির প্রকৃত ব্রান্ডভ্যালু নেগেটিভ। কারণ, কোম্পানিটি যে বিজনেস মডেল ফলো করছে, তা টেকসই নয়। বরং মাত্র দু’বছরের মধ্যে ইভ্যালির যে বিপুল পরিমাণ দায় সৃষ্টি হয়েছে, তাতে কোম্পানিটির পক্ষে ভবিষ্যতেও কোন সম্পদ জেনারেট করা সম্ভব নয়।

‘ইভ্যালি এখন ১০০ টাকা বাজারমূল্যের কোন পণ্য ৫০ টাকায়ও বিক্রি করতে চায়, ক্রেতারা আগ্রহী হবেন না। যে কোম্পানি কাস্টমারের পাওনা দিতে পারে না, তার ব্রান্ডভ্যালু পজেটিভ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। বরং ইভ্যালি যে পরিমাণ ব্রান্ডভ্যালু হিসাব করেছে, তার প্রকৃত ব্রান্ডভ্যালু ওই পরিমাণ নেগেটিভ হতে পারে’- যোগ করেন তিনি।

এর আগে গত জুন মাসে এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, চলতি বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত কাস্টমার ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির দায়ের পরিমাণ ৪০৩ কোটি টাকা।

আর কোম্পানির চলতি সম্পদের মূল্য ৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ইভ্যালির সকল সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের দেনার মাত্র ১৬% পরিশোধ করা সম্ভব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন নিয়ে ২১ জুন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোম্পানিটির দায় দেনা ও তা পরিশোধের পরিকল্পনা জানতে চেয়ে গত মাসে শোকজ লেটার পাঠায়।

নির্ধারিত সময়ে ইভ্যালি তথ্য না দেওয়ায় তাদের দ্বিতীয় দফা শোকজ করে মন্ত্রণালয়। তার প্রেক্ষিতেই বুধবার কোম্পানির দায়-দেনার হিসাব দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলেছিল, এ বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে ২১৩.৯৪ কোটি টাকা অগ্রিম নিয়েও পণ্য ডেলিভারি দেয়নি ইভ্যালি। এছাড়া ওই সময় পর্যন্ত মার্চেন্টদের পাওনা ১৯৮.৮৫ কোটি টাকাও পরিশোধ করেনি কোম্পানিটি।

এ তথ্য ইভ্যালি নিজেই পরিদর্শন দলকে সরবরাহ করেছিল জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব তথ্যের সঠিকতা যাচাই করতে ইভ্যালির রেপ্লিকা ডাটাবেইজে পরিদর্শন দল প্রবেশ করতে চাইলেও কোম্পানিটি সে সুযোগ দেয়নি। ইভ্যালির প্রকৃত দেনার পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ই-কমার্স ছাড়াও ইভ্যালিতে ইফুড, ইজবস, ইবাজার, ইহেলথ, ফ্লাইট এক্সপার্ট অন্তর্ভূক্ত করার তথ্য তুলে ধরে মোহাম্মদ রাসেল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লিখেছেন, এসব উদ্যোগ কোম্পানির সার্বিক ব্রান্ড ভ্যালুকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

গত এক মাসে ২.৭৪ লাখ পুরাতন অর্ডার সরবরাহ করার দাবি করে ইভ্যালি বলেছে, গ্রাহকদের পুরাতন অর্ডার ডেলিভারি করা ও মার্চেন্টদের দেনা পরিশোধ করতে আগামী ২২ আগস্ট থেকে ইভ্যালির অফিস চালু করা হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান গণমাধ্যম কে বলেন, ইভ্যালি কোম্পানির দায়-দেনার হিসাব জমা দিয়েছে।

গ্রাহকদের কাছ থেকে মোট কতো টাকা ইভ্যালি নিয়েছে এবং গ্রাহক-মার্চেন্টদের পাওনার পরিমাণ ও পরিশোধের বিজনেস পরিকল্পনার তথ্যও চাওয়া হয়েছে। সব তথ্য পাওয়ার পর সরকার গঠিত এ সংক্রান্ত কমিটি বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান বলেন, একটি কোম্পানির ব্রান্ডভ্যালু বিবেচনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে ওই কোম্পানির সম্পদের প্রকৃত বাজারমূল্য কতো।