মহররম ও আশুরা: সহিহ হাদিসের আলোকে আশুরায় করণীয়

উপ-সম্পাদকীয়/মতামত

মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী : এ মাসের ১০ তারিখ, সামনের শুক্রবার ২০/০৮/২১ ‘আশূরা’র দিনে এবং তার ১ দিন আগে অথবা পরে সিয়াম পালনের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। আশূরার সিয়াম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:


বিজ্ঞাপন

আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আশুরার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বললেন, “তা বিগত এক বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়।” (মুসলিম ১১৬২, আহমাদ ২২০২৪, ২২১১৫)।


বিজ্ঞাপন

এ দিনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে সিয়াম পালন করতেন, তাঁর উম্মাতকে সিয়াম পালনে উৎসাহ দিয়েছেন এবং ১০ তারিখের সাথে সাথে ৯ বা ১১ তারিখেও সিয়াম পালন করতে উৎসাহ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার অথবা শুক্রবার ও শনিবার রোজা রাখা ছাড়া দিনে বা রাতে আর কোন আশুরার ইবাদত সহিহ হাদিসে নেই। যা ফজিলতের নামে প্রচলিত আছে, তা বানোয়াট ও মিথ্যা।

সহীহ হাদীসের আলোকে আশুরার গুরুত্বের কারন :
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদ্বীনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীগণ ‘আশূরার দিনে সওম পালন করে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কি ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে সওম পালন কর কেন?) তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল হতে নাজাত দান করেন, ফলে এ দিনে মূসা (আঃ) সওম পালন করেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ঃ আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসার অধিক নিকটবর্তী, এরপর তিনি এ দিনে সওম পালন করেন এবং সওম পালনের নির্দেশ দেন। সূত্রঃ সহীহ বুখারী ২০০৪, মুসলিম ১৩/১৯, হাঃ ১১৩০)

সহীহ হাদীস থেকে মুহাররম মাস ও আশুরা সম্পর্কে শুধু এতটুকুই জানা যায়। পরবর্তীকালে অনেক বানোয়াট ও মিথ্যা কাহিনী এক্ষেত্রে প্রচলিত হয়েছে।

মিথ্যাবাদীরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামে জালিয়াতি করে বলেছে:
(১) আশুরার দিনে আল্লাহ আসমান ও যমিন সৃষ্টি করেছেন।
(২) এ দিনে তিনি পাহাড়, পর্বত, নদনদী…. সৃষ্টি করেছেন।
(৩) এ দিনে তিনি কলম সৃষ্টি করেছেন।
(৪) এ দিনে তিনি লাওহে মাহফূয সৃষ্টি করেছেন।
এ দিনে তিনি আরশ সৃষ্টি করেছেন।
(৫) এ দিনে তিনি আরশের উপরে সমাসীন হয়েছেন।
এ দিনে তিনি কুরসী সৃষ্টি করেছেন।
(৬) এ দিনে তিনি জান্নাত সৃষ্টি করেছেন।
(৭) এ দিনে তিনি জিবরাঈলকে (আ) সৃষ্টি করেছেন। …ইত্যাদি

এরূপ অগণিত ঘটনা এ মাসে বা এ দিনে ঘটেছে এবং ঘটবে বলে উল্লেখ করেছে জালিয়াতরা তাদের এ সকল কল্প কাহিনীতে। মোট কথা হলো, আশুরার দিনে মূসা (আ) ও তাঁর সাথীদের মুক্তি পাওয়া ছাড়া আর কোনো ঘটনা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।