বিশেষ প্রতিবেদক : জুলাইয়ের শুরু থেকেই যেন হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। মাসের তেরো তারিখেই ছাপিয়ে গেছে জুন মাসের রেকর্ড। অধিদপ্তরের হিসেবেই গত আট দিনে গড়ে প্রতিদিন এক’শ ষাট জন করে রোগী ভর্তি হয়েছে। শঙ্কা আছে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত তারা। তবে এই ভয়াবহতার জন্য নগর প্রশাসনকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু।
দেশে ডেঙ্গুর শুরু সেই ২০০০ সালে। সেবার আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ’শ হলেও মৃতের সংখ্যা ছিলো ৯৩। এর পরে ২০০৩ সালে আবার বাড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ২০০। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত দুইবার ছাড়িয়ে যায় তিন হাজার। তবে ১৬-তে এসে তা দাড়ায় ৬০৬০ জনে। একবছর বাদে আরো ভয়াবহ রূপ নেয় ডেঙ্গু, আক্রান্ত হন ১০ হাজার ১৪৮ জন, মৃতের সংখ্যা ২৬।
২০১৮ সালের ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্যের দিকে তাকালে দেখা যায় জুন মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ২৯৫ জন আর জুলাইতে ৯৪৬ জন। যদিও আগস্ট আর সেপ্টেম্বরে তা ছিলো ক্রমবর্ধমান। অক্টোবর আর নভেম্বরে এই সংখ্যা ছিলো দুই হাজারের উপরে।
তবে এবারে যেন সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে ডেঙ্গু। চলতি মাসের সবশেষ দশ দিনে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৫০০। যা ১৩ তারিখে ছুঁয়েছে দুই হাজার। এ নিয়ে এ বছর আক্রান্তের সংখ্যা। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে রেকর্ড ছাড়াবে এবারের ডেঙ্গু।
ডা. এ কে এম শামসুল কবীর বলেন, ২০০০ সালের আগে ডেঙ্গু অফিসিয়ালি ডায়গোনেসিস হয়নি। গত ২০ বছরের মধ্যে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রাজধানী জুড়ে প্রায় দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ শতাধিক সেবিকাকে দেয়া হয়েছে ডেঙ্গু মোকাবিলায় বিশেষ প্রশিক্ষণ। এর আওতায় আছে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, তাই এখনো সঠিক সেবা নিশ্চিতের বিষয়ে আশাবাদী তারা।
ডা. একে এম আকতারুজ্জামান বলেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই, যে ন্যাশনাল গাইডলাইন, সেটি যদি আমরা ফলো করি, তাহলে যেকোনো পরিস্থিতি আমরা কন্ট্রোল করতে পারবো।
তবে এমন পরিস্থিতির জন্য দুই সিটি করপোরেশনের অবহেলাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমদ, জরিপ অনুযায়ী যদি সিটি কর্পোরেশন ব্যবস্থা নেয়, আর যদি আমাদের বাহকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারে তাহলে বেশি প্রকোপটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারা উচিৎ।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, প্রতিশ্রুতি আর ক্র্যাশ প্রোগ্রামের নামে প্রহসনের মধ্য দিয়ে জনস্বাস্থ্যের এই হুমকিকে যারা পরোয়া করছেন না, জনগণের কাটগড়ায় তাদের কিন্তু দাঁড়াতেই হবে। সেক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়েও সচেতনতা সৃষ্টি জরুরি বলে মনে করেন তারা।