বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন

উপ-সম্পাদকীয়/মতামত

এইচ এম মেহেদী হাসান
জাতি রাষ্ট্রের স্রষ্টা, ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছর সরকার পরচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন আর এই অল্প সময়ের মধ্যে-ই তিনি অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেননি শুধু, সমৃদ্ধিশালী জাতি গঠনে রেখে গেছেন অনন্য, অতুলনীয় অর্থনৈতিক দর্শন। ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া নতুন সংবিধানে দারিদ্র্য মুক্তির চমৎকার পথনির্দেশনা দিয়েছেন।
ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করতে বলিষ্ঠ কন্ঠে ব্যক্তি করেছেন প্রতিশ্রুতি। গরীব-দু:খী সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ গ্রােেম পরিশ্রমী কৃষক যারা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে অনেক খেটে ফসল ফলান তাদের সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিজের দেওয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ছিলেন নির্ভীক।
একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রের অর্থনীতি শক্তিশালীকরণে কতটা এক্সপার্ট, কতটা দূরদর্শী, কতটা সাহসিক রাষ্ট্রনায়কচিন্তা থাকা প্রয়োজন তার সবটুকুই ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনে। সুতরাং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন অর্থনীতিবিদ না হয়েও কিভাবে তিনি এত দ্রুত একটি ধ্বংসাবশেষ রাষ্ট্রকে অর্থনীতির মূল কাঠামোর ওপর দাঁড় করিয়ে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন তা আজ গবেষণা ও চিন্তার খোড়াক হিসেবে দেখা আবশ্যক।
১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান দু’টি রাষ্ট্রের জন্মলাভের পর থেকেই পাকিস্তান অংশের পূর্ব বাংলা (বাংলাদেশ) শাসনের নামে শোষণ, নির্যাতন, বৈষম্যের স্বীকারে পরিণত হয়ে আসছিল।
কলকারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান সেই অর্থে পূর্ব বাংলায় গড়ে ওঠেনি। অর্থনীতি বিষয়ে সম্যকজ্ঞান থাকলেই এই বৈষম্যের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা সম্ভব। যেহেতু এই অঞ্চলে শিল্প কলকারখানা গড়ে ওঠেনি, সেই কারণেই অর্থনীতির তেমন কোন ভিত্তি রচিত হয়নি।
সত্যিকারার্থে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্ব বাংলাকে প্রতিপক্ষ ভাবতো আর সেটার জের পরে সাধারণ জনগণের ওপর। ধীরে ধীরে পাকিস্তান পূর্ব বাংলাকে অর্থনীতির সূচকে শূণ্যে পরিণত করতে সক্ষম হয় অর্থাৎ পাকিস্তানের নিউক্লিয়াস চিন্তার প্রথম ধাপে সফল হয়।
এই সব শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের নির্যাতিত নিষ্পেষিত জাতির মহান নেতা, বাঙালি জাতির মহান নেতা ও স্বাধীনতার একমাত্র স্বপ্নদ্রষ্টা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিরুদ্ধচারণ করেন এবং চব্বিশ বছরের গ্ল্যানি দু:খ, না পাওয়ার বেদনা, বৈষম্য দূর করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মোক্ষম সময় হিসেবে বেঁচে নেন ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ। বঙ্গবন্ধু তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভাষণে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ দেন এবং বাঙালি জাতির মুক্তির পথ উন্মোচন করেন। এরই মধ্যে সারা বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হতে থাকে এবং বাংলার আপামর সাধারণ মানুষ সত্যিকারের স্বাধীনতার প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়।
বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক প্রবজ্ঞা, সততা, সাহস, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, বাগ্মিতা তাঁকে চূড়ান্ত সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়।
তৎকালীন পাকিস্তান জান্তা সরকারও বসে থাকেনি। ওরা বাংলাকে শশান করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং পৃথিবীর জঘন্যতম গণহত্যা (অপারেশন সার্চলাইট) শুরু করে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে। তারপূর্বেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫মার্চ রাত ১২টা ১৫মিনিটে (ইংরেজি হিসেবে) ২৬মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ও তা চট্রগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান পাঠ করে শোনান এবং ইপিআরের মাধ্যমে ওয়ারলেস যোগে সারা দেশে প্রচারিত হয়। স্বাধীনতার ঘোষণার পরপরই বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর সেলের পাশে তাঁর জন্য কবর খোঁড়া হয়, তাঁকে অমানসিক নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখানো হয় কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর নীতি আদর্শে অটল থাকেন।
বাংলাদেশের মানুষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭-ই মার্চের ভাষণ ও ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণার আলোকে তুমূল প্রতিরোধ তৈরি করে।
দলে দলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের নারী পুরুষ। ১৯৭১সালের ১০এপ্রিল মুজিবনগরে গঠিত হয় প্রবাসী সরকার ও ১৭এপ্রিল প্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ গঠন। সেখানে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যেহেতু বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি, তাঁর অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ ও অন্যান্যরা।
শরীরি বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের মাঝে উপস্থিত ছিলেন না কিন্তু এই মহান ব্যক্তির নামেই মুক্তিযুদ্ধ করেছে এদেশের মানুষ। আমাদের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সহায়ক। বিশেষ করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহান নেত্রী শ্রীমতি ইন্ধরা গান্ধী’র ভূমিকা কিংবা তাঁর অবদান বাংলাদেশের মানুষ কোনদিন ভুলবে না। বাংলাদেশের প্রায় দেড় কোটি শরণার্থীদের পাশে ছিলেন এবং সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য সমগ্র পৃথিবী চষে বেড়িয়েছেন। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। তবে যুদ্ধে বাংলাদেশের অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তানের হায়েনারা। অবকাঠামো ধ্বংসের পাশাপাশি পাকিস্তানের দোষর, রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের সহযোগিতায় বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর পূর্ব মুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর বেঁছে বেঁছে বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে চিরতরে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দেয়। ত্রিশ লাখ মানুষের রক্ত ও আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম লুন্ঠনের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর দেশ বিজয় লাভ করে।
কিন্তু তখনও স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের অন্ধকার কারাগারে বন্দি। বাঙালি ভাগ্য পরিবর্তনকারী মহান নেতার শূণ্যতা বাঙালির মনে আনন্দ উল্লাসের অন্তরায় হিসেবে প্রকাশ পায়।
১৯৭২ সালের ৮জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনাশর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি মুক্তি লাভ করে লন্ডন হয়ে ভারত হয়ে ১০জানুয়ারি তাঁর আজীবনের লালিতস্বপ্নের সোনার বাংলায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং রাতেই তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে দেশকে গড়ার কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, অনেক বিষয়ে শুধু টার্চ করে এসেছি, কারণ আমার লেখার মূলবিষয়বস্তু বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতি দর্শন। সুতরাং তাই শুধুমাত্র যেসব বিষয়ে একেবারে না লিখলেই চলে না, তা শুধু লিখেছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন বাংলাদেশকে গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন, তখন বাংলাদেশের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যেমন থাকার কথা…
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভাষণের একটি অংশে স্পষ্ট করে বলেন, ‘ফেরাউনে দলেরা সব ধ্বংস করে দিয়েছে’ হেনরি কিসিঞ্জার তুচ্ছতাচ্ছল্য করে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল (বটমলেস বাস্কেট) বঙ্গবন্ধু সরকার সেই তলাবিহীন ঝুড়ির দেশটাকে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে গড়ে তোলেন স্বল্পোন্নত দেশে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিতে যতগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে তার চাইতে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় সদ্য স্বাধীন দেশকে গড়ার জন্য। স্বাধীনতা অর্জন করা যতটা কঠিন, স্বাধীনতা রক্ষা করা তার চাইতে বেশি কঠিন।
একটি দেশের যুদ্ধের পরে প্রতি বিপ্লব আসবে এটাই স্বাভাবিক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেই দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক (বাকশাল) দিলেন, তখনই না বুঝে না শুনে কিংবা অজ্ঞতার কারণে অনৈক্য, অসতর্কতা সবকিছু অঙ্কুরেই বিনিষ্ট করে দেয়।
আজ এত বছর পরও বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনকে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক মনে হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তা-চেতনায় এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ছিল মূল কেন্দ্রবিন্দু। সমাজের পিছিয়ে পড়া, ভাগ্যবিড়ম্বিত নিপীড়িত বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে তিনি সেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তা নিয়ে শুরুতে কারো কারো মনে সংশয়, শঙ্কা, সন্দেহ দেখা দিলেও একটি পর্যায়ে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হতে শুরু করল এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধির প্রকাশ ঘটাতে শুরু করল তখন সবাই এ অসাধারণ মহান নেতার বিজ্ঞোচিত অর্থনৈতিক দর্শনের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কাঠামোতে যে বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তাহলো সাধারণ জনগণের উন্নয়নের মাধ্যমে সর্বোচ্চ জনকল্যাণ নিশ্চিত করা। যা আজকের সময়ের প্রেক্ষাপটে অর্থাৎ তাঁর-ই কন্যা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মুজিবশতবর্ষ ও স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করেছে আর এই মধ্যম আয়ের দেশের অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, তিনি একটি লেখায় মতামত ব্যক্ত করেছেন এইভাবে -বঙ্গবন্ধু যে ধারনাটি পোষণ করতেন তাহলো, দেশের মানুষ যদি হতদরিদ্র থাকে তবে দেশও হতদরিদ্র থাকবে। কাজেই মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে যখন মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলা যাবে তখন দেশও সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর অর্থনীতির ধারণায় সম্পদের সুষম বন্টন ও সম্পদ সৃষ্টির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এ দু’টি উপাদানই মানবিক উন্নয়নের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত।’
রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় দারিদ্র্য দূরীকরণের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ভূমি ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনেন এবং শিল্প বিকাশের নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রদান, কৃষির আধুনিকায়নে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করেন। পাশাপাশি সমবায় চেতনা বিকাশে শুরু করেছিলেন নানা কর্মযজ্ঞ। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সমাজের সব মানুষের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া, উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, নারী জাগরণ ও ক্ষমতায়ন কর্মসূচি ছড়িয়ে দিতে সবসময় বঙ্গবন্ধুর ভাবনাজুড়ে ছিল সাধারণ জনগণ। দেশের আনাচে -কানাচে ছড়িয়ে থাকা পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে তিনি গ্রহণ করেছিলেন যুগান্তকারী নানা পদক্ষেপ।
জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকারের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, সামাজিক সূচকে আমাদের কেমন অগ্রগতি অর্জন করতে হবে, বিশ্বমানের মানবসম্পদ কীভাবে গড়ে তোলা সম্ভব তার সবই রয়েছে মানবতার মুক্তির মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অর্থনৈতিক দর্শনে। রাষ্ট্রীয়ভাবে দারিদ্র্য মুক্তির লড়াইয়ে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা শুধু বাংলাদেশেই প্রাসঙ্গিক তা নয়, পিছিয়ে পড়া অন্য জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য হতে পারে পথনির্দেশক। আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার সোপান হিসেবে জাতীয় বাজেট প্রণয়নে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে মোটেও কার্পণ্য করেননি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সদ্য স্বাধীন দেশের বাজেট বিশ্লেষণে সেই চিত্রটি-ই ফুটে উঠেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুর্নবাসনের পাশাপাশি নতুন অবকাঠামো তৈরিতে সচেষ্ট হয়েছিল জাতির পিতার নেতৃত্বাধীন সরকার।
সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে বঙ্গবন্ধুর বিজ্ঞ এবং সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির উজ্জ্বল প্রকাশ ঘটে বঙ্গবন্ধুর সরকারের নানা কর্মসূচিতে।
মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃঢ়তার সাথে প্রশাসনকে পরিচালিত করতে দুর্নীতি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে সবকিছুর আগে ছিল দেশের স্বার্থ। তাঁর ব্যক্তিত্বের অসাধারণত্ব আজো বিরল, বলা চলে। তাঁর দৃঢ়চেতা মনোভাব এবং জাদুকরী সম্মোহনী শক্তি যে কোনো কঠিন বাঁধা দূর করতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখত। বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ অর্জন করেছিল বেশ কিছু অসাধারণ সাফল্য। স্বাধীনতার পর গৃহীত প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট খাতভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ করা হয়।
প্রণীত বাজেটগুলোতে কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের জন্য উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ থেকে প্রতীয়মান হয় বঙ্গবন্ধু সরকার কৃষি ও শিল্প উভয় খাতেই প্রায় সমান গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। পর্যুদস্ত অর্থনীতিকে উন্নয়নের সোপানে উন্নীত করতে এ খাত দু’টিকেই গুরুত্বারোপ করাই ছিল জাতীয় উন্নয়ন নীতি। এই জাতীয় নীতির বাস্তবায়নে সরকার শিল্পের রাষ্ট্রীয়ত্তকরণ এবং ভূমির মালিকানায় কৃষকের স্বত্বসহ ২৫বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করার ও কৃষির আধুনিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তখনো বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটে বিদেশী বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য ছিল না। তাই দেশীয় সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার ও উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। দেশীয় পণ্য উৎপাদন করে নিজস্ব চাহিদা পূরণ ও রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন যদিও তাৎক্ষনিকভাবে কষ্টসাধ্য, তবুও বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বিদেশি ঋণনির্ভর না হয়ে একটি সফল শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলতে। জাতি রাষ্ট্রের মহান নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষি খাতের পুর্নগঠন ও উন্নয়নে বেশি গুরুত্বারোপ করেন। খেটে খাওয়া গরীব দু:খী সাধারণ মানুষের কল্যাণ কামনায় সদা নিবেদিতপ্রাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার কৃষকের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পোষণ করেন আমৃত্যু পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু এদেশের সাধারণ মানুষের কাছে মুজিব ভাই হিসেবেই বেশি প্রাধান্যতা পায়। তিনি কখনই দেশের রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে মনে করতেন না। তিনি গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত এলাকায় বহু জায়গায় গেছেন। পেয়েছেন কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের অকৃত্রিম প্রীতি, হৃদয় নিংড়ানো স্নেহ, মমতা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। এই উভয় দিকের পারস্পরিক ভালোবাসার নিখাদ ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বন্ধুত্বকে আজীবন মনে রেখেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ গ্রামবাংলায় বাস করতেন। জাতীয় আয়ের অর্ধেকেরও বেশি আহরিত হতো কৃষি খাত থেকে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অমানুষিক পরিশ্রম করে যে কৃষক দেশের সব মানুষের অন্নের জোগান দিচ্ছেন, সে কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অর্থনৈতিক দর্শনের কিছু মধ্য দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ছিল প্রথমত, স্বনির্ভরতা, যতটা সম্ভব দেশের সম্পদ ব্যবহার করা। দ্বিতীয়ত, বিদেশ ও দাতাদের কাছ থেকে শর্তহীন অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে স্বাগত জানানো এবং ক্রমান্বয়ে এ ধরণের নির্ভরতা হ্রাস করা। তৃতীয়ত, ১৯৭৪ সালের শুরুতেই বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সীমা ২৫লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা করা হয়। কাজেই বেসরকারি খাতকে বঙ্গবন্ধু উপেক্ষা করেছেন, এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না। উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও দুর্নীতি হ্রাস, উন্নয়নের জন্য সম্পদ সংগ্রহ। এটাই হলো বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের মূল কথা।
বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বগুণের কারণেই ১৯৭৫সালের শুরু খেকে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন বাড়তে শুরু করেছিল।
কৃষি উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ছিল, বৈদেশিক সাহায্যের সঠিক ব্যবহার বাড়ছিল, মূল্যস্ফীতি কমে আসছিল। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির অন্যতম হিসেবে সমাজতন্ত্রের চেয়ে পুরোপুরি ভিন্ন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিতকরণে নিয়েছিলেন বহুমুখী পরিকল্পনা, দিয়েছিলেন অর্থনীতির নতুন ফর্মুলা। তাঁর-ই উদ্ভাবিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন দর্শন বাস্তবে রুপ দিতে অন্যতম মৌল উপাদান হিসেবে সমবায়ের অন্তর্নিহিত শক্তি পুরোযাত্রায় ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তাঁর দর্শন মতে, দেশে দারিদ্র্য বলে কোনো শব্দ থাকবে না। প্রতিটি মানুষ আর্থিক সক্ষমতা নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবে। এখানে কোনো সামাজিক, অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকবেনা। কেউ কাউকে শোষণ করবেনা। বঞ্চিত করবেনা তার প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার থেকে।
বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ‘ঔপনিবেশিক কৃষিব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সবাইকে এক ছাতার নিচে আনতে তাই তিনি গঠন করেছিলেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)। তিনি মনে করতেন এই ব্যবস্থাটির মাধ্যমে ‘শোষিতের গণতন্ত্র, সমাজদর্শন বা অর্থনীতির অর্থনৈতিক এই দর্শনটি’। তিনি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। সেই ১৯৫২ সালের চীন ভ্রমণের সময় থেকে (যা তাঁর আমার দেখা নয়াচীন, গ্রন্থপাঠে জানা যায়)।
বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র ধ্রুপদি মার্কসবাদী সমাজতন্ত্র ছিল না। তিনি শ্রমিক শ্রেণির পার্টি বা চীনের কমিউনিস্টদের একনায়কত্ব চাননি। চেয়েছিলেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সব দেশ প্রেমিক শক্তির সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে, বাংলাদেশের মানুষের মতো করে সমাজতন্ত্র নির্মাণ করতে। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছিলেন। সমাজে অল্প লোকের হাতে ব্যাংক-বীমা-বৃহৎ ও ভারী শিল্প, ব্যবসা – বাণিজ্য, শতশত বিঘা জমি ইত্যাদি কেন্দ্রীভবনের বিরোধী ছিলেন।
অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, তাঁর মতে তিনি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা, ১৯৬৯ এর ১১ দফা এবং ১৯৭০-এর নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে এসব কথা বারবার এসেছে। তিনি ব্যক্তিমালিকানায় সম্পদের সিলিং বা সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। ১৯৭২-এর সংবিধানে তা আছে। সমবায় ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাকে তিনি অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।
‘দ্বিতীয় বিপ্লব’-এর বক্তৃতাগুলোতে তা আছে। তিনি শোষণ বিরোধী ছিলেন। তিনি জনকল্যাণের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র, গৃহ, কর্ম ও নিরাপত্তাকে বাজারের পণ্য নয়, বরং প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন ছিল সোশ্যাল ডেমোক্রেসি বা কল্যাণ ধনতন্ত্রের দর্শন। তাঁর এই দর্শন বাংলাদেশের সংবিধানের আদি অসংশোধিত রুপের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। তাই ‘৭২-এর সংবিধান কার্যকরী করা সম্ভব হলে তাঁর অর্থনৈতিক দর্শন কার্যকরী হবে। কিন্তু তা কার্যকরী করা মোটেও সহজ নয়। পুঁজিপতি শ্রেণি,বিশেষ করে লুটেরা পুঁজিপতি শ্রেণি, সব শোষক শ্রেণি, উচ্চাভিলাষী উঠতি মধ্যবিত্ত অসৎ ব্যবসায়ী ও অসৎ আমলাতন্ত্র (সিভিল ও মিলিটারি) তাঁর উল্লিখিত অর্থনৈতিক দর্শনের প্রবল বিরোধিতা করবেন।
অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশের মতে বর্তমান আওয়ামী লীগ ও তার বিরোধিতা করবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আমৃত্যু কথা,বক্তৃতা জীবন, সংগ্রাম, লেখনী ঘাটলে এসব বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। এর পরও এর বাস্তবায়নযোগ্যতা বা প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন। তবে আমি বলব, শ্রমিক-কৃষক-নি¤œবিত্ত জনগণ ও সৎ (বুদ্ধিজীবী + ব্যবসায়ী + আমলা+ রাজনৈতিক) নেতৃত্ব যদি ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের শত্রুদের প্রতিরোধ করতে না পারেন, তাহলে বঙ্গবন্ধুর এই অর্থনৈতিক দর্শন আগে যেমন পরাজিত হয়েছিল, এখনও তেমনি পরাজিতই থাকবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্ধৃতি। আব্দুল মান্নান (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান) দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত ‘সত্য কথা তো সকলে পছন্দ করেনা’ (২৭ জুন ২০১৯ সংখ্যা) লেখায় লিখেছেন ‘১৯৭৫ সালে সংসদে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, আওয়ামী লীগ একটি মাল্টি ক্লাস পার্টি। আমি তার নামের আগে কৃষক শ্রমিক লাগিয়েছি বৈকি, কিন্তু দলটির চরিত্র এখনও বদলাতে পারিনি, রাতারাতি সব সম্ভবও নয়। আমার দলের নব্য ধনীরাও আছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় তাদের লুটপাটের সুযোগ বহুগুণ বেড়ে গেছে। আমি তাদের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই বাকশাল করেছি। যদি এই ব্যবস্থা সফল করতে ব্যর্থ হই এবং আমার মৃত্যু ঘটে, তাহলে দলকে কবজা করে ওরা আরও লুটপাটে উন্মত্ত হয়ে উঠতে পারে। এমনকি শত্রুপক্ষের নীতি ও চরিত্র অনুসরণ করে স্বাধীন বাংলাদেশের মূলমন্ত্র, এমনকি আওয়ামী লীগের চরিত্র ও নীতি পাল্টে ফেলতে পারে। যদি তা হয়, সেটাই হবে আমার দ্বিতীয় মৃত্যু। সে জন্য আগেই বলেছি, আমার দল, আমার অনুসারীদের হাতেই যদি আমার দ্বিতীয় মৃত্যু ঘটে, তাহলে দীর্ঘকালের জন্য বিস্মৃতির অন্ধকারে চলে যেতে হবে। কবে ফিরব তা জানি না।’
ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের বিস্মৃতি অন্ধকারে যেতে হয়নি, হবেও না। লুটেরা শাসক শ্রেণি ও প্রতিক্রিয়াশীলরা শাসক দল আওয়ামী লীগকে পাল্টে দিয়ে বা হটিয়ে দিলেও বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের প্রাসঙ্গিকতা চিরসবুজ আছে এবং থাকবে।
বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক দর্শন এখনো পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি কিংবা কাজে লাগানো যাচ্ছে না বিভিন্ন কারণে। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি আদর্শ ও তাঁর অর্থনৈতিক দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই দেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে তাঁর-ই কন্যার হাত ধরে। জাতির পিতার দর্শন, চিন্তা-চেতনার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর বুকে উন্নতসমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দেশ।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সাবেক সহসভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।


বিজ্ঞাপন