আশুলিয়ায় পরকীয়ার বলি ডিস ব্যবসায়ী স্বামী

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) সূচনালগ্ন থেকেই অত্যন্ত সুনাম,দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে খুন,ডাকাতি সহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর অপরাধের মূল রহস্য উদঘাটন ও অপরাধী গ্রেফতারের মাধ্যমে অপরাধ নির্মূল ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এরই ধারাবাহিকতায় পিবিআই ঢাকা জেলা পুলিশ গত ২৩/০৮/২০২১ খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান ০৮:০০ ঘটিকায় আশুলিয়া জামগড়া এলাকা থেকে আশুলিয়া থানাধীন কাঠগড়াস্থ ডিস ব্যবসায়ী এলিম সরকার(৪২) হত্যার সাথে জড়িত স্ত্রী মোসাঃ সুলতানা আক্তার কেমিলি (৩০) এবং পরকীয়া প্রেমিক মোঃ রবিউল করিম পিন্টু (৩৫) দ¦য়কে ২৪/০৮/২০২১ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ১৯:০০ ঘটিকায় আশুলিয়া জিরাবো এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
গত ইং ২৭/০৩/২০২১ ইং রাত অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় অন্যান্য দিনের ন্যায় রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে আশুলিয়া থানাধীন কাঠগড়াস্থ ডিস ব্যবসায়ী এলিম সরকার(৪২) তার স্ত্রী সন্তান সহ ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন অর্থাৎ ২৮/০৩/২০২১ ইং সকাল অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় উক্ত এলিম সরকারের স্ত্রী মোসাঃ সুলতানা আক্তার কেমিলি (৩০) ঘুম হইতে জেগে জরুরী প্রয়োজনে তার শ্বশুড় ফজল হক সরকারের বাড়িতে আসে। বাড়ির অন্যদের সাথে আলাপ আলোচনা শেষে উক্ত দিন সকাল অনুমান ১০.০০ ঘটিকায় তার বাড়িতে ফিরে ভিকটিম এলিম সরকার এর গলার নিচে ১ টি, পেটে ১১ টি ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের ১ টি কাটা গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে মর্মে দেখতে পায়। এ বিষয়ে ভিকটিম এলিম সরকারের পিতা ফজল হক সরকার বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা নং-৬৮ তারিখ-২৮/০৩/২০২১ ধারা-৩০২/৩৮০/৩৪ দঃবিঃ দায়ের করেন।
মামলাটি আশুলিয়া থানা পুলিশ হতে পিবিআই ঢাকা জেলায় তদর্ন্তে জন্য প্রাপ্ত হলে পুলিশ সুপার পিবিআই ঢাকা জেলা এসআই সালে ইমরানকে মামলাটির তদন্তভার অর্পণ করেন। পিবিআই ঢাকা জেলায় মামলাটি তদন্তে কালে জনাব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম পিপিএম-সেবা, পুলিশ সুপার পিবিআই ঢাকা জেলা’র বিচক্ষনমুলক নির্দেশনায় এবং যোগ্য নেতৃত্বে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ সালে ইমরান শক্তিশালী গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, জনৈক রবিউল করিম পিন্টু আশুলিয়া এলাকায় পল্লী বিদ্যু সমিতিতে লাইন ম্যান হিসেবে চাকুরী করে। চাকুরীর সুবাধে ভিকটিম এলিম সরকারের বাসায় বিদ্যুৎ এর মিটার লাগানোর কাজ করতে গিয়ে ভিকটিমের স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমিলির সাথে তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি সুলতানা আক্তার কেমিলির স্বামী ভিকটিম এলিম সরকার টের পেয়ে গেলে তিনি তার স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ডেকে তা প্রকাশ করে দিবেন বলে জানান। এই ঘটনা নিয়ে তাদের মধ্যে মারাত্মক দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। উক্ত পরকীয়া বিষয়টি যাতে অন্য কেউ জানতে না পারে তার জন্য ঘটনার এক সপ্তাহ আগে ভিকিটমের স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমিলি এবং তার পরকীয়া প্রেমিক রবিউল করিম পিন্টু মিলে এলিম সরকারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরকীয়া প্রেমিক পিন্টু ভিকটিমের বাসায় দুজন ভাড়াটিয়া খুনি বাসা ভাড়া করে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। তারা কাজটি না করতে পারায় পিন্টু নিজেই কাজটি করার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ২৮ মার্চ সকাল অনুমান ০৮-০৯ টার মধ্যে কেমিলির পরামর্শে পিন্টু তার এক বন্ধুকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেমিলি রাতের বেলা দই এর সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে এলিম সরকার কে খাইয়ে দেয়। উক্ত ঘুমের ট্যাবলেট গুড়া করে কেমিলিকে সরবরাহ করে পিন্টু। ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে এলিম সরকার নিস্তেজ হয়ে গেলে সকাল বেলায় তারা ভিকটিমকে চাকু দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এবং বাসায় সংযোগ থাকা সিসি ক্যামেরা ও ডিভিআর নিয়ে পালিয়ে যায়। তদন্তকারী কর্মকর্তা তার দল নিয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা তথ্য ও পিবিআই এর অত্যাধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ২৩/০৮/২০২১ খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান ০৮:০০ ঘটিকায় আশুলিয়া জামগড়া এলাকা থেকে খুনী পরকীয়া প্রেমিক মোঃ রবিউল করিম পিন্টু (৩৫), পিতা- মোঃ আঃ সামাদ, স্থায়ী সাং-তেলটুপি, থানা- গুরুদাসপুর, জেলা- নাটোর, এ/পি- সাং- পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জামগড়া, থানা- আশুলিয়া, জেলা- ঢাকাকে গ্রেফতার করে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক ভিকটিম এলিম সরকারের খুনী স্ত্রী মোসাঃ সুলতানা আক্তার কেমিলি (৩০), স্বামী- মৃত এলিম সরকার, সাং- কাঠগড়া সরকার বাড়ি, থানা- আশুলিয়া, জেলা- ঢাকাকে ২৪/০৮/২০২১ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ১৯:০০ ঘটিকায় আশুলিয়া জিরাবো এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুজনেই এই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে। পলাতক অপরাদীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে আজ ২৫/০৮/২০২১ খ্রিঃ তারিখ দুপুর ০১:৩০ ঘটিকায় পিবিআই, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, পিপিএম-সেবা বলেন, আসামী সুলতানা আক্তার কেমিলি (৩০) ভিকটিম এলিম খানের স্ত্রী। রবিউল করিম পিন্টু আশুলিয়া এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে লাইন ম্যান হিসেবে চাকুরী করার সুবাদে ভিকটিমের এবং ভিকটিমের স্ত্রী সাথে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে ভিকটিমের স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমিলি এর সাথে আসামী রবিউল করিম পিন্টু এর মধ্যে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাস পরকীয়া প্রেম শুরু হয় । এই পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি ভিকটিম টের পেয়ে গিয়ে তার বাসায় সিসি টিভি ক্যামেরা সংযোগ স্থাপন করে এবং তাদের পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি ভিকটিমের কাছে ধরা পড়িলে ভিকটিম বিষয়টি তার ও তার স্ত্রীর উভয় পরিবারের সদস্যদেরকে জানানোর হুমকি দেয়। তখনই ভিকটিমের স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমিলি, তার পরকিয়া প্রেমিক রবিউল করিম পিন্টু তাদের পথের কাটা ভিকটিম এলিম সরকারকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। তাদের পরিকল্পনা মতে ঘটনার আগের রাতে দই মিষ্টির সাথে ঘুমের ঔষধের গুড়া মিশিয়ে ভিকটিমকে খাওয়ালে ভিকটিম অচেতন হয়ে যায়। তখন ২৮/০৩/২০২১ তারিখ সকাল বেলা আসামী সুলতানা আক্তার কেমিলি, রবিউল করিম পিন্টু এবং পিন্টুর এক বন্ধু সহ ভিকটিমকে ঘরের ভিতরে চাকু দিয়ে গলায় বুকে পেটে কুপিয়ে হত্যা করে
লিখুন


বিজ্ঞাপন