সমাজ সেবা অধিদপ্তরের ই সেবা প্রয়োজন!

অপরাধ

তিন যুগের পুরোনো জনবল কাঠামোতে চলছে সমাজসেবা অধিদপ্তর, নাবালক থেকে সাবালক হয়ে ওঠা আর হলো না তাই অন্যের সেবা দিবে কিভাবে?

আজকের দেশ রিপোর্ট : সঠিক সেবার অভাবে সমাজ সেবা অধিদপ্তর ই ঠিকমত বেড়ে উঠতে পারেনি, নাবালক থেকে সাবালক হয়ে ওঠা আর হলো না তাই অন্যের সেবা দিবে কিভাবে? সুসংহত ও বিকাশমান সামাজিক সেবা দেয়ার মাধ্যমে জনগণের জীবনমানের সমন্বিত উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সমাসেবা অধিদপ্তর। সময়ের পরিক্রমায় ১৯৭৪ সালে গঠিত এই অধিদপ্তরের কাজ বেড়েছে বহুগুণ। ১৯৮৪ সালেও এ অধিদপ্তর হাতেগোনা দু-তিনটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করত। বর্তমানে এ অধিদপ্তরের কর্মসূচি অর্ধশতাধিক। তবে কাজের পরিধি বাড়লেও তিন যুগের পুরোনো জনবল কাঠামোতেই চলছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেই ১৯৭৪ সালে প্রবর্তিত পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের (আরএসএস) মাধ্যমে সমাজসেবা অধিদপ্তরের জাতি গঠনমূলক কর্মসূচির বীজ বপন হয়। এ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কল্যাণ রাষ্ট্র বিনির্মাণের এক অনন্য ভিত্তি স্থাপিত হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ১৯৯৭-৯৮ সালে বয়স্ক ভাতা প্রবর্তনের মাধ্যমে। পরের অর্থবছরই বিধবা ও স্বামী নিগৃহিতা মহিলা ভাতা প্রবর্তন করেন তিনি। কালের পরিক্রমায় সমাসেবা অধিদপ্তর আজ অর্ধশতাধিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। যেখানে ১৯৮৪ সালেও এ অধিদপ্তর হাতেগোনা দু-তিনটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করত। এদিকে ১৯৮৪ সালেই সমাজসেবা অধিদপ্তরের সবশেষ জনবল কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হয়। তৎকালীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মসূচির ব্যাপ্তি অনুসারে সেই জনবল কাঠামো প্রস্তুত করা হয়। তবে ওই সময়ের জন্য তখনকার জনবল কাঠামো যৌক্তিক থাকলেও আজ এ অধিদপ্তর অর্ধশতাধিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। তাই তিন যুগ পুরোনো জনবল কাঠামো দিয়ে এত কর্মসূচি বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেই পুরোনো আমলের জনবল কাঠামোর অর্ধেক পদই শূন্য রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সুষ্ঠুসেবা দেয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দক্ষ ও যৌক্তিক সংখ্যক জনবল। কিন্তু সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিদ্যমান জনবল কাঠামো দিয়ে সরকারের এতগুলো কর্মসূচি বাস্তবায়ন দিন দিন দুরূহ হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি দেশব্যাপী সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহিতা মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৮৮ লাখ ৫০ হাজার উপকারভোগীর কাছে জিটুপির মাধ্যমে অর্থ দেয়া হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞটিও সেই সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়েই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র-শনিবারসহ দীর্ঘ তিন মাস পরিশ্রম করে এ কর্মযজ্ঞটি সম্পন্ন করেছেন তারা। জানা গেছে, এসব ভাতা ছাড়াও বেদে জনগোষ্ঠী, দলিত ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তি, হাসপাতালের সমাজসেবা কার্যক্রম রোগী কল্যাণ সমিতি, এতিমখানায় ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রদান, নিবন্ধিত সেচ্ছাস্বেবী প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান দেয়া, প্রবেশন, প্রতিবন্ধী জরিপ, তিন প্রকার ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি (পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম, পল্লী মাতৃকেন্দ্র, দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কার্যক্রম), সরকারি শিশু পরিবার, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, ক্যানসার, কিডনি, লিভার, সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগী, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের এককালীন আর্থিক অনুদান, চা শ্রমিকদের খাদ্যসহায়তা, শহর উন্নয়ন কার্যক্রম, ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রম, ছোটমণি নিবাস, সেফ হোম, জাতীয় বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র, সামাজিক প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন, সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা, দৃষ্টি ও বাক শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণসহ ৫০টির বেশি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বীর মুক্তিযুদ্ধা সম্মানী ভাতার কাজটিও সমাজসেবা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করে। উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দফতরের কার্যক্রম ও জনবল পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সমাজসেবা অধিদপ্তর সরাসরি জনগণের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হলেও চাহিদা মোতাবেক তাদের জনবল নেই। যেখানে বিভিন্ন বিভাগ তাদের কর্মসূচি অনুযায়ী জনবল কাঠামো সময়ে সময়ে হালনাগাদ করছে সেখানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। পাশাপাশি অধিদপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তাদের ভাগ্যোন্নয়নের ক্ষেত্রেও যেমন স্কেল আপগ্রেডেশন বা যথাসময়ে প্রমোশনের বিষয়ে অন্যান্য বিভাগের চেয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর অনেক পিছিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজসেবা ক্যাডার পদ সৃজনের অনুশাসন বা নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনার সাত বছরেও তা আলোর মুখ দেখেনি। সরকারের রূপকল্প ২০২১-২০৪১ মোতাবেক ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য নির্মূল করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদফতর অগ্রদূত হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া এসডিজির সরাসরি ৯টি গোল এবং ১৭টি টার্গেট বাস্তবায়ন, জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএসএস), অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে অন্যতম ‘মূল দায়িত্বশীল বিভাগ’ হিসেবে কাজ করবে এই অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কর্মসূচির সিংহভাগ কর্মসূচি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়। সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল অনুযায়ী ২০২৬ সাল নাগাদ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিচালিত নগদ আর্থিক সহায়তা সংক্রান্ত সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওপর ন্যস্ত হবে; ফলে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা হবে প্রায় ৩ কোটি। সময়ের আবর্তনে এই অধিদপ্তরে সময়ে সময়ে শুধু কার্যক্রমই বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু সেইসব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় যে জনবল বৃদ্ধি করা প্রয়োজন সেটি ও কার্যকর হয়নি।


বিজ্ঞাপন