কফি উৎপত্তির খোঁজে!

উপ-সম্পাদকীয়/মতামত

মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী : কফি, কাহওয়া, গাওয়া, কাহভে, কাফে নামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচিত। বিশ্বব্যাপী আজকের কফির বিস্তৃত অবস্থানের রয়েছে মুসলিম ঐতিহ্যের আনকোরা ইতিহাস!


বিজ্ঞাপন

খালিদ নামের এক ইথিওপিয়ান বালক নবম শতাব্দীর দিকের কফির প্রথম সন্ধান করেন। দক্ষিণ ইথিওপিয়ার (Kaffa) “কাফফা” নামক অঞ্চলে বাস এ রাখাল বালকের। মাঠে মাঠে তার উট, ছাগল আর দুম্বা চরিয়ে নিয়ে বেড়াতো । একসময় সেই রাখাল বালক খেয়াল করল তার উট, ছাগল আর দুম্বাগুলো তাদের অঞ্চলের আনাচে কানাচে যত্রতত্র জন্ম নেয়া একধরনের রসালো ফল খেয়ে কেমন যেন বেশি মাত্রায় চঞ্চল হয়ে ওঠে ।

রাখাল বালক খালেদ সেই ফলগুলোকে, কখনও কখনও তার বীচিগুলোকেও সেদ্ধ করে একধরনের পানীয় বানায়, তার পালের অন্যান্য ছাগল দুম্বাকেও খাওয়ায় । অবাক হয়ে লক্ষ্য করে তারাও সেই একই ধরনের চঞ্চল আচরণ শুরু করে! কেমন যেন পরিপুষ্ট, প্রাণবন্ত দেখায় তাদের ।

ব্যাপারটা কী? পরখ করার জন্য নিজেও সেই ফল সেদ্ধ করা পানীয় পান করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের মধ্যেই কেমন যেন একধরনের সতেজ ভাব অনুভব করতে থাকে । সেই শুরু। তার সেই পানীয় বন্ধুবান্ধব, পাড়া-পড়শীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় ।

সেকালে ইথিওপিয়ার সাথে ব্যাপক রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ইয়েমেনের। অচিরেই খালেদের সেই পানীয় ইথিওপিয়ানদের দ্বারাই চলে আসে ইয়েমেনে। এখানে মুসলিম সুফি সাধকরা নতুন এই পানীয়কে লুফে নেন, কারণ এই পানীয় পান করলে তাদের ক্লান্তি যেমন সহজেই দূর হয়, তেমনি রাত জেগে ইবাদত করার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে আলস্য কমে আসে ।

সুফিদের মধ্যে এই পানীয় এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, তাদের নিত্যদিনের অনিবার্য সঙ্গী হয়ে দাড়ায় সেই রাখাল বালকের উদ্ভাবিত নতুন পানীয়টি। এদের মাধ্যমেই ষোড়শ শতাব্দীতে উক্ত পানীয় এসে হাজির হয় মক্কার সুফিদের মধ্যে এবং তা অচিরেই সর্বসাধারণের পানীয় হয়ে দাড়ায়!

তখন মক্কা ছিল ওসমানীয় খেলাফতের আওতায় | সেখান থেকেই তুর্কিদের মাধ্যমে তা চলে আসে তুরস্কে। আর সেখান থেকে তার আবার পাড়ি জমায় প্রথমে গ্রিসের ভেনিস শহরে সেই ১৬৪৫ সালে । তার মাত্র পাঁচ বছর পরে ১৬৫০ সালে Pasqua Rosee নামের একজন টার্কিশ ব্যবসায়ী এই নতুন পানীয়টি নিয়ে আসেন ইংল্যান্ডে । তিনি ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরের Lombard Street-এ ইংল্যান্ডের প্রথম “কফি হাউজ’ খুলে বসেন!

ইথিওপিয়ার সেই Kaffa অঞ্চলের নামানুসারে রাখাল বালক খালেদ তার নব উদ্ভাবিত পানীয়টির নাম রেখেছিলেন ‘কাফফা”! সেই ‘কাফফা’ পরবর্তী কালে ইয়েমেন হয়ে ষষ্ঠদশ শতাব্দীর শুরু দিকে মক্কায় পৌঁছে আরবি নাম ধারন করে ‘কাহওয়া’ । আজও আরবদের কাছে “কাহওয়া” অত্যন্ত জনপ্রিয় পানীয় । এমন কোন দিন নেই, যেদিন একজন আরব দু-চার-দশ কাপ “কাহওয়া’ পান না করে তার দিনটি পার করেন ।

আরবদের কাছ থেকেই ওসামানীয় খেলাফত অর্থাৎ তুর্কিরা নিয়ে গেছে এই “কাহওয়া” নিজেদের দেশে । কিন্তু তুরস্কে পৌঁছে তা নাম ধারন করেছে ‘কাহভে! তুরস্কের সেই “কাহভে” ১৬৪৫ সালে গ্রিস ও ইতালিতে গিয়ে হয়েছে ‘কাফে ৷
আর ১৬৫০ সালে তা ইংল্যান্ডে এসে “কাফে’ থেকে হয়ে যায় আজকের বহুলসমাদৃত পানীয় Coffee “কফি” । আজ কোন ইউরোপিয়ান একটা দিন পার করার চিন্তাও করতে পারেন না অন্তত এক কাপ কফি বিহীন! ইতিহাস না জানার কারণে আমরা এই মুসলমানরা কফিকে ভেবে বসেছি ইউরোপীয় পানীয়!