মানিকগঞ্জে ৫ লাখ টাকার লোভের শিকার শিশু অপহরণ ও হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার বড়বাকা এলাকার বহুল আলোচিত শিশু শ্রেণীর ছাত্র আল-আমিন (০৭) অপহরণ ও হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন, আসামী গ্রেফতার এবং ভিকটিমের ব্যবহৃত বাইসাইকেল উদ্ধার করলো পিবিআই, মানিকগঞ্জ।
হত্যাকান্ডের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী ১) মোঃ হৃদয় হোসেন (২০), পিতা-আব্দুল জলিল, গ্রাম-বেরুন্ডি ২) মোঃ সাদ্দাম হোসেন (১৯), পিতা-মোঃ মিজানুর রহমান এবং আইনের সংঘাতে জড়িত শিশু ৩) মোঃ নাজমুল হোসেন (১৬), পিতা-মোঃ মেঘু মিয়া, উভয় সাং- বড়বাকা, সর্বথানা-সিংগাইর, জেলা-মানিকগঞ্জদেরকে অদ্য ০৩ সেপ্টেম্বর/২১ ভোর অনুমান ০৩.১৫ ঘটিকার সময় সিংগাইর থানাধীন বেরুন্ডি গ্রাম হতে গ্রেফতার করা হয়। চক্রটি শিশুকে হত্যা করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে যদিও তারা ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করতে চেয়েছিল।


বিজ্ঞাপন

গত ২৮/০৮/২০২১ খ্রিঃ সকাল অনুমান ০৮.৩০ টা হতে ০৯.০০ ঘটিকার সময় শিশু পুত্র আল-আমিন (০৭) তার বাড়ির সামনে কাঁচা রাস্তার উপর বাইসাইকেল চালানোর জন্য বের হয়। আনুমানিক ০১ ঘন্টা পার হলেও আল-আমিন বাড়িতে ফিরে না আসায় তার মা খোঁজাখুজি শুরু করে। পরবর্তীতে বাড়ীর আশপাশে ও সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুজি করে আল-আমিনকে না পেয়ে পরের দিন ভিকটিম আল-আমিনের বাবা মোঃ শহিদুল ইসলাম সিংগাইর থানায় গিয়ে ছেলের নিখোঁজ সংক্রান্তে জিডি করেন যার নং-১৩১১, তাং-২৯/০৮/২০২১ খ্রিঃ। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে গত ৩১/০৮/২০২১ খ্রিঃ সকাল অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় পরিবারের সদস্যসহ প্রতিবেশীরা আল-আমিনের সন্ধানে বেরুন্ডি গ্রামের চকে টেমা মিয়ার পরিত্যক্ত ভিটায় (কথিত সাপের ভিটায়) গিয়ে খোঁজাখুজি করাকালীন উক্ত ভিটার মাঝখানে বাঁশঝাড়ের মধ্যে ভিকটিমের পরিহিত গেঞ্জির অংশ বিশেষ, প্যান্ট ও মাছির আনাগোনা দেখতে পায়। অতঃপর উক্ত স্থানটিকে সন্দেহ হওয়ায় বাঁশ পাতা সরিয়ে মাটি খোড়া-খুড়ি অবস্থায় সাদা রংয়ের একটি প্লাষ্টিকের বস্তা পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তীতে উক্ত বস্তা মাটির ভেতর থেকে তুলে কাচি দিয়ে বস্তা কেটে মৃতদেহ বের করলে বাদী শহিদুল ইসলাম (আলামিনের পিতা) ভিকটিম আল-আমিন এর লাশ সনাক্ত করে।
ডিআইজি, পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধায়ন ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই, মানিকগঞ্জ ইউনিট ইনচার্জ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জনাব এম, কে, এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম এর সার্বিক সহযোগিতায় পিবিআই, মানিকগঞ্জ জেলার চৌকস টিম ছায়া তদন্ত শুরু করেন।
ছায়া তদন্তের অংশ হিসেবে পিবিআই মানিকগঞ্জ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন, স্থানীয় লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও শিশু আলামিনের ঘটনার দিনের সকালের চলাফেরা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে তদন্তকার্য অব্যাহত রাখে এবং কতিপয় ব্যাক্তির তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ পূর্বক তাদের গতিবিধি পর্যালোচনাপূর্বক তাদেরকে রাজবাড়ী থেকে সন্ধিগ্ধ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশু আলামিনের ব্যবহৃত বাইসাইকেলের অবস্থান জানালে উক্ত বাইসাইকেলটি উদ্ধার করা হয় এবং হত্যাকান্ডের সহিত আটককৃতদের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদেরকে সিংগাইর থানাধীন বেরুন্ডি গ্রাম হতে ইং ০৩/০৯/২০২১ তারিখ ১৫.৩০ ঘটিকায় গ্রেফতার করা হয়।
আসামীগণ অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের জন্য যে কাউকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করে। তিন জন প্রথমে এলাকার রুপমের ছেলে রোহান ও তোতা মিয়ার ছেলে রহমদের মধ্যে যে কোন একজনকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। কিন্তু রহম এর বয়স বেশী হওয়ায় তাকে অপহরণের চিন্তা বাদ দেয়। পরে রোহানকে অপহরণের ব্যাপারে তারা তিন জন একমত হয়। তাদের মুক্তিপণ আদায়ের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্দিগ্ধ আসামী হৃদয় শিশু
পুত্র আল-আমিনকে বন্যার পানি দেখানোর কথা বলে সাপের ভিটায় (বৃহৎ বাঁশঝাড়) নিয়ে যায়। সেখানে নাজমুল আগেই অবস্থান করে। তারা ০২ জন প্রথমে আল-আমিনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পরে নাজমুলের কাছে থাকা প্লাস্টিকের বস্তার মধ্যে মৃতদেহ ঢুকিয়ে ফেলে। আল-আমিনের পরিহিত গেঞ্জি ও প্যান্ট মুক্তিপণ আদায়ের প্রমাণ হিসেবে খুলে রাখে। অতঃপর লাশের বস্তাটি নিকটবর্তী জায়গায় প্রায় হাঁটু পানিতে ডুবিয়ে রেখে একটি মুরগীর লিটারের (বর্জ্য) বস্তা দিয়ে চাপা দেয়। তখন নাজমুলের ফোন থেকে হৃদয়, সাদ্দামকে ফোন দিয়ে বলে যে, কাজ হয়ে গেছে। ঘটনার পরে আল-আমিনের ব্যবহৃত সাইকেল দিনের বেলায় হৃদয় ও নাজমুল লুকিয়ে রাখে এবং একই দিন দিবাগত রাত্রে হৃদয়দের বাড়ির পশ্চিম পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।
পরে গত ৩০/০৮/২০২১ ইং তারিখ সকাল ০৬.০০ টার সময় হৃদয় কোদাল নিয়ে সাপের ভিটায় গিয়ে পানি থেকে একাই আল-আমিনের লাশটি তুলে পাশেই শুকনো জায়গায় মাটিতে গর্ত করে পুঁতে রাখে। পরিকল্পনামাফিক সাদ্দাম ঘটনার দিন নতুন সীম সংগ্রহ করতে না পারার কারণে আল-আমিনের বাবার সাথে যোগাযোগ করতে পারে না।
আলোচ্য ঘটনায় আজ ০৪/০৯/২১ খ্রিঃ পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতেবক্তব্য রাখেন, এম, কে, এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিবিআই মানিকগঞ্জ।
সন্দিগ্ধ গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে ০৪/০৯/২১ খ্রিঃ তারিখে আসামী ১) মোঃ হৃদয় হোসেন (১৯), পিতা-আব্দুল জলিল, গ্রাম-বেরুন্ডি ২) মোঃ সাদ্দাম হোসেন (১৭), পিতা-মোঃ মিজানুর রহমান এবং আইনের সংঘাতে জড়িত শিশু ৩) মোঃ নাজমুল হোসেন (১৬), পিতা-মোঃ মেঘু মিয়া, উভয় সাং- বড়বাকা, সর্বথানা-সিংগাইর, জেলা-মানিকগঞ্জদেরকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।