নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত ১৬০ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ৭৬ প্রার্থী ভোটে জয়লাভ করেছেন। আরও ৪৩ প্রার্থী জিতেছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন ৩৬ জন। ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে জিতেছেন ১ জন। এছাড়া ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে ৪ ইউপিতে।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ মহল থেকে কড়া বার্তা থাকলেও তা উপেক্ষার হিড়িক পড়েছে চলমান ইউপি নির্বাচনে। নির্বাচনে ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থীদের হারিয়েছেন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা। এতে ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলে বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিভিন্নভাবে সমঝোতার চেষ্টার পরও নির্বাচনে বিদ্রোহী দমানো সম্ভব হয়নি। অনেকেই দলের নির্দেশনা আমলে নেয়নি।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, তৃণমূলের নীচের ধাপের নেতাকর্মীদের বুঝানো অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে দলের কড়া বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তারপরও যারা মানছে না তাদের ব্যাপারে দলের কঠোর অবস্থান বলবৎ থাকবে।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, ইউপি নির্বাচনের সার্বিক দিক নজর রাখছে কেন্দ্র। কিছু স্থানে দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে প্রভাব বিস্তারে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নির্বাচনে দলের একজন কর্মী মারাও গেছেন। বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে নতুন কৌশল নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে দলের হাইকমান্ড। এক্ষেত্রে বিদ্রোহী দমনের পাশাপাশি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার উপর জোর দেয়া হবে বলে জানা যায়।
একটি সূত্র বলছে, বিএনপি ইউপি নির্বাচনে না আসায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হারায়, সেজন্য বিদ্রোহী দমনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত থাকছে দল। তবে নির্বাচন শেষ হলেই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে। বিশেষ করে নির্বাচনে বিদ্রোহী হয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলা এবং কোন্দল তৈরি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যেসব ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা জিতেছেন
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন বিশাখা সাহা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘অটোরিকশা’ প্রতীকে নির্বাচন করলেও তিনি মূলত ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
বিশাখা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগের সদস্য। তার স্বামী সাবেক চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে হেরেছিলেন তিনি। এবারও দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘নৌকা’র বিরুদ্ধে দাঁড়ান।
নির্বাচনে বিজয়ী বিশাখার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়দেব কুমার সাহা। তিনিও আওয়ামী লীগ ঘরানার মানুষ। নির্বাচনে তৃতীয় হয়েছেন আওয়ামী লীগের ‘নৌকার’ প্রার্থী মোহাম্মদ শামছুদ্দীন আল মাসুদ। নির্বাচনে চতুর্থ হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আজিজও ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী।
শুধু জয়নগর ইউনিয়নই নয়, কলারোয়ার ১১টি ইউনিয়নের নির্বাচনের অবস্থা ছিল প্রায় একই রকম। মূলত আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো আওয়ামী লীগই। সফলতায় এগিয়ে বিদ্রোহীরা।
কলারোয়ার ৬টি ইউনিয়নে জয়লাভ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। ফল স্থগিত থাকা আরও একটি ইউনিয়নেও এগিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী। আর চারটি ইউনিয়নে বিজয়ী হন নৌকার প্রার্থীরা।
সাতক্ষীরার তালা ও কলারোয়ার মিলে ২১টি ইউপির ৯টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ ও ১টি ইউপিতে ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচিত হয়েছেন। আর ১১টি ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ৬টি ইউপির মধ্যে পাঁচটি স্বতন্ত্র এবং একটিতে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।