সাজেদ রহমান (যশোর) : ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পর্তুগালের ফাতিমা নামে একটি গ্রামে কুমারী মারীয়া তিনজন কিশোর কিশোরীর কাছে ছয়বার দেখা দেন।

১৯১৭ সালের ১৩ মে থেকে ১৩ অক্টোবর লুসি সান্তোস, জাসিন্তা এবং ফ্রান্সিসকো মার্তোর কাছে নিজেকে ‘‘জপমালার বন্দিতা রাণী’’ হিসাবে উল্লেখ করে তাদের অনুরোধ করেন জগতের ও মানুষের পাপের জন্য প্রতিদিন রোজারি মালা আবৃত্তি করতে।

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে পোপ একাদশ পিউসের সময় ফাতিমায় মা-মারীয়ার দর্শনদানকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে নেয়া হয়। পরবর্তীতে পোপ দ্বাদশ পিউস, পোপ ষষ্ঠ পল, পোপ দ্বিতীয় জন পল এবং পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট ফাতিমার দর্শনদানকে মান্ডলিক স্বীকৃতি দানের পক্ষে মত দেন। মা মারীয়ার এই দর্শনকে স্মৃতিতে ধরে রাখার উদ্দেশ্যে ফাতিমা নগীরর নাম অনুসারে সারা বিশ্বে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সেবামুলক প্রতিষ্ঠান।
যশোর ফাতিমা হাসপাতাল তার একটি। যশোর ফাতিমা হাসপাতালটি গড়ে উঠেছে যশোর সেক্রেড হার্ট মিশনের প্রতিষ্ঠিাতা মারিয়েত্তির কেনা জমির উপরে।
১৮৫৫ সালে তিনি বঙ্গদেশে আসেন। এ সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২৭ বছর। কলকাতার আর্চ-বিশপ প্রপাগান্দার আদেশ অনুসারে বহরমপুর, কৃষ্ণনগর ও যশোর এই তিনটি জেলাকে তিন পুরোহিত ফাদার আলবিনো, ফাদার লুইজি লিমানা ও ফাদার আন্তনীয় মারিয়েত্তিকে প্রচারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেন।
ফাদার আন্তনীয় মারিয়েত্তি ১৮৫৬ সালের জুলাই মাসে যশোরে আসেন। তখন যশোর ছিল অস্বাস্থ্যকর স্থান। তিনি ১৮৫৬ সালের জুলাই মাসে একটি ঘর ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন।
১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে মিঃ এটি স্মীথ নামে যশোরের একজন ইংরেজ নীলকর সাহেবের কাছ থেকে ফাদার মারিয়েত্তি ৩ হাজার টাকায় একটি কুঠি বাড়ি ক্রয় করেন। বর্তমান ফাতিমা হাসপাতালটি এই ফাদার মারিয়েত্তির জমিতেই গড়ে উঠেছে। এরপর বহু বছর গড়িয়ে গেছে।
যশোর চলে যায় কৃষ্ণনগর নগর ধর্মপ্রদেশের অধীনে। ১৯২৬ সাল থেকে দেশবিভাগ(১৯৪৭) সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরত ছিলেন সালেশিয়ান পুরোহিতগণ।
সালেসিয়ান পুরোহিতদের পর পরই এখানে আসেন জেভেরিয়ান পুরোহিতদের আগমন। তারা যশোরে আসেন ১৯৫২ সালে।ওই দলের প্রধান ছিলেন দান্তে বাত্তালিয়েরেন এস-এক্্র।
যিনি ১৯৫৬ সালে খুলনার বিশপ পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। জাভেরিয়ান সম্প্রদায়ের এই প্রথম দলের সদস্য ছিলেন ফাদার আন্তনীয় আলবার্তন, ফাদার মারিও কিওফি, ফাদার ভিত্তোরিনো দাল্লাবাল্লে এবং ফাদার আলবিনো তেসারো।
১৯৫৮ সালে এলেন ব্রাদার লিও স্টক্কো। তিনি চিনে মিশনারী কাজে ছিলেন। সেখান থেকে তিনি বিতাড়িত হয়েছিলেন।
খুলনা ধর্মপ্রদেশের তৎকালীন বিশপ দান্তে বাত্তালিয়েনের এস-এক্্র-এর সহযোগিতায় ও সম্মতিতে রেভাঃ ব্রাদার লিও স্টক্কো এস-এক্্র ১৯৫৮ সালে এই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করেন। প্রথম দিকে ক্ষুদ্র পরিসরে একটি ডিসপেনসারিতে এর কার্যক্রম পরিচালিত হতো। পরে তা বৃহত্তর পরিসরে পরিচালিত হয়।