নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে এক সপ্তাহের মধ্যে ৬ ব্যক্তি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে তা এখনো বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্ধার হয়নি গুম হওয়া ব্যক্তিরাও। অপহৃত ৬ জনই রাজারবাগ দরবার শরীফের অনুসারী। এ বিষয়ে রাজারবাগ দরবার শরীফ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রথমে ২১শে সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা থেকে নারায়নগঞ্জ যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন শাকেরুল কবির (৩৮) ও তার ড্রাইভার শাওন (২৫)। এরপর শাকেরুল কবিরের গুম হওয়ার বিষয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় জিডি (নং-১১৩৪) করেন তার শ্যালক মাহমুদুল হাসান সুমন। এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর জিডির অগ্রগতি জানতে থানায় যান মাহমুদুল হাসান সুমন (৩০) ও তার সহযোগী নুরুল গনি ফারুক (৪৩)। রাত সাড়ে ১১টায় থানা থেকে ফিরে আসার পথে শাহজাহানপুর থানার মাত্র ৩০ গজের মধ্যে ঐ দুইজনকে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাতরা। পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ অপহৃতদের বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে। এরপর শাহজাহানপুর থানাধীন শান্তিবাগ এলাকা থেকে ইহসানুল করিম উজ্জল (৩৫) ও তার সহযোগী জহিরুল ইসলামকে (৩৮) একদল অজ্ঞাত ব্যক্তি কালো গ্লাসের মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যায়, যা সিসিটিভি ফুটেজে দৃশ্যমান হয়।
অপহৃত শাকেরুল কবিরের স্ত্রী মুসলিমা সুমী বলেন, আমার স্বামী ও ভাইকে গুম করার পর বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে আমাকে কান্না ও চিৎকারের আওয়াজ শোনায়। মনে হচ্ছে, কাউকে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হচ্ছে। এমন শব্দ শুনে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। মাহমুদুল হাসান সুমনের বৃদ্ধ বাবা মুহম্মদ মোস্তফা বলেন, জিডিকারীকে যদি থানার ৩০ গজের মধ্যে নিখোঁজ হতে হয়, তবে আমরা কার কাছে নিরাপত্তা চাইবো? গুম হওয়া নুরুল গনি ফারুকের স্ত্রীর ভাই আমিনুল ইসলাম জানান, আমার দুই শিশু ভাগিনার প্রচণ্ড জ্বর, ডেঙ্গুর লক্ষণ। আমার বোন দুই বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াচ্ছে, এর মধ্যে ভগ্নিপতি নেই। কি যে একটা অবস্থা তা বলে বোঝাতে পারবো না। আমার ভগ্নিপতিও উচ্চমাত্রার ডায়বেটিকসের রোগী, জানিনা তিনি ওষুধ খেতে পারছেন কি না। আমিনুল ইসলাম আরো বলেন, কারা তাদের অপহরণ করছে তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আমরা প্রশাসনের কাছেই বিষয়টি জানতে চেয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সদুত্তর পাই নাই। তিনি বলেন, আমি ২ দিন ধরে থানায় দৌড়াদৌড়ি করছি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কারো তেমন গুরুত্ব দেখছি না। ‘এখন না তখন, তখন না এখন’ বলে থানা থেকে আমাদের ঘুড়াচ্ছে। থানায় বিচার চাইতে গিয়ে মানুষ গুম হয়ে গেলো, আর সেটাকে যদি গুরুত্ব সহকারে না নেয়া হয়, তবে দেশের প্রশাসনের কাছে আমরা কিভাবে আস্থা রাখবো? গুম হওয়া ইহসানুল করিম উজ্জলের ভাই শামসুল আলম মাসুদ বলেন, আমার ভাই খুব সহজ সরল মানুষ। সিসিটিভি ফুটেজে আপনারা দেখেছেন, কিভাবে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যারা তুলে নিয়েছে তাদের চেহারাও স্পষ্ট। যে গাড়িতে করে তুলে নিয়েছে তার নম্বর প্লেটও (ঢাকা মেট্রো চ-৫৩-৩৭১৮) দেখা যাচ্ছে। ঘটনার ৩৬ ঘন্টা হয়ে গেলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আমার ভাইকে উদ্ধার করতে না পারায় আমি হতাশ। গুম হওয়া ব্যক্তিদের সুস্থ অবস্থায় দ্রুত ফিরে পেতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে স্বজনরা।
এ বিষয়ে শাহজাহানপুর থানার ওসি মনির হোসেন মোল্লা বলেন, আমরা এই ঘটনার তদন্ত করছি। এখনো পর্যন্ত নিশ্চত কোনো তথ্য আমরা পাইনি। এ বিষয়ে ডিবি পুলিশকে অবগত করা হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছে।
শাহজাহানপুর থানার এস.আই কামরুল বলেন, এ বিষয়ে জিডি হওয়ার পর আমি অপহরন ব্যাক্তিদের নাম্বারে ফোন করে কোন যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
