পদ্মা নদীর চরে হত্যা মামলার মূল আসামী গ্রেফতার

অপরাধ

বিশেষ প্রতিবেদক : দীর্ঘ আড়াই বছর পর পাবনা জেলার সদর থানাধীন চরপিরপুর পদ্মা নদীর চরে ভিকটিম ফিরোজা খাতুন(৪৫)কে আঘাত করে, শ্বাসরোধ ও ঘাড় ভেঙ্গে গুরুতর জখম করে হত্যা করার মূল আসামী মোঃ খোকন খাঁ(৩৩)কে গ্রেফতার করলো পিবিআই, পাবনা।


বিজ্ঞাপন

মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত মূল আসামী মোঃ খোকন খাঁ(৩৩), পিতা-মৃত কামাল খাঁ, সাং-ভাড়ারা খাঁপাড়া, থানা-পাবনা সদর, জেলা-পাবনাকে গত রবিবার ৩ অক্টোবর ভোর অনুমান সাড়ে ৫ টায় গাজীপুর জেলার, কালিয়াকৈর থানার, হরিণহাটি, ফারইষ্ট ফ্যাক্টরী ২নং গেইট মসজিদ রোড, এর সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মামলার বাদী মোঃ আবেদ আলী খান(৫০) এর ছোট বোন ফিরোজা খাতুন(৪৫), স্বামী-মোঃ ইলাই খাঁ, সাং-গোড়াদহ খাঁপাড়া, থানা-পাবনা সদর, জেলা-পাবনা গত ২৮ জুন ২০১৯ তারিখ সকাল অনুমান সাড়ে ৯ টায় পিরপুর চরে বাদাম কুড়ানোর উদ্দেশ্যে ১(এক)টি প্লাস্টিকের বাজার করার ব্যাগ ও দুপুরের খাবার নিয়ে যায়।

প্রতিদিন বাদীর বোন ফিরোজা খাতুন(৪৫) বিকাল অনুমান ৫ টার মধ্যে বাড়ীতে ফিরে কিন্তু গত ২৮ জুন ২০১৯ তারিখ, সন্ধ্যা হয়ে গেলেও চর হতে বাড়ীতে ফিরে যায়নি।

বাদীর বোন ফিরোজা খাতুন(৪৫)কে গত ২৮ জুন, বিকাল অনুমান সাড়ে ৪ টায় পিরপুর পদ্মার চরে বাদাম ক্ষেতে বাদাম কুড়াতে বিভিন্ন লোকজনে দেখে।

গত ২৮ জুন ২০১৯ তারিখ, সন্ধ্যার পরও বাদীর বোন ফিরোজা খাতুন(৪৫) বাড়ীতে ফিরে না যাওয়ায় বাদীসহ তার নিকট আত্মীয় স্বজন মিলে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন এর বাড়ীতে ভিকটিমকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। কিন্তু কোথাও ফিরোজা খাতুন(৪৫)কে খুঁজে পায়নি।

গত ২৯ জুন ২০১৯ তারিখ সকাল অনুমান সাড়ে ১১ টায় বাদী সংবাদ পায় যে, পাবনা জেলার সদর থানাধীন চরপিরপুর পদ্মা নদীর চরে জনৈক দেলোয়ার(৩৫), পিতা-জামলা প্রামানিক, সাং-চরপিরপুর, থানা-পাবনা সদর, জেলা-পাবনা এর জমিতে একটি মহিলার লাশ পড়ে আছে।

উক্ত সংবাদ পেয়ে বাদী মোঃ আবেদ আলী খান(৫০)’সহ তার আত্মীয় স্বজন ঘটনাস্থলে গিলে লাশ সনাক্ত করেন।

বাদী ধারণা করে গত ২৮ জুন ২০১৯ ইং, বিকাল অনুমান ৫ টা হতে ২৯ জুন ২০১৯ ইং, বেলা অনুমান সাড়ে ১১ টার মধ্যে যেকোন সময় ভিকটিম ফিরোজা খাতুন(৪৫)কে হত্যা করে লাশ পাবনা জেলার সদর থানাধীন চরপিরপুর পদ্মা নদীর চরে জনৈক দেলোয়ার (৩৫), পিতা-জামলা প্রামানিক, সাং-চরপিরপুর, থানা-পাবনা সদর, জেলা-পাবনা এর জমিতে ফেলে রেখেছে।

উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ভিকটিম ফিরোজা খাতুন(৪৫) এর ভাই মোঃ আবেদ আলী খান(৫০), পিতা-মৃত পৈলান খান, সাং-আওরাঙ্গাবাদ, থানা-পাবনা সদর, জেলা-পাবনা, বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে পাবনা জেলার সদর থানার মামলা নং-২, তারিখ- ১ জুলাই ২০১৯ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ দন্ড বিধি দায়ের করেন।

মামলাটি প্রথমে এসআই(নিঃ), মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, পাবনা সদর থানা পাবনা তদন্ত করেন।

পরবর্তীতে এসআই(নিঃ) মোঃ মহায়মেনুল ইসলাম, পাবনা সদর থানা পাবনা তদন্ত করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটি তদন্তকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই), পাবনার উপর অর্পন করেন।

পুলিশ পরিদর্শক(নিঃ) মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই), পাবনা মামলাটি তদন্তকালে তার অন্যত্র বদলী হওয়ায় পিবিআই, হেডকোয়ার্টার্স ঢাকা গত ১ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মামলাটির তদন্তভার এসআই(নিরস্ত্র) সোহেল হোসেন এর উপর অর্পন করেন।

ডিআইজি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নিদের্শনায় পিবিআই, পাবনা ইউনিট ইনর্চাজ পুলিশ সুপার মোঃ ফজলে এলাহী এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই(নিরস্ত্র) মোঃ সোহেল হোসেন মামলাটি তদন্ত শুরু করেন।

উক্ত মামলার তদন্তভার গ্রহন করে পিবিআই, পাবনা পুলিশ সুপার মোঃ ফজলে এলাহী এর নির্দেশনা মোতাবেক দীর্ঘদিন ঘটনাস্থল পাবনা জেলার সদর থানাধীন চরপিরপুর পদ্মা নদীর চর, ভাড়ারা খাঁপাড়া গ্রাম, আওরাঙ্গাবাদ গ্রাম, গোড়াদহ খাঁপাড়া গ্রাম ও আশপাশ এলাকায় ছদ্মবেশ ধারণ, বাদাম কুড়িয়ে ফিরে আসা লোকজনের তথ্যসহ তদন্তকারী কর্মকর্তা উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদেরকে সনাক্ত করেন।

মামলার ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামীদেরকে গ্রেফতার করার জন্য বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

মামলা সংক্রান্তে কোন নির্দোষ ব্যক্তি হয়রানী না হয় এবং প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতার এর জন্য পিবিআই, পাবনা পুলিশ সুপার মোঃ ফজলে এলাহী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই(নিরস্ত্র) মোঃ সোহেল হোসেন’সহ অভিযান টিম অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।

অতঃপর আসামী মোঃ খোকন খাঁ(৩৩)কে গত রবিবার ৩ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৫ টায় হরিণহাটি, ফারইষ্ট ফ্যাক্টরী ২নং গেইট মসজিদ রোড, কালিয়াকৈর, গাজীপুর এর সামনে থেকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী মোঃ খোকন খাঁ মামলার ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে এবং অন্যান্য আসামীর নাম প্রকাশ করে বিস্তারিত তথ্যাদি প্রকাশ করে।

এরপর আসামী মোঃ খোকন খাঁ(৩৩)কে গতকাল সোমবার ৪ অক্টোবর আদালতে সোপর্দ করা হলে সে বিজ্ঞ আদালতে মামলার ঘটনার সাথে নিজেকে জড়িয়ে ও অন্যান্য আসামীর নাম প্রকাশ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

সে জানায় যে তারও অন্য আরেক জন আসামির বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা ভিকটিমের হাত-পা ও মাথা ধরে রাখে এবং অন্য একজন আসামী মাথায়ও ঘাড়ে কাঠের বাটাম দিয়ে আঘাত করে। শেষে ঘাড় মটকে ভিকটিমকে হত্যা করা হয়।

মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীকে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।

মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীকে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।