থাকতেন ১০ কোটি টাকার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে
আজকের দেশ রিপোর্ট : ই-কমার্সের নামে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া কিউকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন মিয়ার আয়েশি জীবন যাপন থাকতেন ১০ কোটি টাকা দামের একটি ফ্ল্যাটে যার সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
ধানমন্ডি এলাকায় সাত হাজার স্কয়ার ফিটের ওই ফ্ল্যাটেই স্ত্রীসহ থাকতেন রিপন মিয়া। তবে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, এই ফ্ল্যাটের মালিক তার শ্বশুর।
তার শ্বশুর সিরাজগঞ্জ সদর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা। গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে এই ফ্ল্যাটসহ অন্য কোথাও তিনি বিনিয়োগ করেছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘কিউকমের প্রধান নির্বাহী রিপন দাবি করেছেন, তার আড়াইশ’ কোটি টাকার মতো দেনা রয়েছে।
তিনি পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় চারশ’ কোটি টাকার মতো পাবেন। তার এই বক্তব্য আমরা খতিয়ে দেখছি। তিনি গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে কী করেছিলেন তা জানা এবং গ্রাহকরা কীভাবে টাকা ফেরত পেতে পারেন সে বিষয়ে আমাদের অনুসন্ধান চলছে।’
গত সোমবার (৪ অক্টোবর) সকালে ধানমন্ডি এলাকা থেকে কিউকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন মিয়াকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। ওই দিনই তাকে আদালতে সোপর্দ করে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গ্রেফতারের আগের রাতে (৩ অক্টোবর) রাজধানীর পল্টন থানায় সৌরভ দে নামে এক গ্রাহক তার নিজেরসহ ১৫ জনের তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, জিজ্ঞাসাবাদে রিপন মিয়া দাবি করেছেন, পেমেন্ট গেটওয়ে ফস্টারের কাছে টাকা আটকে না থাকলে তার এই সমস্যা হতো না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রাহক পণ্য হাতে পাওয়ার পর পেমেন্ট গেটওয়ে অর্থ তাদের কাছে স্থানান্তর করে।
কিন্তু প্রতিদিন তাদের যে পরিমাণ পণ্য অর্ডার এবং গ্রাহকের কাছে পৌঁছে, তার বিপরীতে অনেক কম অর্থ তাদের কাছে আসছিল। এভাবে তার মূলধনের একটি বড় অংশ ফস্টারের কাছে আটকে যায়।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রিপনের দাবি অনুযায়ী তারা ফস্টারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন।
ফস্টার তাদের জানিয়েছে, কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা তাদের কাছে রয়েছে। গ্রাহক পণ্য পেয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে না পারায় তারা এই অর্থ স্থানান্তর করতে পারছেন না।
পুলিশ জানায়, সারা দেশে অন্তত এক ডজন ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে পণ্য বিক্রির কথা বলে কয়েক হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই গ্রাহকদের সময় মতো পণ্য সরবরাহ না করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
এই অভিযোগে সম্প্রতি ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, রিংআইডি, নিরাপদ, টুয়েন্টিফোর টিকেটিসহ বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গ্রেফতার করা হয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিকে। এরমধ্যে কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগও তদন্ত করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, কিউকম গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করে কী করেছে তা জানার চেষ্টা চলছে।
তবে প্রাথমিকভাবে ধানমন্ডির ৬ নম্বর সড়কের ৩৭ নম্বর হোল্ডিংয়ে সাউথ ব্রিজ ভবনের দ্বিতীয় তলায় সাত হাজার স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ওই ফ্ল্যাটেই স্ত্রী-পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। ওই ফ্ল্যাটটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। রিপন দাবি করেছেন, ফ্ল্যাটটি তার শ্বশুরের। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়া থেকে পড়াশোনা করে আসা রিপন মিয়া গত বছর ই-কমার্স সাইট কিউকম চালু করেন। অবিশ্বাস্য ছাড়ে পণ্য দেওয়ার অফারের কারণে এক বছরেই প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়ায় ছয় লাখে।
এক বছরেই তারা গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। বর্তমানে গ্রাহকদের তার কাছে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকার মতো পাওনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, ই-কমার্সের নামে যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
গ্রাহকদের দায়ের করা মামলার পাশাপাশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগও তদন্ত করা হবে।
ইতোমধ্যে কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নানাভাবে গ্রাহকের অর্থের বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার ও দেশেই অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করে ফেলেছে।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমরা উত্থাপিত অভিযোগের বিপরীতে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়গুলোও অনুসন্ধান করছি। আইনবর্হিভূত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, প্রতারণা মামলা বা মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকরা কীভাবে টাকা ফেরত পেতে পারে সে বিষয়টি নিয়েও সরকারের জোরালো পদক্ষেপ প্রয়োজন।