নিয়ন্ত্রনের বাইরে ডেঙ্গু

অন্যান্য এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা বরিশাল রাজধানী সারাদেশ স্বাস্থ্য

*রোগীতে সয়লাব! বেড নাই
*মুগদায় ফ্লোরে কাতরাচ্ছে শিশু, নারী-পুরুষ
*বরিশালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা
*সুস্থ হতে যেভাবে খাবেন পেঁপে পাতার রস
*ডেঙ্গুকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে সরকার
*২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৬৮৩ জন
*ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ
*ডেঙ্গু আক্রান্ত ঢাবি ছাত্রের মৃত্যু

মহসীন আহমেদ স্বপন : ক্রমেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মারাত্মক শয্যা সংকটে রাজধানীর হাসপাতালগুলো। সরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার বাইরে মেঝেতে চিকিৎসা দেয়া হলেও, শয্যা সংকটের কারণে রোগী ফেরত যাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে। অনেকটা নিরুপায় হয়ে পড়া চিকিৎসকদের আশঙ্কা, এডিসের বংশ বৃদ্ধি রোধ না করা গেলে পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। অন্যদিকে, কোনো হাসপাতাল রোগী ভর্তিতে অপরাগতা প্রকাশ কিংবা অতিরিক্ত মুনাফার চেষ্টা করলে আইনি ব্যবস্থার হুশিয়ারি স্বাস্থ্য সচিবের।
সেন্ট্রাল হসপিটাল লিমিটেডের উপ-পরিচালক ডা. এ কে এম মোজাহার হোসেন বলেন, ঈদের আগে বাস ট্রেনের টিকিটের জন্য হুরোহুরি করে ঠিক তেমন একটা শয্যার জন্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর অভিভাবকরা অগ্রিম বুকিং দয়ে যাচ্ছে।
একজন চিকিৎসকের এমন বক্তব্য বলে দেয় প্রমাণ করে কতোটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে রাজধানীর ডেঙ্গু পরিস্থিতি। পান্থপথের সেন্ট্রাল হসপিটালের মতোই প্রতিটি হাসপাতালের দৃশ্য এখন এমনই। রোগী ভর্তির দীর্ঘ লাইন। অপেক্ষা ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তবু মিলছে না একটি বেড। ডেঙ্গু শনাক্তের পরও শুরু করা যাচ্ছে না চিকিৎসা সেবা।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চাপে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি হাসপাতালগুলো। নির্ধারিত বেড শেষ হওয়ায় বিশেষ ওয়ার্ড খুলেও চাপ সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে মেঝেতে। তবে সকল সংকটকে যেন হার মানিয়েছে গুরুতর রোগীর আইসিইউ সেবার ক্ষেত্রে। আইসিইউ বেড না থাকায় কোনো কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিরুপায় হয়ে করেছেন দু:খ প্রকাশ।
রোগীর আত্মীয়রা বলেন, অনেক জায়গায় চেষ্টা করেছি কোনো হাসপাতালে জায়গা পাইনি। তারপরেই এখানে এসেছি।
এদিকে উদ্বেগজনক হারে রোগীর সংখ্যা বাড়ায় অসহায় চিকিৎসকরাও।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, রোগীতে সয়লাব! বেড পর্যন্ত খালি নাই, ভয়াবহ অবস্থা। মশা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারেন রোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্যসচিব মো. আসাদুল ইসলাম হুশিয়ারি করে বলেন, কেউ সংকটের সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করলে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, কোন রোগীকে ফেরত দেওয়া যাবে না না বলা যাবে না। বেসরকারি হাসপাতালকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে সাশ্রয়ী খরচে চিকিৎসা সেবা পায়।
এবছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি সংখ্যার ছাড়িয়েছে সাড়ে নয় হাজার। বর্তমানে রাজধানীতে রোগী ভর্তি আছেন ২ হাজার ২৪২জন।
মুগদায় ফ্লোরে কাতরাচ্ছে শিশু, নারী-পুরুষ : রাজধানীতে ভয়ঙ্কর আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। এডিস মশার ছোবলে প্রতিদিন শিশুসহ কয়েকশ নারী-পুরুষ হাসপাতালে ছুটছেন। ডেঙ্গু রোগীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল। ডেঙ্গু রোগীদের চাপ বাড়ায় বেড দিতে পারছে না অধিকাংশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই বাঁচার আশায় হাসপাতালের ফ্লোরে বিছানা পেতে অবস্থান নিচ্ছেন।
শনিবার সরেজমিন মুগদা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির নবম তলায় সারি সারি বিছানায় শুয়ে আছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত শতাধিক নারী-পুরুষ। রোগীর এতটাই চাপ যে, নবম তলার ফ্লোরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন অর্ধশত রোগী।
হাসপাতালের অষ্টম তলায় শিশু বিভাগে গিয়েও একই অবস্থা দেখা যায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কোমলমতি শিশুরা কাতরাচ্ছে। কেউ কেউ জ্বরের প্রকোপে বমিও করছে। বয়স্কদের মতো অনেক শিশুই চিকিৎসা নিতে বেড পায়নি। ফলে তাদের বাবা-মা বাধ্য হয়েই ফ্লোরে বিছানা পেতে আদরের সন্তানকে নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে কোলের শিশুকে নিয়ে মুগদা হাসপাতালের ফ্লোরে অবস্থান নিয়েছেন এক মা। রাইয়ান নামের ওই শিশুর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবুর অনেক জ্বর। শুক্রবার এখানে এনে ভর্তি করেছি। বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না। চিন্তায় দুদিন ধরে একটুও ঘুমাতে পারি না। হাসপাতালে এসে বেড পাইনি। দোয়া করেন, আমার মানিক যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
একই ফ্লোরে শিশু হাফিজকে ভর্তি করছেন মা মারুফা। জ্বরের প্রকোপে আদরের সন্তানের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে তিনিও কাঁদছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, চারদিন ধরে ছেলের জ্বর। কিছুতেই কমছে না। শুক্রবার রাতে মুগদার বাসা থেকে এসে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ডাক্তাররা কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন। এখনো রিপোর্ট পাইনি। তিনি আরও বলেন, সন্তান অসুস্থ হওয়া কী যে কষ্টের তা বলে বোঝানো যাবে না। ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। রাতে ঘুমাতে পারি না, আমার বাবুও ঘুমায় না। জ্বরে কাতরাচ্ছে, এ টুকু মানুষ এত কষ্ট কী করে সহ্য করবে? আল্লাহ যেন কারও সন্তান অসুস্থ না করেন।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের নবম তলার ফ্লোরে দুদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন টেইলারিংয়ের ব্যবসা করা আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, কাজ করার সময় হঠাৎ অসুস্থ বোধকরি। গত বুধবার পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। শুক্রবার থেকে এখানে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। ডেঙ্গুর যে কী জ্বালা আমি বুঝতেছি। দোয়া করি ভাই কারও যেন এমন অবস্থা না হয়।
তিনি বলেন, মান্ডায় পরিবার নিয়ে থাকি। আমার ব্যবসার ওপরই সংসার চলে। ছোট একটা মেয়ে আছে। আমি অসুস্থ হওয়ায় সবাই সমস্যার মধ্যে রয়েছে। ক’দিন ধরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কবে সুস্থ হবো, তারও ঠিক নেই।
একই ফ্লোরে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিচ্ছেন ময়মনসিংহের মো. সুলাইমান হোসেন। তিনি বলেন, আমি পল্টনের একটি মসজিদে ইমামতি করি। হঠাৎ জ্বরে পড়ে গত বুধবার থেকে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি। গায়ে প্রচন্ড ব্যথা। নড়তে পারছি না। কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। দোয়া করেন ভাই, যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারি।
সকাল ১০টার দিকে নবম তলায় দায়িত্ব পালন করা হাসপাতালের এক নারী অ্যাটেনডেন্ট বলেন, আমাদের হিসাবে এখন পর্যন্ত ১১৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নবম তলায় ভর্তি আছে। এছাড়া আরও কিছু রোগী আসছে, তাদের এখনো হিসাব করা হয়নি। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেড়শ’র মতো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। আমরা কাউকে ফিরিয়ে দিচ্ছি না। যারাই এখানে ফ্লোরিং করে থাকছে আমরা সবাইকে চিকিৎসা দিচ্ছি।
হাসপাতালটির অষ্টম তলায় শিশু বিভাগে দায়িত্ব পালন করা আরেক নারী অ্যাটেনন্ডেট বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত পুরনো রোগী (শিশু) আছে ৪৮ জন। শনিবার যে শিশুরা ভর্তি হয়েছে, তাদের তালিকা এখনো করা হয়নি। প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রোগী আসছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশু রোগীদের চাপে আমাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

বরিশালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা : ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ফেনী, বগুড়া ও বরিশালের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বগুড়ায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪০’এ দাঁড়িয়েছে। গত ৩ দিনে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ সকল রোগী ভর্তি হন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়েছেন চিকিৎসক। বরিশালের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। শনিবার নতুন করে আরও ১২ জন রোগী শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
এ নিয়ে গত ১১ দিনে ২৬ জন রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনী সদর হাসপাতালে বেশ কয়েকজন রোগী জ্বর নিয়ে ভর্তি হন। এদের মধ্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ১১ জনের দেহে এডিস জীবাণু পাওয়া গেছে।


বিজ্ঞাপন

সুস্থ হতে যেভাবে খাবেন পেঁপে পাতার রস: ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে মারাও যাচ্ছেন অনেকে। ফলে আমাদের সবার মধ্যেই আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তবে এই রোগকে মোকাবেলা করতে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি সবসময় মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। এছাড়া ঘর থেকে মশা তাড়ানোর জন্য কয়েল, অ্যারোসল বা অন্য যেকোনও পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।
এরপরও যদি কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তাহলে উদ্বিগ্ন না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এসময় স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে পানি, খাওয়ার স্যালাইন, স্যুপ, দুধ, তাজা ফলের রস বেশি বেশি পান করতে হবে।
ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হতে খুবই কার্যকর হতে পারে পেঁপে পাতার রস। এতে আছে কাইমোপ্যাপিন ও প্যাপাইন রয়েছে যা রক্তের প্লেটলেটের সংখ্যা ও রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। ফলে ডেঙ্গুর সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। একাধিক গবেষণায়ও এর প্রমাণ মিলেছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম মেডিকেল এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে এমনটিই বলা হয়।
যেভাবে রস তৈরি করবেন : পেঁপের পাতার রস করতে প্রথমে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে, পরিষ্কার পাটা বা হামান্দিস্তায় থেঁতো করে নিন। এবার রস ছেকে নিয়ে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন।
যেভাবে খাবেন : পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গু রোগীকে প্রতিদিন তিন বেলা তিন কাপ পরিমাণ পান করতে দিন। রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে।

২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৬৮৩ জন : ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। ধারণ করছে ভয়াবহ আকার। রাজধানীসহ সারা দেশেই প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। যা আগের রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে। রোগীর চাপে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ৬৮৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
রাজধানী ঢাকায় শুধুমাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেই গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৬৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৩ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বহির্বিভাগ, নতুন ভবন, জরুরি বিভাগ সব জায়গাতেই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, এ বছর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আসা শুরু থেকে এই পর্যন্ত হাসপাতালে ২৩৩ জন ভর্তির এটি একটি রেকর্ড।
হাসপাতালের নতুন ভবনসহ পুরনো ভবনের শিশু ওয়ার্ডগুলোও এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। তবে চিকিৎসকরা ২৪ ঘণ্টায় সফলভাবে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শুধুমাত্র চলতি জুলাই মাসেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৫১৩ জন রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জুলাই মাসের ২২ তারিখে ৪০৩ জন, ২৩ তারিখে ৪৭৩ জন, ২৪ তারিখে ৫৬০ জন, ২৫ তারিখে ৫৪৭ জন এবং ২৬ তারিখে ৩৯০ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে এই হিসাবের বাইরে রয়েছে আরও প্রচুর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। কেননা শুধু মাত্র সে সকল ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরাই হাসপাতালে ভর্তি হয়, যাদের রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ ভয়ানকভাবে কমে যায়।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ঢাকায় মারা গেছে দুই জন এর মধ্যে একজন নারী চিকিৎসক অন্যজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের এক শিক্ষার্থী। এছাড়াও রাজশাহীতে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আছেন এক পুলিশ সদস্য।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ : দেশে আইনের শাসন না থাকায় ছেলেধরা সন্দেহে প্রকাশ্যে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার দুপুরে, লালমনিরহাটে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে এ কথা বলেন তিনি। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে আইন নেই, বিচার নেই। পুলিশ নির্বিচারে দেশের মানুষকে গুলি করে মারে। আইন শৃঙ্খলার পরে মানুষের আস্থা নেই বলে দেশে ভয়ঙ্কর সব ঘটনা ঘটছে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন শত শত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থেকে শুরু করে ডাক্তার পর্যন্ত মারা গেছে। এ ঘটনায় সরকার কিছুই করতে পারছে না। উল্টো এটাকে গুজব বলছে সরকার।

ডেঙ্গুকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করছে সরকার: স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, দুর্যোগ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় এবং মানবিক সহায়তাসহ যে কোনও প্রতিকূল পরিবেশে দেশের জনগণের নিরাপত্তায় সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। ডেঙ্গু রোগ ও বন্যায় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। এর মধ্যে এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণকে সরকার চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করছে। গতকাল শনিবার কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির ৫২তম বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিমাণ কমিয়ে আনতে ও মশা নিধনে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রাতদিন কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশব্যাপী মশা নিধন সপ্তাহ চলছে। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত মশা নিধনের এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, এডিস মশা এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমাদের জনসচেতনতা প্রয়োজন। ঘরের ছাদ, ফুলের টব এবং বাড়ির আঙিনায় জমে থাকা পরিষ্কার বৃষ্টির পানি থেকে এই এডিস মশা জন্ম নেয়। জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে অ্যাসিড মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে। বাথরুমের কমোডে জমে থাকা পানিতেও এডিস মশা জন্মায়। সে জায়গায় সিটি করপোরেশনের কাজ করার সুযোগ কম, তবে আপনাদের অনেক বেশি। আমরা মনে করি আমাদের জনগণ সচেতন হলে এডিস মশা জন্মাবে না এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিমাণও কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যে পরিমাণ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এবং সার্বিক দিক থেকে আমাদের সমসাময়িক দেশগুলোর তুলনায় সঙ্গতিও কম। এ কারণে এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছি। আমাদের সমসাময়িক দেশগুলোর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা থাকার পরও ফিলিপাইনে ৩০৩ জন মারা গেছে। থাইল্যান্ডের বর্তমান তথ্য অনুসারে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় ২৬ হাজার, সিঙ্গাপুরে ১৩ হাজার এবং ভারতেও প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত। বার্ডের লালমাই অডিটোরিয়ামে দুইদিন ব্যাপী ৫২তম বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বার্ডের মহাপরিচালক ড. এম. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু, জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর, সম্মেলনের আহ্বায়ক ও বার্ডের পরিচালক মিলন কান্তি ভট্টাচার্য ও বার্ডের পরিচালক (প্রশাসন) ড. মো. শফিকুর ইসলামসহ বার্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তারা।

ডেঙ্গু আক্রান্ত ঢাবি ছাত্রের মৃত্যু : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি)এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফিরোজ কবিরের মৃত্যু হয় বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মফিজুর রহমান জানিয়েছেন। ফিরোজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।তার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। ফিরোজের বন্ধু ইকবাল হোসেন বলেন, ফিরোজ ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহ যাবৎ ঢাকা মেডিকেলের আইসিউতে ভর্তি ছিল। গত শুক্রবার সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হয় স্কয়ার হাসপাতালে। সেখানেই রাত সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। গেল মাসের শুরুর দিকে ঢাকায় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়, যা চলতি মাসে ব্যাপক আকার নিয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। ফিরোজকে নিয়ে ডেঙ্গুতে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যদিও সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা আটজন বলা হচ্ছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *