ই-কমার্সে অস্থিরতা

অপরাধ অর্থনীতি

ইভ্যালি পরিচালনায় বোর্ড গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : কেউ কারো দায় নিতে চাচ্ছে না। আমাদের একটাই চাওয়াÍআমাদের টাকা অথবা আমাদের পণ্য, আমাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হোক। কিংবা প্রণয়নকৃত নীতিমালাগুলো ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না, তা তদারকি করা হচ্ছে কি?’ কথাগুলো বলছিলেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে থেকে অর্ডারকৃত পণ্য না পাওয়া দুই যুবক।
কম দামে পণ্য কিনতে গিয়ে যেন কঠিন ফাঁদে পড়েছেন আরাফাত ও আফজাল। দেশে নিবন্ধিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কিনতে মূল্য পরিশোধ করার পর কয়েক মাসেও পাননি কাঙ্ক্ষিত মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য। এমনকি অর্থ ফেরত পাবেন কি-না, সেই অনিশ্চয়তাও নেই ।
আস্থার সংকট যখন চরমে তখনও অনেক ভোক্তা থাকতে চান ই-কমার্সের সঙ্গে। কারণ, প্রতিষ্ঠান বাঁচলে লাভবান হওয়ার সুযোগ বাড়বেÍএই সরল সমীকরণে আস্থা রাখছেন তারা।
তবে এমন ইতিবাচক মনোভাবের ভোক্তা থাকার পরও কেন বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ছে ই-কমার্স প্লাটফর্ম, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থনীতি বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যাÍবর্তমানে এ খাতে বিরাজ করছে এক বন্য প্রতিযোগিতা।
এ অবস্থায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য সহজে লাভজনক বাজার কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করছে দেশের ডিজিটাল মার্কেটের সিংহভাগ দখলে থাকা দারাজ বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানতে হবে, ই-কমার্স নীতিমালা আর ভোক্তাদের হতে হবে দায়িত্বশীল।
এদিকে ১ হাজার ৬০৯টি সদস্য প্রতিষ্ঠানকে নীতিমালা মানতে বাধ্য করাসহ গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে নিবিড়ভাবে কাজ শুরু করেছে এ খাতের অভিভাবক সংগঠন ই-ক্যাব। এরই মধ্যে ৪ প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছ। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: ই-অরেঞ্জ, গ্রিন বাংলা ই-কমার্স, এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড ফুড অ্যান্ড কসমেটিকস ও টুয়েন্টিফোর টিকেট ডটকম। এর পাশাপাশি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে আরও ৯টি প্রতিষ্ঠানকে।
তবে ই-কমার্সে শৃঙ্খলা ফেরাতে শুধু কঠোর হলে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে এ খাতের বিশাল সম্ভাবনা। তাই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সংকট উত্তরণের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেছেন, কাউকে শাস্তি দিয়ে বা জেলে পুড়ে, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এতে ব্যবসা থমকে দাঁড়াবে। আমরা যদি এ খাতের উন্নয়ন চাই, তাহলে তাদের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে তা মেনে চলার সময় দিতে হবে।
এছাড়াও বর্তমানে দ্রুত বর্ধনশীল বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ব্যাংক হিসাব জব্দসহ অধিকতর তদন্ত শুরু করেছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা।

ইভ্যালি পরিচালনায় বোর্ড গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের : আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিষয়ে ওঠা প্রতারণার অভিযোগ ও পরিচালনার নিয়ম পর্যালোচনা করতে চার সদস্যের বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একজন করে সাবেক বিচারপতি, সচিব, চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টের সমন্বয়ে ইভ্যালি পরিচালনার জন্য এ বোর্ড গঠন করা হবে। বুধবার (১৩ অক্টোবর) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেবেন।
মঙ্গলবার আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সব নথি হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১১ অক্টোবর) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চে এসব নথি দাখিল করেন জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রার।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এক আদেশে ১২ অক্টোবরের মধ্যে ইভ্যালির নথিপত্র আদালতে দাখিল করতে রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী নথি দাখিল করা হয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এএম মাছুম ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস, ভোক্ত অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল।
আইনজীবী তাপস কান্তি বল জানান, সব নথি দাখিল করা হয়েছে। যেহেতু এ কোম্পানিটির দুইজন মালিকই জেলে তাই একটি কমিটি গঠনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। যে কমিটিতে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক,অবসরপ্রাপ্ত সচিব, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ও একজন আইনজীবী থাকতে পারে। এ বিষয়ে বুধবার আদেশ দেবেন হাইকোর্ট।
এর আগে এক গ্রাহকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সব ধরনের সম্পদ বিক্রি এবং হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় নথি তলবের আদেশ দেন বলে জানান আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন।
২২ সেপ্টেম্বর আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন জানিয়েছিলেন, আবেদনকারী ইভ্যালি অনলাইন শপিংমলে মে মাসে একটি ইলেকট্রনিকস পণ্যের অর্ডার করেন। অর্ডারের সময় তিনি মোবাইল ফোন ভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবার মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করেছেন। এরপর কোম্পানিটি অনলাইনে তাকে একটি পণ্য কেনার রশিদও দিয়েছেন।
কিন্তু এতদিনেও তারা পণ্যটি বুঝিয়ে দেয়নি। আবেদনকারী যোগাযোগ করার পর তাকে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু পণ্যটি দেয়নি কিংবা টাকাও ফেরত দেয়নি ইভ্যালি। যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি আবেদনকারী। তাই তিনি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। আবেদনে কোম্পানিটির অবসায়ন চাওয়া হয়েছে।
তার আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত আবেদনটি অ্যাডমিট করেন। এছাড়া আদেশে ইভ্যালির যত সম্পদ রয়েছে, সেটা যেন বিক্রি অথবা হস্তান্তর না করা যায়। আদালত একটি নোটিশ ইস্যু করেন, কেন ইভ্যালিকে অবসায়ন করা হবে না।
আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে ইভ্যালি লিমিটেড, রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নগদ, বিকাশ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ই-ক্যাব অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বেসিস, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য সচিবকে।