৭১-এ পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছি কলকাতার দূর্গাপূজার প্রতিমার রূপ

জাতীয়

ইতিহাসের পাতা থেকে নেওয়া


বিজ্ঞাপন

আজকের দেশ ডেস্ক : কলকাতার বাঙালিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর পাশে স্থান দিত। তারা মনে করত দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ও সুভাষ বসুর পর বাঙালির জন্যে আরেক ত্রাণকর্তার আবির্ভাব হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাধ্যমে। কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর ছবিকে পূজা দিত।


বিজ্ঞাপন

৭১-এ কলকাতার দূর্গাপূজার প্রতিমার রূপ পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল।পাড়া মহল্লা অলিগলিতে যে দুর্গা পূজার কাঠামো গড়া হয়েছিল তাতে দুর্গার আসনে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আর কার্তিকের আসনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অসূরের স্থানে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খানের মূর্তি তৈরী করা হয়েছিল।

৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কলকাতা মহানগরীতে দুর্গাপূজা মুজিব-ইন্দিরা বন্দনায় পরিণত হয়।

কলকাতার সব শারদীয় পূজামণ্ডপে দূর্গা বন্দনার ভক্তিমূলক গানের পরিবর্তে মাইকে বেজে ওঠে জয় বাংলার মন্ত্র উচ্চারিত অগ্নিঝরা গান – জয় বাংলা, বাংলার জয়, হবে হবে নিশ্চয়ই, মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি, শোনো একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবুরের কণ্ঠ সুরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি, বিশ্বকবির সোনার বাংলা নজরুলের বাংলাদেশ, ছোটদের বড়দের সকলের আমার এই দেশ সব মানুষের–বাংলাদেশ বন্দনার এসব গানে সারা কলকাতার
আকাশ বাতাস হয়ে উঠেছিল মুখরিত।

শারদীয় সানাইয়ের সুরে ধর্মানুরাগে উদ্দীপ্ত সারা কলকাতার বাঙালি নর-নারী ভেঙে পড়ে মুজিব–ইন্দিরা বন্দনার পূজা মণ্ডপে।

নরনারী লুটিয়ে পড়ে ইন্দিরারূপী অসুরনাশিনী শ্রীদুর্গা এবং কার্তিকরূপী শেখ মুজিবের পদতলে। আর ঘৃণা করতে থাকে বক্ষভেদী দশাননীর ত্রিশূলসহ অসুররূপী পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ইয়াহিয়াকে।

পাদটীকাঃ পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে এদেশের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল দুশো বছরের জন্য।আর পশ্চিমা হায়েনাদের আগ্রাসনে নিস্পেষিত বাঙালি জাতি অনেক ত্যাগের বিনিময়ে চব্বিশ বছর পর ফিরে পেয়েছে তাদের একটি মানচিত্র।
বুক ভরে শ্বাস নেবার এক স্বাধীন ভূমি। অথচ আজ স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও যে ভূমিকে, যে মানচিত্রকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে নিরন্তর কলঙ্কিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে একটি উচ্চাভিলাষী মহল,আসুন-৭১’র মতো সব ভেদাভেদ ভুলে আরও একটিবার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সমূলে উপড়ে ফেলি সেই বিষবৃক্ষ।

(তথ্যসূত্র: একাত্তরের রণাঙ্গন ও অকথিত কিছু কথা–নজরুল ইসলাম)

অনুলিখন ও অতিরিক্ত শব্দচয়ন: -মেসবা খান