নিজস্ব প্রতিবেদক : নওগাঁ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা। তেমনই একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের ধরমপুর গ্রামের মসজিদ। এর গঠন পদ্ধতি ও স্থাপত্য কৌশল ছিল শিল্পসমৃদ্ধ ও অনন্য।
কিন্তু অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে মসজিদটি। ধ্বংসপ্রায় অবকাঠামো ছাড়া এর কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। বর্তমানে এ মসজিদটি এলাকাবাসীর কাছে ‘ভাঙা মসজিদ’ নামে পরিচিত।
ধরমপুর গ্রামে নান্দনিক এ মসজিদটি কত বছর আগে নির্মিত হয়েছিল তার সঠিক তথ্য নেই। প্রাচীন শিলালিপি থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ১৭০০ সালের দিকে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। অনেকেই নকশা দেখে অনুমান করেন, মোগল আমলে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। গ্রামের প্রবীণ মানুষের বিশ্বাস, ঐতিহ্যবাহী কুসুম্বা মসজিদ ও এ মসজিদটি একই সময়ে তৈরি করা হয়েছিল।
অযতœ আর অবহেলায় আশির দশক থেকে ধীরে ধীরে মসজিদটি ধ্বংস হতে শুরু করে। ১৯২০ সালের এক ভূমিকম্পে এর নয়টি গম্বুজ ভেঙে যায়। গম্বুজ ভেঙে উপরের অংশ ফাঁকা হয়ে গেছে। এর দেয়ালে আগাছা গজিয়েছে। দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। নামাজ পড়ার অনুপোযুক্ত হওয়ায় এর পাশেই এলাকাবাসীর উদ্যোগে আরও একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
ধরমপুর পাইকপাড়া-মন্ডলপাড়া হাফিজিয়া মাদরাসার সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী বলেন, ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির জমির পরিমাণ ১৩শতাংশ। ২০বছর আগেও মসজিদটি অনেক সুন্দর ছিল। এখানে শুধু দুই ঈদের নামাজ হতো। শেষ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০০ সালে। বাপ-দাদার মুখ থেকে শুনেছি, ১৯২০সালে ভূমিকম্পে নয়টি গম্বুজসহ মসজিদটির কিছু অংশ ভেঙে যায়। তারপর থেকেই ভাঙা মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে এটি। মসজিদের মূল্যবান বড় বড় পাথর ৩০-৩৫ বছর আগে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় বয়জ্যেষ্ঠ আনিছুর রহমান বলেন, কয়েকবার কর্মকর্তারা এসে মসজিদটি পরিদর্শন করেছিলেন। গত বছর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কিছু লোক এসে গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছিলেন। ছবি তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আর কোনো খোঁজখবর নাই।
স্থানীয় ভাবিচা ইউনিয়ন পরিষদের চার নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার সাদেক আলী বলেন, ১৯৮৩ সালে আমি ইউপি মেম্বার থাকাকালীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে আকবর হোসেন নামে এক কর্মকর্তা নিয়ামতপুরে এসে মসজিদটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি জানিয়েছিলেন, মোগল আমলে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মসজিদটি সংস্কারে সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করি।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম আরজু বলেন, গত বছর সাত সদস্যের একটি টিম ওই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে যত পুরাকৃতি আছে তা সংরক্ষণের জন্য সার্ভে করেছিল। ওই টিমে আমিও ছিলাম। ধরমপুরে ওই স্থাপনাটি সংরক্ষণের জন্য আমরা একটি প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে রেখেছি।
তিনি বলেন, সিনিয়র কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী প্রতিটি পুরাকৃতির কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। সে হিসেবে ধরমপুরের ওই স্থাপনাটি মোঘল আমলের বলে ধারণা করা হচ্ছে।