যেসব জেলা ও উপজেলার নেতারা বিতর্কিত প্রার্থীদের পরিচয় গোপন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডে লিস্ট পাঠিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
-জাহাঙ্গীর কবির নানক, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, আওয়ামী লীগ
নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন যথাক্রমে ১১ ও ২৮ নভেম্বর। এরই মধ্যে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে এই দুই ধাপের মনোনীতদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির মনোনয়নের তালিকায় রাজাকারপুত্র, শিবির নেতা, বিএনপি থেকে আসা অনেককে স্থান দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থান পেয়েছেন খুনি, মাদক ব্যবাসায়ী ও নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তিও। অভিযোগের যেন শেষ নেই!
ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নে ক্ষেত্রে এসব অভিযোগ নিয়ে দফায় দফায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে জানতে চাইলে বরারবই তিনি বলে আসছেন, অভিযুক্ত বা বিতর্কিতদের নাম না পাঠাতে তৃণমূলে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। তারপরও কেউ প্রভাবিত হয়ে বিতর্কিতদের নাম পাঠালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু এরপরও বিতর্কিতদের নাম কেন্দ্রে এসেছে ভুরি ভুরি। আবার সেগুলো অনুমোদনও হয়েছে। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিতর্কিত বা অভিযুক্ত কেউ মনোনয়ন পেলে তার বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ আছে। দপ্তরে অভিযোগ জমা দিলে আমরা খতিয়ে দেখবো। প্রয়োজনে প্রার্থী পরিবর্তন করবো। এরই মধ্যে অনেকগুলো প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যত অভিযোগ আসছে, তার খুব কম সংখ্যকই পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে হাতে গোনা কয়েকজন প্রার্থী। এর মধ্যে পরিবর্তিত প্রার্থীর বিরুদ্ধেও পাওয়া গেছে অভিযোগ।
জানা যায়, নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মাহাবুর ইসলাম মিঠু তিনি তালিকাভুক্ত রাজাকার মৃত জয়েন উদ্দিনের ছেলে। জয়েন উদ্দিন ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন বলে ‘নাটোরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ বইয়ে অধ্যাপক সুজিত কুমার উল্লেখ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণীত শান্তি কমিটির নামের তালিকায়ও তার নাম পাওয়া গেছে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক আসমা আক্তার। তার বড়ভাইও শরীয়তপুর জেলা বিএনপির প্রশিক্ষণ সম্পাদক আ. হক। স্থানীয় এমপির ভাইয়ের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
সোনারগাঁও উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি থেকে আসা নাসির উদ্দিন। তিনি হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামিও।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নে মো. আতহার আলীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তার বাবা মৃত মনোয়ার হোসেন মুন্না ও বড় ভাই মৃত শহর আলী তালিকাভুক্ত রাজাকার দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে প্রার্থী পরিবর্তনের অভিযোগ দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম।
রাজবাড়ির বহরপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির রেজাউল করিম। বহরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হিসেবে তার নামে কাগজ পাওয়া গেছে। এভাবে ভুরি ভুরি অভিযোগ মনোনয়ন প্রার্থী ও মনোনয়ন প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত লংঘন করে অন্যকে মনোনয়ন দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। টিক মার্ক বদলে দেওয়ার কথাও আসছে। রাতে মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে একজনের নামের পাশে টিক মার্ক দেখা গেছে। দিনে এটি পরিবর্তন হয়ে আরেকজনের নাম প্রকাশ হওয়ার খবর শোনা গেছে। আজিজুল পারভেজ নামে একজন সাংবাদিক এরকম একটি কাগজ ফেসবুকে শেয়ার করে লেখেন, ‘প্রার্থী মনোনয়ন বদলে দিলো কে? নৌকার তৃণমূলের মনোনয়ন বদলে দেওয়া নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কিন্তু এই অভিযোগটি গুরুতর। বলা হচ্ছে, দলের সভানেত্রী তৃণমূলের প্রার্থী আব্দুল মুহিতকে ওকে করে ঠিক চিহ্ন দিয়েছেন। কিন্তু পরে সেটা বদলে দিয়ে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচন নিয়ে।’ এই অভিযোগের জবাব কেউ দেবে? প্রশ্ন আজিজুল পারভেজের।
একই অভিযোগ পাওয়া গেছে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়েও। রাতে মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে সেখানকার ইউপি প্রার্থী একজনের পাশে টিক ছিল বলে কাগজে দেখা গেছে, দিনে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বিকল্প প্রার্থীর নাম।
এ নিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদকের সুরে কথা বলেছেন সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকও। তিনি বলেন, যেসব জেলা ও উপজেলার নেতারা বিতর্কিত প্রার্থীদের পরিচয় গোপন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডে লিস্ট পাঠিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’