সচল জাহাজ অচল

বিশেষ প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ৫০০ মেট্রিক টন ওজনের নৌযান বিক্রি হয়েছে ৭৬ লাখ টাকায়। খুচরা বাজারেই যার বাজারমূল্য দুই কোটির ওপরে। সচল দুটি জাহাজকে অচল দেখিয়ে বেশকিছু নৌযান নিলাম প্রক্রিয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটের পুরো কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলার আয়োজন করেছে রেলওয়ের মেরিন বিভাগ।
২০ বছর ধরে বন্ধ বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে রেলওয়ে ফেরি ও যাত্রী পারাপার। দীর্ঘদিনেও নৌরুটটি চালুর কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে মেরামতের অভাবে ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাটে অযতœ অবহেলায় কার্যক্ষমতা হারিয়েছে নৌযানগুলো দাবি সংশ্লিষ্টদের।
তিস্তা মুখ ঘাটের মেরিন পরিদর্শক মাজদার রহমান মোল্লা বলেন, বহু দিন ধরে জাহাজের মেরামত হচ্ছে না। একটা ডুবে গেলে কোটি কোটি টাকা ধ্বংস, সরকারের লস। জাহাজের কার্যক্রম যদি থাকত, তাহলে দেশের উন্নতি হতো।
কয়েক মাস আগে ৭৬ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয় ৫০০ মেট্রিক টন ওজনের নৌযান জিওয়ান। খুচরা বাজারে ৪২ টাকা ধরে যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। তারও আগে বিক্রি হয়েছে ঈশা খাঁ, মীর জুমলাসহ সাতটি জাহাজ তিনটি বার্জ ও একটি কারখানা। এবার জাহাজ বাহাদুরশাহ ও তিতুমীর ছাড়াও ওয়াগন ফেরি, বার্জসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন ওজনের নৌযান নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেলওয়ের মেরিন বিভাগ।
রেলওয়ে তিস্তামুখ ঘাটের মেরিন সুপারিন্টেনডেন্ট রাসেল আলম জানান, ১৫ সাল পর্যন্ত কিছু ওয়াগন ফেরিও আসছে, নাব্যতা সংকটের কারণে; তবে এই রুটটাও বন্ধ। এ কারণেই রেলওয়ে ডিসিশন নিয়েছে বিলুপ্ত করে দেবে। এ সংক্রান্ত সার্কুলারও দিয়েছে ও বিক্রয় প্রক্রিয়াধীন আছে।
অন্যদিকে অচল দেখিয়ে নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করলেও বাহাদুরশাহ ও তিতুমীর জাহাজ দুটি এখনো সচল বলে দাবি রেলওয়ের কর্মচারী ও স্থানীয়দের।
এদিকে গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর তনু বলেন, নিলামে দেখিয়ে পুরাতন যন্ত্রাংশ, পুরাতন যানবাহন, নৌপথের নৌযানগুলো দেখিয়ে সচল যানবাহনগুলো বিক্রি করার পাঁয়তারা করছে। এ ছাড়া একটি মহল চাই এই নৌবন্দরটি বন্ধ করতে।
বাহাদুরশাহ ও তিতুমীর জাহাজ দুটি চালু হয় বলে জানান স্থানীয়রা। বলেন, জাহাজ দুটি স্টার্ট করে নদী ঘুরিয়ে রাখা।
১৯৩৮ সালে ফুলছড়ির তিস্তা মুখ ঘাট থেকে দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত রেলওয়ে ফেরি, যানবাহন ও যাত্রী পারাপার শুরু হয়। এতে অর্থ ও সময় সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থা। ১৯৯০ সালে নাব্য সংকটের কারণে ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাট স্থানান্তর করা হয় বালাসীঘাটে।
বেশ কয়েকটি জাহাজ, ওয়াগন, পল্টুনসহ মূল্যবান এসব যন্ত্রপাতি নিলাম প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ৮৩ বছরের ইতিহাসের ইতি টানতে যাচ্ছে রেলওয়ে বিভাগ।


বিজ্ঞাপন