বিশ্বে বাংলাদেশ আজ এক ‘উন্নয়ন বিস্ময়’: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ আজ এক ‘উন্নয়ন বিস্ময়’।
বুধবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংসদে বিশেষ আলোচনার সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ থেকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চ গণহত্যা, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর জাতির পিতা বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রথমবার জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নকালে, ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ জাতীয় জীবনে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, কারাগারের ভেতরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, সংবিধানকে সামরিক ফরমান দ্বারা ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে করা হয় ভূলুণ্ঠিত।
বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ মে নির্বাসন শেষে আমি আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি হয়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করি। এরপর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, এদেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করি। ফলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়। বিচার করা হয় যুদ্ধাপরাধীদের। ২০২১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে স্বীকৃতি অর্জন করে। ২০০৮ সালের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবতা।
এ সময় আওয়ামী সরকারের কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, গৃহহীন নয় লাখ মানুষকে ঘর দেওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম, নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধসহ মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা অর্জিত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ প্রতিটি সূচকে সাধিত হয়েছে অগ্রগতি।
বিশ্ব অর্থনীতিতে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। করোনা অতিমারির সংকট উত্তরণে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির চালিকাশক্তি সচল রেখেছে। মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্ণফুলী টানেলসহ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ বিশ্বে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।
ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বাংলাদেশের সফলতার জয়যাত্রা বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়ন ও প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে জাতীয় সংসদ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে তারুণ্যদীপ্ত বাংলাদেশ সব চ্যালেঞ্জ উত্তরণ ঘটিয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণ-বৈষম্যহীন, উন্নত-সমৃদ্ধ ও জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে অধিষ্ঠিত হোক এটাই আমাদের প্রত্যয়।


বিজ্ঞাপন