নিজস্ব প্রতিবেদক : তরুণদের জন্য সম্ভাবনার নবদিগন্ত খুলে দিয়েছে আইটি খাত। একাডেমিক শিক্ষাগত যোগ্যতা এখন আর বড় বাধা নয়। এইচএসসি কিংবা ডিগ্রি পাস করেই বিশ্ববাজার দখলে নিয়েছে দেশীয় ফ্রিল্যান্সাররা। স্টুডেন্ট লাইফেই কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন অনেকে।
করোনা মহামারির মধ্যেও চাঙা ছিল রেমিট্যান্স প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। চলতি বছরেও দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেশ ভালো। তবে এর গতি আরও বাড়িয়ে নিতে দেশ থেকেই রেমিট্যান্স যুদ্ধে নেমেছেন লাখ লাখ তরুণ। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে দেশে আনছেন তাদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা। ফলে একদিকে যেমন নিজেরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি বৃদ্ধি করছেন দেশের রেমিট্যান্স আয়। আর সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ফলে এই খাতে এখন ঘটে চলেছে নীরব বিপ্লব।
রাজশাহী সদরের সিপাই পাড়ার ফ্রিল্যান্সার মোসাম্মত আলজা ও নাহিয়া ইসলাম। মহামারির মধ্যে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বাবাকে আর্থিক যোগান দিতে ডিগ্রি ও এইচএসসিতে পড়া অবস্থায় নিজেদের কাঁধেই সংসারের দায়িত্ব তুলে নেন দু’বোন। বর্তমানে তাদের মাসিক আয় অর্ধ লাখের বেশি টাকা।
আলজা বলেন, মেয়েরা অনেকেই বলে আসলেই কি ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা ইনকাম করা যায়? অনেকে নানা কটূক্তি করে। আমার সফলতার গল্প শুনে অনেকে অনুপ্রাণিত হবে। তারা শিখে নিজেরা উদ্যোক্তা হবে।
এ দু’বোনের মতো নারী জাগরণের মডেল হতে পারেন নাটোরের আসমা-উল-হুসনা। তিনি বলেন, আমি বর্তমানে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আমি ফুল টাইম এর পেছেনে দিতে পারি না। তবুও আমার মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় হয়।
বাইরে প্রতিবন্ধকতা, তাই ঘরে বসেই বিশ্ব জয় করছেন নারীরা। ছাত্র অবস্থায় কোটিপতি হতে যাচ্ছেন নাটোরের রাতুল খান। মার্কেটিংয়ের চাকরি ছেড়ে সাইদুল ইসলাম এখন চাকরি দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
তিনি বলেন, আমি আগে মার্কেটিংয়ে জব করতাম। এরপর আমি যখন দেখলাম, আমার এর থেকে বেটার অপশন আছে। তখন থেকে আমি ফ্রিল্যান্সিং করছি।
রাতুল খান বলেন, আমি প্রথমে ফাইফারে অ্যাকাউন্ট খুলে একটা কাজ পাই। ৫০ ডলারে শুরু। এখন আমি প্রতি মাসে ৫০০ থেকে ১০০০ ডলার আয় করে থাকি।
যশোরের হাবিবুর রহমান। শুরুটা ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে হলেও এখন তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। লাখ টাকারও বেশি আয় করেন প্রতি মাসে।
তিনি বলেন, শেখার দুটি পন্থা আছে। একটি হলো ইউটিউব দেখে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে কোনো স্বনামধন্য ট্রেনিং সেন্টার থেকে। যাদের সামর্থ্য নাই, তাদের সরকারের দেওয়া ট্রেনিংগুলোতে ভর্তি হওয়া উচিত।
হাইস্পিড ইন্টারনেটের সঙ্গে হাই-টেক পার্ক ও বিভিন্ন আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তাদের কারণে স্বর্গরাজ্য পরিণত করেছে বাংলাদেশকে। ফলে এখন ঘরে বসেই অথবা স্বাধীনচেতা হয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন অনেকে।
লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভলপমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক মো. হুমায়ন কবির বলেন, বর্তমানে এই ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে আউটসোর্সিং করে আট মিলিয়নের অধিক এবং এটা বাড়ছে। তারা যদি এই ট্রেনিংটা গ্রহণ করে অবারিত মার্কেট থেকে আর্ন করে দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের যে উদ্যোগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া, ডিজিটাল ইকোনমি। আমি মনে করি এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি ক্ষেত্র।
রাজশাহীর আলজা, নাটোরের রাতুল, যশোরের হাবিবের মতো সারাদেশে এমন লাখ লাখ তরুণের অবদানে বিশ্বে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে এখন বাংলাদেশ।