অভয়নগরে গাছির অভাবে বিলিন হতে চলেছে যশোরের যশ খেজুরের রস

সারাদেশ

সুমন হোসেন, অভয়নগর (যশোর) : যশোরের যশ খেজুরের রশ এ কথার আর যতার্থতা মেলে না। এখন খেজুরের রস পাওয়া দুরুহ হয়ে পড়েছে। সারি সারি খেজুর গাছ আছে কিন্তু গাছির অভাবে গাছ আর কাটা হচ্ছে না। হেমন্তকাল আসতে না আসতে গ্রাম-গঞ্জে খেজুর গাছ তোলার ধুম পড়ে যেত। খেজুর গুড়ের জন্য যশোর বিখ্যাত।
শীতের মৌসুম এলেই গ্রাম এলাকায় গুড়ের তৈরী পিঠা পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। পৌষ মাসে হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে গাছি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে। তা থেকে গুড়, পাটালী সহ নানা ধরনের পিঠা-পুলি তৈরী করতো। শীতের সকালে নির্ভেজাল টাটকা খেজুরের রস খাওয়ার মজাটাই আলাদা। কিন্তু বর্তমানে নানা স্থানে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠার কারনে এবং গাছির অভাবে কিছু কিছু খেজুর বাগান আর দেখা গেলেও গাছির অভাবে খেজুর গাছ কাটা হয় না।
নওয়াপাড়ার নসা মোল্যা, রজো মোল্যা, ইশারাত ফকির, জয়নাল, আছির উদ্দিন, মতলেব, হানেফ মোল্যা, মোকলেছ, আমির ফকির সহ অন্য গাছিরাই এলাকায় গাছ কাটতেন। তাদের মধ্যে অনেকেই মারা গেছেন। আর বাকি যারা বেঁচে আছেন তারা আর গাছ কাটেন না।
নওয়াপাড়ার কৃষক পলাশ হোসেন বলেন, আমাদের ৮০টি খেজুর গাছ আছে। কিন্তু গাছ কাটার মানুষ পাচ্ছি না। বিকাল হলেই গাছির গাছ কাটার ব্যস্ততা আর লক্ষ্যে করা যায় না। রাস্তার ধারের গাছ গুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় কত বছর ধরে গাছ গুলো আর কেউ কাটে না। গাছ গুলো গাছির অভাবে জঙ্গলে পরিনত হয়েছে। এই ক্রান্তিলগ্নে যশোরের ঐতিহ্য খেজুরের রস ও গাছিদের বাচিয়ে রাখতে বিভিন্ন এনজিও এর পাশাপাশি সরকারিভাবে পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত।
সরখোলা গ্রামের গাছি আব্দুল সত্তার শেখ (৬০) বলেন, গাছ কেটে সংসার চলে না। কৃষির কাজ করে পরিবার খরচ যোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়। গাছ কাটা একটি শখের পেশা। সরকার যদি গাছিদের অর্থ সহযোগীতা করতো তাহলে কোনো গাছি এই শখের পেশা ছেড়ে চলে যেত না।
চেঙ্গুটিয়ার প্রাক্তন ইউপি সদস্য সাহেব আলী গাজী বলেন, আমাদের কয়েক শত খেজুরের গাছ ছিলো। কালের বিবর্তণে আমাদের এখন গুড় কিনে খেতে হয়। গাছ থাকলেও গাছি মেলে না বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দলে দলে নারী-পুরুষ এসে যেসব এলাকায় এক জায়গায় অনেক খেজুর গাছ পাওয়া যেত, সেখানে তারা টোল ফেলে খেজুরের মল তৈরী করতো। রস থেকে গুড় তৈরীর বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম নানা আকৃতির খুরি পাটালী, প্লেট পাটালী, নারকেল পাটালী সহ আকর্ষনীয়ও সুমিষ্ট পাটালী তৈরী করতো। এছাড়া মাটির তৈরী ঠিলে বা ভাড় ভর্তি নালি গুড়, ঝোলা গুড় ও দানা গুড় তৈরী করে দেশের বিভিন্ন জেলায় তা সরবরাহ করা হতো। এমনকি দেশের বাইরেও গুড়ের পাটালী রপ্তানী করা হতো। গ্রাম এলাকায় গাছিরাও এমন সব ভাড় ভর্তি গুড় ও পাটালী তৈরী করে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতো।


বিজ্ঞাপন